রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন
তাসকিন জাহান:
দয়াময় আল্লাহতায়ালা যেসব জিনিস কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো মাদক। অথচ দেশে দিন দিন মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যা দেশ ও সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিদেশি মদ আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের পর বেড়েছে দেশি মদের চাহিদা। এবারও মদ বিক্রিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।
কেরুর তথ্যমতে, প্রথমবারের মতো প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকার মদ বিক্রি করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৮৫ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানটি। যা কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড। মদের উৎপাদন বাড়াতে কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে করপোরেশন। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মদ উৎপাদনের কাজ চলছে। এতে কয়েক গুণ বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা।
চলতি অর্থবছরে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ১১ প্রুফ লিটার মদ বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার প্রুফ লিটার বেশি। প্রতি বছর চিনি খাতে লোকসান গুনতে হয় কেরুকে। এবার চিনি বিভাগের ৬৮ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে কেরুর নিট লাভ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। কেরুর সফলতা ধরে রাখতে প্রধান কাঁচামাল আখের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সারাদেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউজ ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এরই মধ্যে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় নতুন দুটি বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দেশে অ্যালকোহলের চাহিদা মেটাতে বিয়ার তৈরির করতে কেরুতে দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, মানুষ দিন দিন অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশি মুসলমানরা চিনির চেয়ে মদ বেশি গিলছে। শহুরে এলিটদের পাশাপাশি গ্রামের সরল মানুষদের মাঝেও মদের চাহিদা বাড়ছে। সবকিছু ঘটছে এমন একটি দেশে, যে দেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। যেখানে পারমিট ছাড়া মদ্যপান অপরাধ।
এভাবেই ধর্ম থেকে দূরে সরে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে মুসলমানরা। পবিত্র কোরআনে মাদক শয়তানের কর্ম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরগুলো তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ সুরা মায়েদা : ৯০
এ ছাড়া মদ ইত্যাদি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, যা মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতকে ধ্বংস করে দেয়। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ -সুরা মায়েদা : ৯১
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদপানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তওবা করলে তবে আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদ পান করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে তওবা করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার তওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদ পানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহতায়ালা গ্রহণ করেন না। যদি সে তওবা করে, আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করেন। সে চতুর্থবার মদ পানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহতায়ালা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তওবা করে, আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার), খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুজের ঝরনা। জামে তিরমিজি : ১৮৬২
অতএব, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে মাদককে না বলতে হবে। নিজেদের পরিবার-পরিজনের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। সন্তান-সন্ততিকে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে।
ভয়েস/আআ