রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সন্তান প্রতিপালনে যেসব বিষয় জরুরি

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
নেক সন্তান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তান-সন্ততিকে জীবনের শোভা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া; (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১

সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এই সন্তানই মা-বাবার ইহকাল-পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।

গোনাহমুক্ত পরিবেশ : শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যতœবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গোনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৬

একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।

তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সামনে ঝগড়াঝাটি, পরনিন্দা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তার সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো।’ -সহিহ বোখারি : ২১২২

সৃজনশীল খেলনা : শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়- এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

অনেকে সন্তানকে ঘরে নিরাপদে রাখতে ভিডিও গেম বা কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।

দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের সাধারণ জ্ঞানগুলো অল্প অল্প করে শেখাতে হবে। কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গোনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।

নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ -সুনানে বায়হাকি : ৫০৯৪

উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে সন্তানের বিছানা আলাদা করে দেওয়ার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা ঘুমিয়ে গেলেও তাদের অবচেতন মন বড়দের অনেক কার্যক্রমই অনুসরণ করতে পারে।

এক কথায় সন্তানকে দীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরও অত্যন্ত সচেতনভাবে চলতে হবে। ঘরে আমলের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে আমল করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION