ফয়জুল্লাহ রিয়াদ:
পৃথিবীতে আগমনকারী সব নবী-রাসুল উম্মতের জন্য কল্যাণকামী ছিলেন। উম্মতের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে তারা বিভিন্ন সময় বিশেষ নসিহত ও অসিয়ত করেছেন। বলে দিয়েছেন উম্মতের ভবিষ্যৎ জীবন পরিচালনার পাথেয় ও দিকনির্দেশনা। মানুষ মৃত্যুর আগে যে অসিয়ত করে, তা হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উম্মত দরদি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও ওফাতের পূর্বে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অসিয়ত করে গেছেন। নবীজি (সা.)-এর জীবনী গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে ওফাতের পূর্বের দিনগুলোতে তার বেশ কয়েকটি অসিয়ত পাওয়া যায়। তা উল্লেখ করা হলো।
এক. নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং অধীনদের ব্যাপারে সহনশীল হওয়া। হজরত আলী (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর শেষ কথা ছিল ‘নামাজ, নামাজ এবং নিজের গোলাম ও অধনদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুনানে আবু দাউদ)
দুই. কোরআন ও সুন্নাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা। হজরত মালেক ইবনে আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) (একদিন খুতবা দেওয়ার সময়) বললেন, আমি তোমাদের কাছে দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যতদিন এগুলো মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে, পথভ্রষ্ট হবে না। এক. আল্লাহর কিতাব। দুই. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ।’ (মুয়াত্তা মালেক)
তিন. মুসলমানদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বিদায় হজের ভাষণে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের পারস্পরিক রক্ত, ধন-সম্পদ, ইজ্জত-আব্রু কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য হারাম।’ (সহিহ বুখারি)
চার. আমানত রক্ষা করা। নবীজি (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘খবরদার! তোমাদের কাছে গচ্ছিত আমানত তোমরা মালিকের নিকট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পৌঁছে দেবে।’ (সহিহ বুখারি)
পাঁচ. নারীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। নারীরা মায়া, স্নেহ ও ভালোবাসার আধার। ছোটবেলায় কন্যা হিসেবে পিতার স্নেহভাজন, বোন হিসেবে ভাইয়ের আপনজন, স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সহচর এবং মা হিসেবে সন্তানের শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সহযাত্রী ও অংশীদার। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরের রক্ষক, সন্তানের যত্নশীল মা এবং দায়িত্বশীল গৃহকর্ত্রী হিসেবে নারী অনন্য। তাই নারীর সঙ্গে কোমল ও সম্মানজনক আচরণ করা প্রত্যেক পুরুষের কর্তব্য।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের কাচের সঙ্গে উপমা দিয়েছেন। কাচ যেমন ভঙ্গুর, তেমনি নারীর মনও কোমল। ভালোবাসা ও যত্নেই তারা টিকে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তা ভেঙে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও, বাঁকাই থাকবে। তাই তাদের সদুপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি) হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি) অতএব নারীর প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সম্মান প্রদর্শনই একজন পুরুষের প্রকৃত চরিত্রের পরিচায়ক।
এ ছাড়াও মহানবী (সা.) বেদয়াতি কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা, তাবলিগের কাজ চলমান রাখা, নীতিবান বাদশাহর আনুগত্য করা, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করার মতো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে লিপ্ত না হওয়া, ঝগড়া-বিবাদ, হত্যা, সুদ ও ঘুষের মতো গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার অসিয়ত করেছেন। নবীজি (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণেই দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। এতে আমাদের দুনিয়ার জীবন হবে সুন্দর-সুশৃঙ্খল এবং আখেরাতে নবীজি (সা.)-এর সুপারিশ লাভে ধন্য হবো। মহান আল্লাহ আমাদের নবীজি (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.