আবদুল আজিজ:
করোনায় দীর্ঘ ৫ মাস পর নানা শর্তে কক্সবাজারের পর্যটন সীমিত পরিসরে উম্মুক্ত হলেও এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। শুক্রবার-শনিবার সরকারি ছুটি ছাড়া তেমন কোন পর্যটক ভ্রমনে আসছে না পর্যটশরা। একদিকে করোনা, অন্যদিকে অফ সিজনে বেকাদায় পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে করোনা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হলে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে আশার আলো দেখছেন তারা।
বিশ্ব ব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ই মার্চ থেকে সমদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন, শহরকে রেড জোন ঘোষণা করে সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৪ মাস পর গত ১লা জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করে কক্সবাজার শহরের দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও ১৬ই আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল পর্যটন কেন্দ্রগুলো। তবে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় গত ১৭ই আগস্ট সোমবার থেকে পর্যটকদের জন্য সীমিত পরিসরে দর্শনীয় স্থানসমূহ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, গত ১৬ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ১৩টি শর্তে পর্যটন শিল্প উম্মুত করার ঘোষনা দেয়া হয়। এরপর থেকে শহরের হোটেল-মোটেলগুলো স্বাস্থ্যবিধি নামা হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল জোরদার রয়েছে। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে জরিমানা, এমনকি হোটেল বা পর্যটন স্পট বন্ধ করে দেয়া হবে।
কক্সবাজার হোটেল মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা মানুষগুলোর কাছে অর্থকরি নেই। এ কারণে পর্যটক সংখ্যা এখনো অপ্রতুল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এই পর্যন্ত করোনার কারণে প্রশাসনের নানা শর্ত, অতিবৃষ্টি সর্বপুরি অফ সিজনের কারণে বিদেশী পর্যটক তো দূরের কথা দেশীয় পর্যটকরা তেমন আসছে না।’
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘কক্সবাজার পর্যটন শিল্প এখনও স্বাভাবিক হয়নি। একদিকে করোনার পরিস্থিতি, অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে পর্যটন পরিস্থিতি এখনও অস্বাভাবিক। আমরা আশা করছি করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে আশার আলো দেখছি আমরা। তবে এখন যেসব পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমনে আসছে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল মোটেলে অবস্থানের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স অনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কলিম উল্লাহ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন খুলে দিয়েছেন। তবে এখন পর্যটনের অফ সিজন। কিন্তু অফ সিজন হলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিছু দেশীয় পর্যটক আসতে শুরু করেছে। আশা করছি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো: জিল্লুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘পর্যটন খুলে দেয়ার পর থেকে কক্সবাজারে কিছুটা দেশীয় পর্যটকদের আনাগোনা শুরু করেছে। এসব পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমন করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। একই সাথে অতীতের মতো এসব পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজম্যান কমিটির সভাপতি মো: কামাল হোসেন কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ১৩টি শর্তে কক্সবাজার পর্যটন খুলে দেয়া হয়েছে। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা, এমনকি হোটেল বা পর্যটন স্পট বন্ধ করে দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে গত ৫ মাস ধরে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, প্রায় ৬শত রেষ্টুরেন্ট, বার্মিজ মার্কেটসহ পর্যটন নির্ভর পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কর্মহীন হয়ে পড়েছে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। করোনা ভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ ৫ মাস কক্সবাজারের পর্যটন বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.