মো. আবদুর রহমান:
অজু আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় শরীর পবিত্র করার নিয়তে পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করাকে অজু বলা হয়। অজু নামাজের অপরিহার্য শর্ত। নামাজ ছাড়াও অনেক ইবাদতের জন্য অজু করতে হয়। অজুর ফজিলতও অনেক। অজুতে বিভিন্ন অঙ্গ ধৌত করার সময় পানির সঙ্গে গুনাহগুলো ঝরে যাওয়ার বিষয়ে হাদিসের একাধিক বর্ণনা রয়েছে।
অজুর মধ্যে রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিকতা। অন্য অনেক ইবাদতের মতো অজুরও রয়েছে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দুটি দিক। এর বাহ্যিক দিক হচ্ছে শরীর থেকে যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ও নাপাকি দূর করা। আর অভ্যন্তরীণ দিক হচ্ছে হৃদয়ের কালিমা দূর করা। এ জন্যই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে, তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা ২২২)
অজুর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তার আগে তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে। আর উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে।’ (সুরা মায়েদা ৬)
অজুর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে। এ ছাড়া অজু দেহ ও আত্মাকে পবিত্র করে। রাসুল (সা.) অজুর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে এর অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। অজুর ফজিলত সম্পর্কে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
হজরত ওসমান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, তার শরীর থেকে গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। এমনকি তার নখের নিচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম ২৪৫)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা অজুর সময় মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার দুই চোখের দ্বারা কৃত গুনাহগুলো পানির সঙ্গে কিংবা পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে ঝরে যায়। আর যখন সে দুই হাত ধৌত করে, তখন তার দুই হাত দ্বারা সংঘটিত গুনাহগুলো পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়। এরপর সে যখন তার দুই পা ধৌত করে, তখন তার দুই পা দিয়ে সংগঠিত গুনাহগুলো পানির সঙ্গে কিংবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়। ফলে সে তার সব (সগিরা) গুনাহ হতে পাক-পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম ২৪৪)
হজরত আবদুল্লাহ সুনাবিহী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন মুমিন বান্দা অজুতে কুলি করে, তখন তার মুখ থেকে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। যখন সে নাক পরিষ্কার করে, তখন তার নাক থেকে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। যখন সে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমণ্ডল হতে সব গুনাহ ধুয়ে যায়। এমনকি তার দুই চোখের পাতার নিচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে, তখন তার দুই হাতের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। এমনকি তার দুই হাতের নখগুলোর নিচ থেকেও গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে তার মাথা মাসেহ করে, তখন তার মাথা হতে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। এমনকি তার দুই কান হতেও গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। অবশেষে যখন সে তার দুই পা ধৌত করে, তখন তার দুই পায়ের সব গুনাহ ধুয়ে যায়। এমনকি তার দুই পায়ের নখগুলোর নিচ থেকেও গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। এরপর তার মসজিদের দিকে হেঁটে যাওয়া এবং নামাজ আদায় করা তার জন্য অতিরিক্ত সওয়াবের কারণ হয়। (সুনানে নাসায়ি ১০৩)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মুমিনের অজুর সেসব স্থানগুলো উজ্জ্বল ও সুদর্শন হবে, যে স্থানগুলোতে অজুর পানি পৌঁছে।’ (সহিহ মুসলিম ২৫০)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে তাদের অজুর বিশেষ চিহ্ন দেখে, যা হবে অতীব উজ্জ্বল ও ধবধবে সাদা। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তা করে।’ (সহিহ বুখারি ১৩৬)
উল্লিখিত হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, অজুর কারণে কেয়ামতের দিন মুমিনদের মুখমণ্ডল ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অতীব উজ্জ্বল হবে। সুতরাং অজুর নির্দিষ্ট স্থানগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে ভিজিয়ে উত্তমরূপে অজু করা উচিত।
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে, অতঃপর এই দোয়া পাঠ করবে, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু’, এমন ব্যক্তির জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম ২৩৪)
ওকবা ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলিম উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর স্বীয় অন্তর ও মুখমণ্ডলকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে রুজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম ২৩৪)
সর্বোপরি মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে অজু করার মাধ্যমে এর ফজিলতগুলো অর্জন করে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক ও প্রবন্ধকার
ভয়েস/আআ/সূত্র:দেশরূপান্তর
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.