রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে নবীর আদর্শ

মুফতি উবাইদুল্লাহ তারানগরী:

নিরাপদ পৃথিবী আকাশ থেকে অবতীর্ণ হয় না, জমিন ফুঁড়েও বের হয় না। বাসিন্দারা যদি সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান হয়, তাহলেই বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজের মানুষ হেদায়েতের আলো-বিধৌত না হলে কোনো সংস্কার ও বিপ্লবই সাধিত হয় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ -সুরা রাদ : ১১

পৃথিবীকে আলোকিত করতে নবী কারিম (সা.) একদল আলোকোজ্জ্বল মানুষের কাফেলা গড়ে তোলেন। যারা এক সময় ছিলেন অন্ধকারে নিমজ্জিত, কিন্তু নকী কারিম (সা.)-এর ছোঁয়ায় হয়ে যান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক। যাদের প্রতি মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। যাদের শাসনামলের প্রতি আকাক্সক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল বিশ্ব।

নবী কারিম (সা.) বিশ্বকে দেখান আলোড়িত এক নতুন রূপ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সবকিছুরই নির্দেশনা দিয়েছেন নির্মল স্ফটিকের মতো উজ্জ্বল করে। যার দেখানো পথ-মত জীবননীতি ও শাসনপদ্ধতি ছাড়া অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদেরও তার আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আস্থা রাখতে হবে বিশ্বমানবতার মহাপ্রেরণা হিসেবে দেওয়া নবীর দেখানো পথে। এর কয়েকটি হলো-

কুসংস্কার দূরীকরণ

আইয়ামে জাহেলিয়ায় কেউ অসুস্থ হলে সংক্রমণের ভয়ে দূরে থাকা হতো। সফর মাসকে অশুভ মনে করা হতো। পেঁচা ডাকলে কুলক্ষণ ভাবা হতো। রহমতে আলম (সা.) এসবকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘রোগ (নিজস্ব ক্ষমতায়) একজন থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হয় না। সফর মাসে কোনো অমঙ্গল নেই। পেঁচায় অশুভ আলামত নেই।’

নবী কারিম (সা.) অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও সাহসিকতায় মূর্খতায় আচ্ছন্ন সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করেন। জাহেলি যুগে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে সাদা-পাতলা ছেঁড়া-ফাড়া কাপড় পরিয়ে সংকীর্ণ কক্ষে এক বছর বন্দি করে রাখা হতো। নবীজি তা দূর করে ঐশী আলোয় শোক পালনের মানবিক পদ্ধতি বলে দেন ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়ে।

সিন্ডিকেটমুক্ত বিশ্ব

বিশ্বের কিছু পুঁজিবাদী দেশ, মোনাফালোভী চক্র, অধিক মুনাফার নেশায় পণ্য মজুদ করে বিশ্ববাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। ফলে বিদ্যুৎগতিতে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় বহুগুণ। সাধারণ মানুষ এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে। বিনিময়ে তারা হাতিয়ে নেয় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে। রাসুল (সা.) বাজারের অবস্থা স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রাখার জন্য যে আদর্শ উম্মাহর সামনে পেশ করেছেন তা এক কথায় অসাধারণ, যুগান্তকারী। তিনি বলেন, ‘যে অতিরিক্ত লাভের আশায় ৪০দিন পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য বিক্রি না করে মজুদ করে রাখবে, আল্লাহর সঙ্গে তার সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।’

বাজার তদারকি

বিশ্ববাজারে কী পরিমাণ খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। যেন বিষের ছড়াছড়ি। সঠিক প্রতিবেদন পড়লে গা শিউরে ওঠে। এক্ষেত্রেও নবী কারিম (সা.) উত্তম আদর্শ। নবী কারিম (সা.) বাজার তদারকি করতেন। মক্কা বিজয়ের পর মক্কার বাজারে খাদ্যে ভেজাল ও ধোঁকাবাজি খতিয়ে দেখেন। এর জন্য নিযুক্ত করেন হজরত সাইদ ইবনে সাইদ ইবনুল আস (রা.)-কে। নবীজিও সশরীরে বাজারে গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। একদিন খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেন। ফলে তার আঙুলগুলো ভিজে যায়। মালিককে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উত্তর দেয় হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। নবীজি বলেন, সেগুলো স্তূপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে তো লোকেরা দেখে নিতে পারত। মনে রেখো, ‘যে ধোঁকাবাজি করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’

বৈষম্যমুক্ত পৃথিবী নির্মাণ

সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় নবীজির অবদান অতুলনীয়। তিনি দাস ও কুষ্ঠরোগীর সঙ্গেও বসে আহার করেছেন। সাহাবাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমতার যে বন্ধন তৈরি করেছেন, এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পৃথিবী অক্ষম। নবীজির প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা দেখে বিধর্মীরাও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেত। বৈষম্যহীন ভালোবাসার গুণেই সাহাবারা সবাই মনে করতেন নবীজি ‘আমাকে বেশি ভালোবাসেন।’

সমাজের বৈষম্যহীনতা বিলোপ করতে তিনি ঘোষণা করনে, ‘মুসলিম জাতি পরস্পর ভাই ভাই, আমার অবর্তমানে তোমরা পরস্পর মারামারি ও হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে কাফের হয়ে যেয়ো না।’

বস্তুত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক। বিশ্বের জন্য রহমত। উত্তম চরিত্রের আধার। কল্যাণকামী শ্রেষ্ঠ সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার মুখনিঃসৃত জ্ঞানগর্ভ বাণী, তত্ত্ব-তথ্য, আচরণ-উচ্চারণ, চিন্তা-দর্শন ও শানিত ভাষণে পৃথিবীর ভিন্ন অঙ্গনের জ্ঞানী দার্শনিকরা মুগ্ধ হয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তাদের বিমুগ্ধ স্বীকারোক্তি রয়েছে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে ইমানভিত্তিক সমাজ, অতপর ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামি রাষ্ট্রজুড়ে নারী, শিশু, বুড়োরাও বাধা-ভয়হীনভাবে ঘুরে বেড়াত।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION