সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আল্লাহর সন্তুষ্টি মুমিনের জন্য নেয়ামত

শায়খ ড. খালেদ আল মুহান্না:
যখন বান্দার হৃদয় আল্লাহতায়ালা ভালোবাসা, মহিমা এবং তার অনুগ্রহ অবলোকন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়, তখন তার ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির আগমনই তার লক্ষ্য ও চূড়ান্ত কামনা হয়। আর এটা এমন বিশাল অনুগ্রহ, যা জান্নাতে বান্দাদের আল্লাহতায়ালা যেসব নেয়ামত দান করবেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড়, আল্লাহর দিদার লাভ ছাড়া। সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাজির, আপনার কাছে হাজির হতে পেরে সৌভাগ্যবান। আল্লাহ বলবেন, তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ কি? তারা বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আর কোনো সৃষ্টিকে যা দান করেননি, তা আমাদের দান করেছেন। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এর চাইতেও উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে প্রতিপালক! এর চাইতে উত্তম বস্তু কোনটি? আল্লাহ বলবেন, তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি নির্ধারিত করলাম। এরপর আমি তোমাদের ওপর কখনোই অসন্তুষ্ট হবো না।’ সহিহ বোখারি

মহান রবের পক্ষ থেকে এটা কত বড় অনুগ্রহ! এটা অর্জন করতে সৃষ্টি সেরা নবী-রাসুলগণ প্রচেষ্টা করেছেন ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দাগণ সাধনা করেছেন।

দয়াময় আল্লাহ বান্দাদের জন্য তার সন্তুষ্টি পাওয়ার পথগুলো প্রস্তুত করে দিয়েছেন এবং অহির মাধ্যমে সেগুলো জানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে; তাদের প্রতিই আল্লাহ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আরও (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহাসাফল্য।’ সুরা তাওবা : ৭১-৭২

রবের সন্তুষ্টি প্রত্যাশী মুসলিম ব্যক্তির ওপর শরিয়তের বিধিবিধান যত বেশিই হোক না কেন, এর কিছু উপকরণ রয়েছে যার ওপর তার সন্তুষ্টি নির্ভর করে। কিছু উপায় রয়েছে সেগুলো গ্রহণ করতে হবে। বান্দা যদি সেগুলো দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে তাহলে সে এমন আনুগত্য পালনের তওফিক পাবে, যা তার মাওলার সন্তুষ্টিতে পৌঁছে দেবে। এর মূলে রয়েছে ‘আল্লাহর সঙ্গে সত্যবাদিতা।’ কেননা এটাই বান্দার জন্য ইহকালীন ও পরকালীন আল্লাহর সন্তুষ্টিকে আবশ্যক করে দেয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু আবদুর রহমান আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই সত্যকে অবলম্বন করবে। কেননা সত্য সৎকর্মের দিকে ধাবিত করে, আর সৎকর্ম ধাবিত করে জান্নাতের দিকে। কোনো ব্যক্তি যদি সত্য বলতে থাকে এবং সত্যের প্রতি সদা মনোযোগ রাখতে থাকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছেও সিদ্দিক হিসেবে তার নাম লিপিবদ্ধ হয়।’ সহিহ বোখারী

বর্ণিত হাদিসে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার রবের সঙ্গে সততা অবলম্বন করলে, তিনি তাকে তার সন্তুষ্টির মাধ্যম অর্জনের তওফিক দেবেন এবং ওই পথে তাকে পরিচালনা করবেন। পক্ষান্তরে যে স্বীয় রবের সঙ্গে সততা বর্জন করবে, তাকে তিনি লাঞ্ছিত ও পথভ্রষ্ট করবেন।

আল্লাহর সঙ্গে সততা বজায় রাখার কিছু আবশ্যিক বিষয় রয়েছে, যা তা থেকেই উদগত হয়, কিছু দলিল রয়েছে তা এটার ওপর প্রমাণ বহন করে এবং কিছু সুফল রয়েছে, যা তা থেকেই অর্জন হয়। সেগুলো হলো প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৎ আমলসমূহ, যা দ্বারা বান্দা তার মাওলার সান্নিধ্য অর্জন করতে থাকে, অবশেষে সে সৃষ্টির সেরাদের অন্তর্ভুক্ত হয়; যাদেরকে বিশাল প্রতিদান, উত্তম পরিণতি ও পরাক্রমশালী মহাদাতার সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা ইমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে তাদের পুরস্কার স্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট; এটি তার জন্য, যে তার প্রতিপালককে ভয় করে।’ সুরা বায়্যিনা : ৭-৮

মহান আল্লাহর সঙ্গে সততা বজায়কারীরা তাদের সততার বরকত ও উপকারিতা লাভ করবে এমন দিনে যখন এটার প্রতি তারা অধিক মুখাপেক্ষী থাকবে। যখন বান্দা তার রবের প্রতি সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে ভালোবাসে, তখন তিনিও বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন। তাকে দুনিয়াতেই তার সন্তুষ্টি অর্জনের শুভলক্ষণগুলো প্রত্যক্ষ করান, তাকে সৎকাজে নিয়োজিত করা, অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে। কেননা কর্ম অনুপাতে তার ফল হয়।

বান্দা কর্র্তৃক রবকে ভালোবাসা বিনাদ্বিধায় তার শরিয়ত পালন ও তার আদেশ মান্য করার দাবি রাখে। আর রবের প্রতি বান্দার সন্তুষ্ট থাকার দাবি হলো তিনি বান্দার জন্য যা তাকদিরে রেখেছেন যদিও তা তার জন্য কষ্টকর হয় তা মেনে নেওয়া। সুতরাং যে ব্যক্তি এ উচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারবে, তাকে আল্লাহ তার সন্তুষ্টির উচ্চাসনে পৌঁছাবেন। কেননা রবের সন্তুষ্টির বহু স্তর রয়েছে, এগুলো তিনি স্বীয় ইচ্ছামতো বান্দাদের দিয়ে থাকেন যেমন জান্নাতে জান্নাতীদের স্তরের ভিন্নতা রয়েছে।

উচ্চাকাক্সক্ষা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে রবের সন্তুষ্টি প্রত্যাশী আমলদার বান্দাই সৎকাজে অগ্রগামী। এ ক্ষেত্রে তার আদর্শ হলো- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ; যেমন হজরত মুসা (আ.) বলেছেন, ‘আমি তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এ জন্য।’সুরা ত্বহা : ৮৪

যেমন মুত্তাকিদের ইমাম ও রাসুলদের সর্দার নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সৎকাজে অগ্রগামী, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে উদ্যোগ গ্রহণকারী এবং মাওলার কালেমা উড্ডীন হয় এমন প্রত্যেক বিষয়ের প্রতি অগ্রসরমানদের আদর্শ। যখন তার জীবন সায়াহ্নে সূর্য গ্রহণ লাগে, তখন তিনি ভীত-বিহ্বল হয়ে, রবের নিকট তার ক্রোধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে দ্রুত নিজের চাদর সামলাতে সামলাতে মসজিদের দিকে রওনা দিলেন। তার সাহাবিগণও এমন ছিলেন, আদেশ-নিষেধ পালনে অগ্রগামী ছিলেন, প্রত্যেক সৎকাজ পালনে তাড়াহুড়া করতেন। অবশেষে তাদের রব তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের সম্মানিত করেছেন এবং তাদের জীবদ্দশাতেই অহির দ্বারা তাদের আত্মাকে নেয়ামতপূর্ণ করেন, যা তার রাসুল তাদের পাঠ করে শুনিয়েছেন, ‘আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য।’ সুরা আত তওবা : ১০০

আমাদের সুমহান প্রভু আল্লাহ কৃতজ্ঞ, তিনি বান্দাকে স্বীয় সন্তুষ্টির দ্বারা সম্মানিত করেন; যদি রবের প্রশংসায় ও তিনি তাকে যা নেয়ামত দিয়েছেন তার শোকরিয়া আদায়ে তার জিহ্বা সিক্ত থাকে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ পড়ে।’ সহিহ মুসলিম

মহাদাতার পক্ষ থেকে এ বিশাল প্রতিদানটিই চূড়ান্ত অনুগ্রহ, যেহেতু তিনি বান্দাকে আহারের নেয়ামত দিয়েছেন, তারপর সে তা আহার করেছে। অতঃপর তাকে এ জন্য প্রশংসা করার মানসিকতা দান করেছেন, অবশেষে তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হন। আমাদের রব সহিষ্ণু, তিনি বান্দাকে স্বীয় ক্রোধ থেকে সন্তুষ্টির দ্বারা আশ্রয় প্রদান করেন, যদি সে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে যেমনটি মুত্তাকিদের ইমাম ও সৎ পথের পথিকদের আদর্শ নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রার্থনা করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক রাতে আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিছানায় পাচ্ছিলাম না। তখন আমি আমার হাত দ্বারা তাকে খুঁজতে লাগলাম। তখন আমার হাত তার পদযুগলের ওপর পতিত হলো। তখন তার পা খাড়া ছিল এবং তিনি ছিলেন সিজদারত। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার অসন্তোষ থেকে তোমার সন্তোষের মাধ্যমে এবং তোমার আজাব থেকে তোমার ক্ষমার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার (শাস্তি) হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে সক্ষম নই। তুমি তেমনই যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছ।’ সহিহ মুসলিম

আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন বিষয় ছাড়া যাবতীয় বিষয়ে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সন্তুষ্ট করা আল্লাহর সন্তুষ্টি আগমনের অন্যতম জোড়ালো মাধ্যম। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মাতা-পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে।’ সুনানে তিরমিজি

২১ জুলাই শুক্রবার, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION