রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কিশোর অপরাধের নেপথ্যে

ইকরামুল ইসলাম:

যেকোনো পরিবারের সুখ-শান্তি ও আনন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে শিশু-কিশোররা। তাদের হাসিমুখ ও দুরন্তপনা দেখে পরিবারের অন্য সদস্যরা সাময়িক দুঃখ-কষ্ট ভুলে সুখ খুঁজে পায়, চোখ শীতল হয়, হৃদয়-মন প্রশান্ত হয় এবং বেঁচে থাকার তাগিদ অনুভব করে থাকে। তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। কিন্তু এই শিশু-কিশোররা আজ বড় দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অলীক কল্পনা, অসৎ চিন্তাভাবনা, অপরাধ প্রবণতা ও নৈতিক অবক্ষয় দিন দিন পরিবার, সমাজ ও দেশকে চরম হতাশা ও চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সম্ভাবনাময়ী কোমলমতি শিশু-কিশোরদের এমন অধপতন একদিনে আসেনি এবং এর দায় কেবল তাদের একারও নয়। নিম্নে কিশোর অপরাধের কারণ ও উত্তরণের পথ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

পারিবারিক বন্ধনের অভাব

বর্তমানে পারিবারিক বন্ধন অনেকটা ‘নড়বড়ে’ হয়ে পৌঁছে গেছে। সঠিক নজরদারির অভাব ও আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের কারণে শিশু-কিশোররা পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। দিন দিন নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এক্ষেত্রে পরিবারের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। পরিবারকে বলা হয় শিশুর আদর্শ পাঠশালা, সামাজিক শিষ্টাচার ও নৈতিক শিক্ষার প্রথম সূতিকাগার। একটি শিশু জীবনের শুরুতে পরিবার থেকে যে শিক্ষা পায়, সেটাই তার পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলে। পরিবারের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের সম্পর্ক ও বন্ধন যত মজবুত হবে, তাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তত কমে আসবে। সুতরাং শিশু-কিশোরদের প্রতি পরিবারকে আরও দায়িত্বসচেতন, সহানুভূতিশীল ও সহযোগী হতে হবে।

মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব

আধুনিক মিডিয়াব্যবস্থা মানুষের জীবনমান উন্নত থেকে উন্নততর করেছে। পুরো পৃথিবীকে হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। অনেক দুর্লভ বিষয় সহজলভ্য করেছে, কষ্টসাধ্যকে করেছে সহজসাধ্য। এ ছাড়া আরও ইতিবাচক দিক রয়েছে আধুনিক মিডিয়ার। রয়েছে নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষত কিশোর-তরুণদের মাঝে আধুনিক মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রণহীন সম্পৃক্ততা ও আসক্তি বিবেকসম্পন্ন যে কাউকে ভাবিয়ে তোলে। এ কারণে তাদের শরীর ও মনের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা এবং সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সম্ভাবনাময়ী অজস্র জীবন প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই নেতিয়ে পড়ছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে আধুনিক মিডিয়ার সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে।

নৈতিক প্রশিক্ষণের অভাব

শিক্ষাব্যবস্থা বলতে দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমকে বোঝানো হয়েছে। যে শিক্ষাব্যবস্থায় নির্মোহ, নিঃস্বার্থ, উদারচিত্ত ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরির পাঠ নেই। তা ছাড়া শিক্ষাঙ্গনে নৈতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ে চরম উদাসীনতা ও শৈথিল্য লক্ষ করা যায়। আদর্শ জাতি গড়ার কারিগর, মর্যাদার সুউচ্চ শিখরে অবস্থিত শিক্ষকরা এ ব্যাপারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠে আনন্দ পাচ্ছে না, মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। এ জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এসেও নানা অপরাধ-অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে তারা। অথচ সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে আদর্শ ও মানবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠা দেশের প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার। এমন পরিবেশ সুনিশ্চিত করা সরকারের গুরুদায়িত্বগুলোর অন্যতম। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষকদের আন্তরিক স্নেহপরবশ, সচেতন ও জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি অপরাধের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে এবং সভা-সেমিনার ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সামাজিক পরিবেশে সুস্থতার অভাব

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি তৈরি করা। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থা এমন একটা রূপ নিয়েছে, যেখানে লেখাপড়ার সব আয়োজন চাকরিকেন্দ্রিক; আদর্শ মানুষ হওয়া মুখ্য নয়। ফলে শিক্ষার মান রক্ষা পাচ্ছে না এবং শিক্ষিতরাও যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন না। এখানে অর্থ-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তিই মানমর্যাদা ও সম্মানের অন্যতম মানদন্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সমাজের এমন অবস্থার উপলব্ধি থেকে জীবনের শুরুতেই শিশু-কিশোরদের কাছে শিক্ষার গুরুত্ব ও মর্যাদার বিষয়টি ম্লান হয়ে আসে। তারা অহর্নিশ অর্থ-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনের পেছনে ছুটতে থাকে এবং এসব অর্জনে এক সময় নানা অপরাধ চক্র ও গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সামাজিকভাবে শিশু-কিশোরদের সামনে শিক্ষার গুরুত্ব, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে।

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা

ধর্মীয় অনুশাসন ব্যক্তিকে সুশৃঙ্খল ও আদর্শ মানুষে পরিণত করে। ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে শিশু-কিশোরদের পথচলাও মসৃণ হয় না। তাদের বিপথগামী ও অপরাধে যুক্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। এ জন্য সব ধর্মই তার অনুসারীদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে চলতে নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা ব্যাপক এবং গোছালো। জন্মের পর মুসলিম শিশুকে তাওহিদ-রিসালাতের ঘোষণা শোনানো ও শরিয়ত সমর্থিত সুন্দর নাম নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইসলামের সঙ্গে তার জীবনের শুভসূচনা হয়। এই শিশু সাত বছরে উপনীত হলে ইসলাম তাকে নামাজে অনুশীনে উদ্বুদ্ধ করেছে। দশ বছরে নামাজে অলসতা ও শৈথিল্য পরিলক্ষিত হলে মৃদু শাসনেরও নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া তাকওয়া অর্জন ও সুন্দর চরিত্র গঠনের উৎসাহ মুসলিম শিশুদের সহনশীল ও সুশৃঙ্খল জীবন উপহার দিতে সাহায্য করে। এ জন্য ধর্মীয় অনুশাসন শিশু-কিশোরদের অপরাধমুক্ত সুন্দর ও মানবিক জীবন দানে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

জন্মের পর শিশুর আদর্শ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিশু-কিশোরদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও সমৃদ্ধ জীবনের লক্ষ্যে চেষ্টা-সাধনা ও সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো।’ সুরা ফুরকান : ৭৪

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION