সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

যেসব বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন অপরিহার্য

শায়খ আহমাদ বিন তালেব বিন হামিদ:
যে ব্যক্তি যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করে, তার প্রতি তিনি সাহায্যের হাত প্রসারিত করেন। যেমনটি সুরা ফাতেহায় উল্লিখিত এই দোয়ায় বলা হয়েছে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার নিকটই সাহায্য কামনা করি।’ ফলে আল্লাহ তাকে সহযোগিতা করেন সম্পদ, জ্ঞান ও দ্বীনের সুরক্ষা দানের মাধ্যমে। বস্তুত অন্তরের চেয়ে উত্তম কিছু আল্লাহ বান্দার মাঝে গচ্ছিত রাখেননি এবং ইমানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো বস্তু তিনি সংরক্ষণ করেন না। কেননা অন্তরই রাব্বুল আলামিনের দৃষ্টি দেওয়ার পাত্র, কাজেই সেই অন্তরই অধিক উত্তম যা অধিক কল্যাণ ধারণ করে।

মহান আল্লাহ অন্তরের ওপর আকিদাগত (বিশ্বাসগত) কিছু আমল ফরজ করেছেন। অনুরূপভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর বাহ্যিক কিছু ইবাদত আবশ্যক করেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন বিষয় হলো এই মর্মে অন্তরে বিশ্বাস ও মুখে স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহই একক উপাস্য, তিনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তার কোনো সাদৃশ্য বা সমকক্ষ নেই, তার পিতা বা স্ত্রী নেই, তার কোনো অংশীদার বা সন্তানাদি নেই।

তার সূচনার কোনো সীমা নেই এবং শেষের কোনো সমাপ্তি নেই। বর্ণনাকারীরা তার গুণাগুণের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে অক্ষম এবং চিন্তাশীলরা তার সম্পর্কে আয়ত্ত করতেও অপারগ। তিনি সব বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা পরিব্যপ্ত করে আছেন। সুন্দর নাম ও উন্নত গুণাবলি তারই। তিনি স্বীয় কালাম দ্বারা হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলে তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। কোরআন মাজিদ আল্লাহর সত্যবাণী, যা তিনি নাজিল করেছেন এবং যাবতীয় সংবাদের সত্যায়নে ও বিধিবিধানের ন্যায়সঙ্গতা দিয়ে তিনি এটাকে পরিপূর্ণ করেছেন।

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রবৃত্তি তাদের যে কুমন্ত্রণা দেয় তাও জানেন। তিনি বান্দার ধমনি হতেও অধিক নিকটে। কোনো কিছু ঘটার আগে থেকেই তিনি সবকিছু জানেন, ভালো-মন্দ ও মিষ্টতা-তিক্ততা সবই নির্ধারিত তাকদির অনুপাতে হয়। তিনি যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন, অতঃপর স্বীয় ইনসাফে অপদস্ত করেন। যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন, অতঃপর স্বীয় অনুগ্রহে তওফিক প্রদান করেন। তার ফয়সালা ও পূর্ব জ্ঞানের বাইরে বান্দার কোনো কথা বা কাজ প্রকাশ পায় না। ফলে তার ইলম ও তাকদির অনুপাতে প্রত্যেকের জন্যই সহজ করা হয়েছে, সে হয় সৌভাগ্যবান হবে নতুবা দুর্ভাগ্যবান।

মহান আল্লাহ বান্দাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করেছেন, তাদের ওপর হুজ্জত (দলিল-প্রমাণ) কায়েমের জন্য। ফলে তারা জানতে পেরেছে, কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং নিশ্চয় আল্লাহ কবরস্থ সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন; যেভাবে তিনি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলেন সেভাবে তাদের পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আল্লাহতায়ালা মুমিনদের নেকি বহুগুণ বৃদ্ধি করেন, তাদের কবিরা গোনাহগুলো তওবার মাধ্যমে ক্ষমা করেন, আর কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার কারণে তাদের সগিরা গোনাহগুলো মাফ করে দেন। যারা কবিরা গোনাহ থেকে তওবা করে না, তাদের পরিণতি স্বীয় ইচ্ছাধীন রাখেন। যাকে তিনি জাহান্নামের শাস্তি দেন, তাকে তার ইমানের কারণে তা থেকে বের করেন, অতঃপর জান্নাতে প্রবেশ করান।

তিনি জান্নাত তৈরি করে এটাকে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য চিরস্থায়ী আবাস হিসেবে প্রস্তুত করেছেন। এখানে তাদের তিনি স্বীয় চেহারা দর্শনের সুযোগ দিয়ে সম্মানিত করবেন। তিনি জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন, এটাকে তাদের জন্য চিরস্থায়ী আবাসরূপে প্রস্তুত করেছেন যারা তার প্রতি কুফুরি (অবাধ্যতা) করে এবং তার আয়াত, কিতাব ও রাসুলদের অবিশ্বাস করে। তাদের তিনি স্বীয় দিদার লাভ করা থেকে বঞ্চিত করবেন।

কেয়ামতের দিন সব জাতিকে উপস্থাপন, তাদের হিসাব গ্রহণ এবং তাদের শাস্তি বা প্রতিদান দেওয়ার জন্য আল্লাহ উপস্থিত হবেন। তখন ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, বান্দাদের আমল মাপার জন্য মিজান স্থাপন ও তাদের আমলনামা হাজির করা হবে। যাকে তার আমলনামা ডান হাতে প্রদান করা হবে, তার হিসাব সহজ হবে, পক্ষান্তরে যাকে আমলনামা পেছনের দিক থেকে দেওয়া হবে, সে জাহান্নামে ভস্মীভূত হবে। পুলসিরাত সত্য, বান্দা স্বীয় আমল অনুপাতে তা অতিক্রম করবে। কেউ নাজাত পাবে, আর একদল তাদের কৃতকর্মের দরুণ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

কেয়ামতের ময়দানে মুমিনদের প্রতি আল্লাহর অন্যতম অনুগ্রহ হলো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাউজে কাউসার। সেখানে তার উম্মত উপস্থিত হবে, যারা হাউজে কাউসার থেকে পান করবে তারা আর পিপাসার্ত হবে না। তবে যারা ইমানকে কুফুরিতে আর সুন্নতকে বিদআতে রূপান্তর করেছে, তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

ইমানদারদের জন্য রয়েছে আল্লাহর নিকট নাজাত, যারা মুখে স্বীকৃতি দিয়েছে, অন্তরে সততার সঙ্গে গ্রহণ করেছে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা আমল করেছে। কেননা মৌখিক স্বীকৃতি ছাড়া ইমান নেই, আমল ছাড়া মৌখিক স্বীকৃতির মূল্য নেই, বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া মৌখিক স্বীকৃতি ও আমল যথার্থ নয়, আর সুন্নতের অনুকরণ ছাড়া এসব মৌখিক স্বীকৃতি, আমল ও বিশুদ্ধ নিয়তের গ্রহণযোগ্যতা নেই।

কোনো মুসলিমকে পাপের কারণে কাফের বলা যাবে না। তবে ইমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিশ্বাস, কথা বা কাজ সংঘটিত হলে তা ভিন্ন। শহীদগণ রবের নিকট জীবিত, তাদের রিজিক প্রদান করা হয়। সৌভাগ্যবানদের রূহ অমর ও সুখী। পক্ষান্তরে দুর্ভাগাদের রুহ আজাবপ্রাপ্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত।

মুমিনদের কবরে পরীক্ষা করা হবে তাদের রব; দ্বীন ও রাসুল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। যারা ইমান এনেছে, আল্লাহ তাদের আখেরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন। যারা জালেম আল্লাহ তাদের বিভ্রান্তিতে রাখবেন।

সর্বোত্তম যুগ হচ্ছে তাদের যুগ যারা রাসুল (সা.)-কে দেখেছেন ও তার প্রতি ইমান এনেছেন (সাহাবিদের যুগ)। তারপর তাদের পরের (তাবেয়িনদের) যুগ, তারপর তৎপরবর্তী (তাবে তাবেয়িনদের) যুগ। সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হেদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাগণ হজরত আবু বকর (রা.), তারপর হজরত উমর (রা.), তারপর হজরত উসমান (রা.), তারপর হজরত আলী (রা.)।

নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের কথা তাদের সুনামের সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে। তাদের মাঝে যেসব বিষয় ঘটেছে সে বিষয়ে নীরবতা পালন করতে হবে, কেননা তারা মানুষের মধ্যে অধিক হকদার যে, তাদের পক্ষে যৌক্তিকতা খুঁজতে হবে এবং তাদের ব্যাপারে অধিক ভালো ধারণা পোষণ করতে হবে।

আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন সব বিষয়ে আলেম-উলামা, মুসলিম নেতৃবৃন্দের আনুগত্য, পূর্ববর্তীদের (সালফে সালেহিন) পদাঙ্ক অনুসরণ, তাদের জন্য ইস্তেগফার, দ্বীনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া পরিত্যাগ এবং বিদআতিদের কর্মকা- প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যকীয় বিষয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আল্লাহর নৈকট্যদানকারী জ্ঞান হলো- আল্লাহর দ্বীন ও শরিয়ত সম্পর্কে জ্ঞান। ইলম অর্জন করা শ্রেষ্ঠ আমল। জ্ঞানীগুণীদের মধ্যে তারাই আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী ও প্রিয় যারা তাকে অধিক ভয় করে এবং আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা লাভের অধিক আশাবাদী। বস্তুত জ্ঞান মানুষকে কল্যাণের দিকে পথনির্দেশ করে ও পরিচালনা করে।

মহান আল্লাহর কিতাব কোরআন মাজিদ ও নবির সুন্নতের আশ্রয় নেওয়া, মুমিনদের পথ অনুসরণ এবং শ্রেষ্ঠ এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ যুগের মানুষদের অনুকরণ করায় রয়েছে সুরক্ষা ও কল্যাণ। কেননা সালফে সালেহিনগণ যেসব বিষয় ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত উদঘাটন করেছেন তারা সেসব বিষয়ে আদর্শ। তারা যেসব শাখাগত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন সেসব বিষয়ে তাদের দলত্যাগ করা যাবে না। এর ওপরই ছিল চার ইমামের উসুল ও ফুরু (মৌলিক ও শাখাগত) নীতি। আল্লাহতায়ালা হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ও ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর ওপর অনুগ্রহ করুন ও সন্তুষ্ট হোন। আমাদেরও তার দয়া, ক্ষমা, অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভে তাদের সঙ্গে শরিক করুন।

১৪ জুলাই শুক্রবার, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা

অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION