রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন
মুফতি শরিফুল আজম:
আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ আলোচিত ব্যক্তি হলেন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যত পর্যালোচনা, গবেষণা ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে; সম্ভবত অন্যসব ব্যক্তিকে নিয়ে পর্যালোচনা, গবেষণা গ্রন্থ রচনার সমষ্টিও সেসবের সমতুল্য নয়। তবে নবী কারিম (সা.)-এর সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও তৃপ্তিদায়ক পরিচয় এবং তার রেসালতকে (রেসালাত অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা বহন) উপলব্ধি করার জন্য দলিলসিদ্ধ আলোচনা আমরা শুধু কোরআন মাজিদেই পেতে পারি। কারণ, কোরআন নিজে প্রমাণসিদ্ধ হওয়ার জন্য রাসুলের রেসালাত ও তার মহত্ত্বের আবশ্যকতা প্রমাণিত হওয়াটা জরুরি। তাই এই নিবন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে কোরআন মাজিতে উল্লিখিত রাসুলের পরিচয় বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
তিনি একজন রাসুল : কোরআন মাজিদে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তার যে পরিচয়টি তুলে ধরা হয়েছে, তা হচ্ছে তিনি একজন আল্লাহর প্রেরিত রাসুল তথা বার্তাবাহক। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সন্ধিপত্রে কাফেররা যখন ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখার ব্যাপারে আপত্তি করল, তখন আল্লাহতায়ালা সুরা ফাতহের শেষ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।’ সুরা ফাত্হ : ২৯
অর্থাৎ কাফেরদের অস্বীকারের কারণে যদিও শেষ পর্যন্ত সন্ধিপত্রে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ লিখতে হচ্ছে, কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে তিনি আল্লাহর রাসুল। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা কেয়ামত পর্যন্ত এ সত্যের ওপর সিলমোহর করে দিয়েছেন। তাউজিহুল কুরআন
কেয়ামত অবধি সবার নবী : কোরআন মাজিদ এটা স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, তিনি কেয়ামত অবধি সব জিন-ইনসানের (মানুষ) জন্য প্রেরিত রাসুল। সুরা আম্বিয়ায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ।’ সুরা আম্বিয়া : ১০৭
সর্বশেষ নবী : কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসুল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ।’ সুরা আহযাব : ৪০
মুযাক্কি ও মুয়াল্লিম ; জমিনবাসীর সংরক্ষিত ইতিহাস এ কথার সাক্ষী যে, রাসুল (সা.) সমকালীন এমন সব মানুষদের সংশোধন করেছিলেন যারা ছিল অশিক্ষিত। মৃত জন্তু ভক্ষণ করত। মদ্যপান ছিল তাদের গৌরব। কন্যাসন্তানদের জীবিত কবর দিত। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে বংশানুক্রমে যুদ্ধ করত। সেই বর্বর মানুষগুলোকে তিনি আমূল বদলে দিলেন। তারাই তখন অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে শিখল। কিতাবুল্লাহর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠল। মদ জুয়া ও সুদের মতো মানবতাবিরোধী বস্তুগুলো তাদের জীবনে হয়ে উঠল অতীব ঘৃণ্য। নারীরা পেল নিরাপত্তা মর্যাদা ও অধিকার। পৃথিবী হয়ে উঠল নিরাপদ। পবিত্র কোরআনের ইরশাদ, ‘তিনিই উম্মিদের (নিরক্ষর, অজ্ঞ) মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের সামনে তার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবে। তাদের পরিশুদ্ধ করবে। তাদের কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেবে। যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত ছিল।’ সুরা জুমুয়া : ২
মুযাক্কি শব্দের অর্থ অভ্যন্তরীণ দোষসমূহ থেকে পবিত্র করা, মুয়াল্লিম অর্থ শিক্ষক।
আলোকিত এক বাতি ; নবীজি ছিলেন আলোকিত এক বাতি। যার আলোয় এই পৃথিবী আলোকময়। তার আলো ছাড়া এই ভুবন বিস্তৃত এক আঁধার। মহান আল্লাহর ইরশাদ, ‘হে নবী! আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও আলো বিস্তারকারী প্রদীপরূপে।’ সুরা আল আহযাব : ৪৫
ভয়েস/আআ