শরিফ আহমাদ:
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানবতার সর্বোচ্চ আদর্শ। তার ব্যক্তিত্বে মিশে ছিল দয়া, সহানুভূতি, প্রজ্ঞা ও দানশীলতার অনন্য সৌন্দর্য। সাহাবিদের সঙ্গে তার সম্পর্ক, পারিবারিক পরামর্শ এবং আর্থিক লেনদেনের নমুনাগুলো ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে একটি গাজওয়ার (যুদ্ধ) উদ্দেশে বের হলাম। আমার উটটি আমাকে নিয়ে ধীরে ধীরে চলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, হে জাবের! আমি বললাম, জি! তিনি বললেন, তোমার ব্যাপার কী? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে ধীরে চলছে এবং পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে আমি পেছনে পড়ে গিয়েছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেমে পড়ে তার (বাঁকামাথা) লাঠি দিয়ে উটকে গুঁতো দিলেন। এরপর বললেন, আরোহণ করো, আমি তখন আরোহণ করলাম। আমি (উটটিকে অতি দ্রুতগামিতার কারণে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অতিক্রম করে যেতে দেখে ঠেকাতে লাগলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বিধবা। তিনি বললেন, তবে কোনো কুমারীকে কেন বিয়ে করলে না, যার সঙ্গে তুমি ক্রীড়া-কৌতুক করতে, সেও তোমার সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুক করত। আমি বললাম, আমার বেশ কয়টি বোন (অবিবাহিতা) রয়েছে। তাই আমি এমন নারীকে বিয়ে করা পছন্দ করলাম, যে তাদের গুছিয়ে রাখবে। তাদের মাথা আঁচড়ে দেবে এবং তাদের দেখাশোনা করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তো (মদিনায়) উপনীত হতে যাচ্ছ। যখন পৌঁছে যাবে তখন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে। পরে তিনি বললেন, তোমার উটটি বেচবে কি? আমি বললাম, জি, হ্যাঁ। তিনি তখন আমার কাছ থেকে এক উকিয়ার (চল্লিশ দিরহাম সমমূল্যের) বিনিময়ে কিনে নিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসময়ে মদিনায় পৌঁছলেন। আমিও সকালে আগমন করে মসজিদে (নববীতে) পৌঁছলাম এবং তাকে মসজিদের দরজায় পেয়ে গেলাম। তিনি বলেন, আমি যখন এলাম তুমি কি তখন এসেছ? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তবে তোমার উটটি রেখে দাও এবং (মসজিদে) প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নাও।
জাবের (রা.) বলেন, আমি প্রবেশ করে নামাজ আদায় করলাম। পরে ফিরে এলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এক উকিয়া ওজন করে দেওয়ার জন্য বেলাল (রা.)-কে হুকুম করলেন। বেলাল (রা.) তখন আমাকে ওজন করে দিলেন এবং ওজনে পাল্লা ঝুঁকিয়ে দিলেন। জাবের (রা.) বলেন, তখন আমি চলে যেতে লাগলাম। আমি কিছু দূর গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাবেরকে আমার কাছে ডেকে আনো। তখন আমাকে ডাকা হলো। আমি (মনে মনে) বললাম, এখন উটটি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন অথচ আমার কাছে ওর চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কিছু ছিল না। তিনি বললেন, তোমার উট তুমি নিয়ে যাও আর তোমার মূল্য তোমারই রইল। (সহিহ মুসলিম ৩৫১০) এই হাদিস থেকে মূল্যবান কিছু শিক্ষা পাওয়া যায়।
মুজিজা প্রকাশ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে গাজওয়ায় অংশগ্রহণের সময় জাবের (রা.) দুর্বল উটের কারণে পিছিয়ে পড়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দয়া ও সহানুভূতির সঙ্গে তার পাশে এগিয়ে এসে খোঁজখবর নেন। হাতের লাঠি দিয়ে উটকে হালকা আঘাত করার পর উটটি সুস্থ হয়ে দ্রুত চলতে শুরু করে। এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও অতিক্রম করতে থাকে। এটি তার একটি মুজিজার (অলৌকিক ক্ষমতা) উদাহরণ।
বিয়ের বিষয়ে পরামর্শ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাবের (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কাকে বিয়ে করেছেন বিধবা না কুমারীকে? অতঃপর তিনি কুমারী বিয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এতে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল ধর্মীয় বিষয়ের নয়, পারিবারিক জীবনের দিকনির্দেশনাও দিতেন এবং সাহাবিদের যুক্তিকে সম্মান করতেন। এটা তার বাস্তবমুখী ও সহনশীল মনোভাবের পরিচয় বহন করে।
উট বিক্রয় ও দানশীলতা : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয় সাহাবি জাবের (রা.)-এর আর্থিক দুরবস্থার কথা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই কৌশলে তিনি তার কাছ থেকে উট কিনে নেন। পরে তাকে মূল্যসহ উটটিও ফিরিয়ে দেন। এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদার ও কৌশলী দানশীলতার একটি প্রমাণ। সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেন অপমানিত না হন সেই কৌশলে দান করা হয়েছে। অথচ আজকাল অনেকেই শুধু অপরকে দেখানোর জন্য দান করে থাকেন।
সফর থেকে ফিরে নামাজ আদায় : দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত শরীর, বিপদের শঙ্কা ও নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদে ঘরে ফেরা মহান আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত। এ জন্যই ইসলামে সফর থেকে এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সফর থেকে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এটি কৃতজ্ঞতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রত্যেকটি মুমিনের দায়িত্ব হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই সুন্দর সুন্নতকে জীবনে বাস্তবায়ন করা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.