ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
আদালত অঙ্গনের দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বেঞ্চ ও সেকশনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদানের জন্য তারা অনৈতিক লেনদেনের পথে পা বাড়ান। এসব দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন সময় নানান কৌশল বদল করেছে কোর্ট প্রশাসন। তবুও থেমে থাকেনি দুর্নীতি। কোর্ট প্রশাসনের কৌশল বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনৈতিক লেনদেনের নতুন পথ খুঁজে বের করেন আদালতের এই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদালতে কোনও একটি মামলা শুরু থেকে রায় হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট পরিমাণে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত এসব ফি’র বাইরেও অতিরিক্ত লেনদেন করে থাকেন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ও সেকশনের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। মামলা দায়েরের শুরুতে স্ট্যাম্প দিয়ে কোর্ট ফি এন্ট্রি করতে হয়। তবে কোর্ট নির্ধারণ করা সত্ত্বেও সেই লেনদেনের বাইরেও অতিরিক্ত উৎকোচ দিতে হয়। এরপর মামলার নম্বর ফেলতেও করতে হয় অতিরিক্ত লেনদেন। পরের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে মামলাটি এফিডেভিট কমিশনারের কার্যালয়ে যায়। সেখানেও তদবির করতে হয়। পরবর্তীতে মেনশন করে আদালতে মোশন জমা দেওয়ার পর মামলাটি কার্যতালিকায় আনতে হয়। মামলা কার্যতালিকায় আনতে অনেক কোর্টের বেঞ্চ অফিসারের সঙ্গে করতে হয় বড় অঙ্কের অবৈধ আর্থিক লেনদেন। অভিযোগ আছে, অবৈধ এই লেনদেন না করা হলে মোশন মামলা আদালতের কার্যতালিকায় যোগ্য ক্রমিক নম্বরে না দিয়ে বরং বেঞ্চ অফিসারদের ইচ্ছেমতো সিরিয়াল করা হয়। তারপর আবারও শুনানির দিনে আর্থিক লেনদেন ছাড়া আদালতে ফাইল আসে না বললেই চলে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মামলার শুনানি শেষে আদেশ পাওয়ার পর শুরু হয় লেনদেনের আরেক ধাপ। কোর্টের আদেশ টাইপ করার জন্য বেঞ্চ অফিসারকে দিতে হয় উৎকোচ। তা দিতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রেই আদালতের আদেশ টাইপ হয় না। এরপর আদেশটি জমাদারের মাধ্যমে বিচারপতির কাছে গেলে বিচারপতি তাতে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর শেষে আদেশটি বেঞ্চ অফিসারের কাছে আসে। এমনকি কোর্টের পিয়ন সেই আদেশ বিচারপতির কাছ থেকে নিয়ে আসার জন্যও বকশিশ দাবি করে। বিচারপ্রার্থী বকশিশ না দিলে ফাইল আসতে অযাচিত বিলম্ব করা হয়। সবশেষে আদেশটি ডেসপাস সেকশনে আসে। কিন্তু সেখানে উৎকোচ দিলেই তবে মামলার আদেশের কপি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। নয়তো আদেশটি পড়ে থাকে মাসের পর মাস। আর এভাবেই আদালতের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে মামলার ফাইল স্থানান্তর করতে বিচারপ্রার্থীকে তদবিরের নামের অনৈতিক লেনদেনে জড়াতে বাধ্য হতে হয়।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবীর অভিযোগ, অনৈতিক লেনদেনে না জড়ালে আদালতের আদেশ পড়ে থাকে মাসের পর পর। এর ফলে যদি কোনও মামলায় আসামির জামিনের আদেশ হওয়ার পরও তদবিরের অভাবে মামলার নথি সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছায় না। তাই জামিনের আদেশের পরও তদবিরের অভাবে বছরের পর বছর মামলার ফাইল আদালতেই পড়ে থাকে, জামিনের আদেশটি আর সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয় না। এতে করে আদালত আসামিকে জামিন বা খালাসের আদেশ দিলেও তদবিরের অভাবে বিচারপ্রার্থীকে দিনের পর দিন কারাগারেই থাকতে হয়, যা চরমভাবে সংবিধান ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
আইনজীবীরা আরও জানান, আদালত অঙ্গনে এসব লেনদেন বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সেকশনে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে। কিন্তু লেনদেনে জড়িতরা সিসি ক্যামেরা এড়িয়ে মোবাইলে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে বা ওয়াশরুমে গিয়ে উৎকোচ নিয়ে থাকেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সুপ্রিম কোর্টের কোনও বেঞ্চ অফিসার। কিন্তু একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সেকশন কর্মকর্তা পাল্টা অভিযোগ তুলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মামলা এফিডেভিট কিংবা আদেশ পাওয়া নিয়ে আইনজীবীরা তাদের ক্লার্কদের মাধ্যমে এ ধরনের লেনদেনের প্রলোভন দেখান। সেকশনের অন্যান্য কাজ ও ফাইলের ভিড়ে নিজের কাজটি আগে করিয়ে নিতেই তারা এমনটা করেন। সেক্ষেত্রে অর্থের লোভে পড়ে অনেককে কাজটি আগে করে দিতে হয়।
আদালতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদারকি চলমান রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রশাসনের সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে গত ১৬ আগস্ট এফিডেভিট সেকশনে ঝটিকা অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখানে প্রাথমিকভাবে ৪৩ জন আইনজীবীর ক্লার্ক ও বিচারপ্রার্থীকে আটক করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। সেকশন পরিদর্শন কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী একটি লিখিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করবেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘একটা সিস্টেমিক প্রবলেম আছে। যেটাকে আমাদের দূর করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি—১৯৭৫ সালের পরে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আদালতের এসব দুর্নীতি দানা বাঁধে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় হাইকোর্টের বেঞ্চ বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে দুর্নীতিকে তখন স্পন্সর করা হয়েছিল। সে কারণে এসব দুর্নীতি আজ এতবড় দানা বেঁধেছে। সেগুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে। এই দুর্নীতি দূর করতে পারলে মামলার জটও কমে আসবে।’ সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.