রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কারও পাপের বোঝা কেউ বহন করবে না

তাসকিন জাহান:
কেয়ামতের দিন কোনো মানুষ অন্য মানুষের পাপের ভার বহন করতে পারবে না। প্রত্যেককে নিজের বোঝা নিজেই বহন করতে হবে। ‘বোঝা’ মানে কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের ওপর শুধু তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব আরোপিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কোনো ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে এরও কোনো সম্ভাবনা নেই। কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। যদি কোনো বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না, যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়।’ সুরা ফাতির : ১৪

কোরআন মজিদের অনেক আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘কারও পাপের বোঝা অন্যকেও গ্রহণ করবে না।’ সেই সঙ্গে আয়াতে এটাও বলা হয়েছে, কেয়ামতের আদালতের আইনকানুন দুনিয়ার মতো নয়। দুনিয়ায় কেউ অপরাধ করে তার দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানো যায়। কিন্তু আল্লাহর আদালতে এর কোনো অবকাশ নেই। সেখানে একজনের পাপের জন্য অন্যকে দায়ী করা হবে না।

অবশ্য যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিদের ভ্রষ্ট করবে, সে তার নিজের পাপের বোঝার সঙ্গে তাদের পাপের বোঝাও বহন করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বোঝাও বইবে এবং নিজেদের বোঝার সঙ্গে অন্য অনেক বোঝাও। আর তারা যে মিথ্যাচার চালিয়ে এসেছে কেয়ামতের দিন নিশ্চয়ই তাদের সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ সুরা আনকাবুত : ১৩

কথাটি এভাবে বলা যায়, এক ব্যক্তি নিজেও চুরি করে এবং অন্যকেও তার সঙ্গে এ কাজে অংশ নিতে বলে। এখন যদি দ্বিতীয় ব্যক্তি তার কথায় চুরিতে অংশ নেয়, তাহলে অন্যের কথায় অপরাধ করেছে বলে কোনো আদালত তাকে ক্ষমা করবে না। চুরির শাস্তি অবশ্যই সে পাবে। ন্যায়বিচারের কোনো নীতি অনুযায়ী তাকে রেহাই দিয়ে তার পরিবর্তে এ শাস্তি সেই প্রথম চোরটি যে তাকে ধোঁকা দিয়ে চৌর্যবৃত্তিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তাকে দেওয়া কোনোক্রমেই ঠিক হবে না। কিন্তু সেই প্রথম চোরটি তার নিজের অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে অন্যজনকে চোরে পরিণত করার অপরাধের শাস্তিও পাবে।

বিষয়টি নবী করিম (সা.) নিম্নোক্ত হাদিসে বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে আহ্বান জানায় সে তাদের সমান প্রতিদান পাবে যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে, এজন্য তাদের প্রাপ্য কোনো কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে আহ্বান জানায় সে তাদের সবার সমান গোনাহের ভাগী হবে যারা তার অনুসরণ করে এবং এজন্য তাদের গোনাহের মধ্যে কোনো কমতি করা হবে না।’ সহিহ মুসলিম

যদি কেউ বলে, তুমি এ অন্যায়টি করো। এর ফলে যা গোনাহ হবে তা আমি বহন করব। এমন কথায় বিশ্বাসী হয়ে অন্যায় করা যাবে না। কেননা এ কথা শুধু মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বলতে পারবে, মুমূর্ষুকালে এ কথা বলবে না, কারণ তখন সত্য উপলব্ধি করতে পারবে। আর আখিরাতে তো বাবা-মাও সন্তানকে অস্বীকার করবে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, কোনো মুমিন মানুষকে মন্দ কর্মের দিকে আহ্বান করবে না, আহ্বানের উপকরণ তৈরি করবে না। মানুষ নিজের কর্মের প্রতিদান তো পাবেই, সেই সঙ্গে দুনিয়ায় যেসব কর্মের নমুনা রেখে যায়, তার প্রতিদানও পাবে। নমুনা ভালো হলে ভালো প্রতিদান, আর মন্দ হলে মন্দ পরিণাম। তাই আমাদের উচিত সতর্ক হওয়া, আমরা পৃথিবীতে মানুষের জন্য কী আদর্শ রেখে যাচ্ছি? কাকে কী শিক্ষা দিচ্ছি, যা দিচ্ছি তা কি ভালো কাজ, না মন্দ কাজ। কারণ এর ভালো-মন্দ ফলাফল আমাকেও ভোগ করতে হবে।

আরেকটি কথা, বাবা-মায়ের কোনো পাপের কারণে সন্তান প্রতিবন্ধী হয়, পাপের কারণে শুধু কন্যাসন্তান হয়, সন্তান ভুলপথে পা বাড়ায় কিংবা মারা যায় এমন অনেক কথাও সমাজের অনেকে বলেন। এসব কথা শুদ্ধ নয়, এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। বাবা-মার পাপের কারণে সন্তান প্রতিবন্ধী হবে, শুধু কন্যাসন্তান হবে, সন্তান মারা যাবে এগুলো ভাবার কোনো কারণ নেই।

তবে হ্যাঁ, মানুষের যেকোনো বিপদ-আপদ তার পাপের কারণে হয়ে থাকে। তাদের পাপ নিজেদের ওপর পড়ে থাকে। নিজেদের কর্মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়, এটা নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION