ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা। এর পর থেকেই বাংলাদেশের নেতৃত্বে জাতিসংঘসহ বিশ্বের অন্যান্য সহযোগী সংস্থা নির্যাতিত বিশাল এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করে আসছে। এজন্য প্রতি বছর তৈরি করা হয় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি)। শুরুর দিকে ভালো অনুদান এলেও সংকট যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাড়া প্রদানে ততই আগ্রহ হারাচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যে অর্থায়নের চাহিদা প্রতি বছর দেয়া হচ্ছে, তার বেশির ভাগই পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চাহিদার ৪৫ শতাংশ অর্থ জোগাড় করতে পেরেছে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য তৈরি ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংকট মোকাবেলায় শুরুতে ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চাহিদা ছিল। তবে জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) তথ্য অনুযায়ী, এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ কোটি ডলারে। এর মধ্যে মাত্র ৪৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে বছরের প্রথম আট মাসে। প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী চার মাসে আরো প্রায় ৫৮ কোটি ডলারের চাহিদা রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদার ৬৭ শতাংশ অর্থ জোগাড় করতে পেরেছিল জাতিসংঘ। আর ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ডলার চাহিদার মধ্যে সাড়ে ৬৫ কোটি ডলার পাওয়া গিয়েছিল, যা সেই বছরের চাহিদার ৬৯ শতাংশ। চাহিদার তুলনায় জোগান এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০১৭ সালে, ৭৩ শতাংশ। অনুদানের এ অর্থ ৬১টি জাতীয় এনজিও, ৪৮টি আন্তর্জাতিক এনজিও ও আটটি জাতিসংঘের সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যয় করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি মানবিক সহযোগিতা এসেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এটা বোঝা খুবই জরুরি যে মানবিক সহায়তা শতভাগ পাওয়ার ঘটনা বিরল। দাতারা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এখনো সক্রিয়। তবে কভিড-১৯-এর কারণে অর্থায়নে কিছুটা চাপ পড়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রবেশের পর থেকে প্রতি বছরই জেআরপি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তাদের মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য অর্থায়নের যে প্রাক্কলন করা হচ্ছে, তা জোগাড় করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কারণ চাহিদা অনুযায়ী অর্থের জোগান কোনোবারই আসেনি। যদিও এবার কভিড-১৯ এবং বর্ষার কারণে অতিরিক্ত বাজেট লাগছে।
অনুদানের অনেক অর্থ অযাচিতভাবে খরচ হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থায়ন যেহেতু মানবিক সহায়তার জন্য নেয়া হচ্ছে, তাই সিংহভাগ অর্থ মানবিক সহায়তায় খরচ হওয়া জরুরি। রোহিঙ্গা সংকটটি একা বাংলাদেশের নয়। তাই এর মোকাবেলা একা বাংলাদেশ করবে না। সব দেশকে সঙ্গে নিয়ে এর একটি টেকসই সমাধানে কূটনৈতিক তত্পরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ।
জেআরপি-২০২০ থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী মিলে উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য ১২টি খাতে ভাগ করে অর্থায়নের প্রাক্কলন করেছে জাতিসংঘ। আগের জেআরপিগুলোর মতো এবারো খাদ্যনিরাপত্তায় চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের ৪ লাখ ৪৪ হাজার স্থানীয় ও ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে খাদ্যনিরাপত্তার আওতায় আনতে প্রয়োজন পড়বে ২৫ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এর পরই ডব্লিউএএসএইচ (ওয়াশ) প্রকল্পে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন পড়বে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। আশ্রয়কেন্দ্র খাতে চাহিদা ধরা হয়েছে ১১ কোটি ১২ লাখ ডলার। এছাড়া সাইট ব্যবস্থাপনার জন্য ৯ কোটি ৫৩ লাখ এবং সুরক্ষায় চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন পড়বে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এছাড়া শিক্ষার জন্য ৬ কোটি ৯০ লাখ, পুষ্টির জন্য ৩ কোটি ৯৯ লাখ, কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ১ কোটি, সমন্বয়ের জন্য ৩৬ লাখ, সরবরাহের জন্য ১৪ লাখ এবং জরুরি প্রয়োজনে ২৫ লাখ ডলারের চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
তিন বছর আগে ২৫ আগস্ট ২০১৭-এর পর থেকে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে এসেছে। এ বিশালসংখ্যক শরণার্থীকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় দুই হাজার একর জমির ওপর থাকার জায়গা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। এতে সেখানকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও পানি সরবরাহ, পরিবেশ, বিশেষ করে বনসম্পদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র:বণিকবার্তা।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.