ভয়েস প্রতিবেদক, মহেশখালী:
দেশজুড়ে খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও পানির দামে বিক্রি হচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পান। বাজারে খিলি পানের দাম দ্বিগুণ হলেও মোকামগুলোতে এই অঞ্চলের পানের দাম পড়ে গেছে তলানিতে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় পান চাষিরা। তারা বলছেন, সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলে ‘মহেশখালীর মিষ্টি পান’ সহজেই ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেতে পারত, যা বিশ্ববাজারে এ পণ্যের অবস্থান সুসংহত করত।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুতুবদিয়া ছাড়া জেলার বাকি আট উপজেলায়—মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ—মোট ২,৮৫৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১৯ হাজার ২০০ টন। জেলায় তালিকাভুক্ত পান চাষির সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মহেশখালী উপজেলাতেই উৎপাদন সবচেয়ে বেশি, যেখানে বিশেষ মাটি ও আবহাওয়ার কারণে উৎপাদিত পান হয় অতিরিক্ত মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সুজা উদ্দিন জানান, মহেশখালীর মিষ্টি পানের জিআই স্বীকৃতি পেতে প্রয়োজনীয় আবেদন ও প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, “মহেশখালীর পান শুধু অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি এ অঞ্চলের সংস্কৃতির অংশ। চাষিদের স্বার্থে সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণও নিশ্চিত করতে হবে।”
মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, “উপজেলার প্রায় ১,৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে, যাতে জড়িত প্রায় ২০ হাজার পরিবার। চলতি মৌসুমে উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না।” তিনি জানান, উপজেলায় দুই ধরনের বরজ রয়েছে—পাহাড়ি বরজ ও বিল বরজ। পানচাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করছে কৃষি অফিস।
স্থানীয় চাষি সেফায়েত উল্লাহ জানান, “২৮ শতাংশ জমিতে বরজ করেছি। তিন ভাগে ভাগ করে পান বিক্রি করি—ছোট, মাঝারি ও বড়। এ বছর এক বিড়া (১৬০টি পানপাতা) বিক্রি করছি ৪০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। তবে খরচই ওঠছে না।”
ছোট মহেশখালীর ৫০ বছর বয়সী চাষি বদি আলম বলেন, “৩০ বছর ধরে পান চাষ করছি। এটি শুধু পেশা নয়, আমাদের জীবনের অংশ। আজ সেই জীবিকাই অনিশ্চয়তায় পড়েছে।”
চাষিদের দাবি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ মহেশখালীর মিষ্টি পানের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলে দ্রুতই জিআই স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব।
উল্লেখ্য, কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি নির্দিষ্ট একটি পণ্যের গুণমান ও বৈশিষ্ট্যে বিশেষ ভূমিকা রাখলে, তা ‘ভৌগোলিক নির্দেশক (GI)’ পণ্যের স্বীকৃতি পায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে আবেদন ও আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জিআই সনদ প্রাপ্ত পণ্যের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তা ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.