রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

যেসব কারণে অসিয়ত গুরুত্বপূর্ণ

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পরে কোনো কিছু করা বা হওয়ার নির্দেশনাকে অসিয়ত বলে। আমানত পৌঁছে দেওয়া, সম্পদ দান করা, কন্যা বিয়ে দেওয়া, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, তার জানাজা পড়ানো, মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ বণ্টন করা ইত্যাদি অসিয়তের অন্তর্ভুক্ত। কোরআন-হাদিস ও ইজমা দ্বারা অসিয়ত প্রতিষ্ঠিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোনো সম্পদ রেখে যায়, তবে তা অসিয়ত করবে।’ সুরা আল বাকারা : ১৮০

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসিয়তযোগ্য কিছু রয়েছে আর সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না।’ সহিহ বোখারি : ২৫৮৭

হাদিসের দাবি হলো মুসলমানকে তার প্রতিদিনের কাজ-কারবার স্পষ্ট রাখা। কারও সঙ্গে কোনো দেনা-পাওনা থাকলে তা লিখে অসিয়ত করে রাখবে। একজন মুসলিম পার্থিব জীবনে এমনভাবে থাকবে, যেভাবে একজন সিপাহি সীমান্তচৌকিতে পাহারারত থাকে। যেকোনো মুহূর্তে তার প্রস্থানের নির্দেশ আসুক সে এর জন্য প্রস্তুত থাকে। এখানে অসিয়ত-সংক্রান্ত কিছু মাসয়ালা উল্লেখ করা হলো

ঋণ পরিশোধের অসিয়ত : যেসব হক আদায় করা ওয়াজিব তার জন্য অসিয়ত করা ওয়াজিব। যেমন একজন ঋণ নিয়েছে। এখন তার কর্তব্য হলো, এই অসিয়ত করে রাখা যে, তার সম্পদ থেকে যেন এ ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ঋণের খবর ঘরের লোকদের জানা থাকে না। এমতাবস্থায় তার মৃত্যুর পর জানা না থাকার কারণে কাছের লোকরা তা পরিশোধ করতে পারে না। ফলে এ হক তার জিম্মায় থেকে যায়। ঋণও শোধ হয় না। সেও দায়মুক্ত হতে পারে না।

নামাজ-রোজার ফিদইয়ার অসিয়ত : কারও জীবনে কোনো নামাজ-রোজা কাজা হয়ে থাকলে জীবদ্দশায় তা আদায় করে ফেলা। কোনো কারণে যদি কাজা আদায়ের সুযোগ না পাওয়া যায়, তাহলে এ মর্মে অসিয়ত করে যাওয়া ফরজ যে, আমার জিম্মায় এত নামাজ, এত রোজা কাজা রয়েছে। এগুলোর ফিদইয়া যেন আদায় করা হয়। যদি কেউ এমন অসিয়ত না করে তাহলে যে কঠিন গোনাহগার হবে।

জাকাত আদায়ের অসিয়ত : কারও ওপর কয়েক বছরের জাকাত ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও সে আদায় করেনি। তার কর্তব্য বিগত বছরগুলোর হিসাব করে জাকাত আদায় করা। জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ আদায় করতে না পারলে মৃত্যুর আগে অন্তত অসিয়ত করে যাবে যে, আমার এ পরিমাণ জাকাত অনাদায়ি রয়েছে। তা যেন আদায় করা হয়। অন্যথায় গোনাহগার হবে।

বদলি হজের অসিয়ত : কারও ওপর হজ ফরজ হয়েছে। কিন্তু আদায় করতে পারেনি। তার কর্তব্য হলো, বদলি হজের অসিয়ত করে যাওয়া। অসিয়ত না করলে দ্বিগুণ গোনাহ হবে। প্রথমত, ফরজ আদায় না করার গোনাহ। দ্বিতীয়ত, মৃত্যুর আগে অসিয়ত না করে যাওয়ার গোনাহ।

অসিয়ত পূরণে জীবিতদের করণীয় : জীবিতদের কর্তব্য, মৃত ব্যক্তির জায়েজ অসিয়ত পূরণ করা। তবে মৃত ব্যক্তি কোনো নাজায়েজ অসিয়ত করলে তা পূরণ করা হারাম। কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের অসিয়ত করে গেলে জীবিতদের ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এজন্য মৃতের সব সম্পত্তির প্রয়োজন হলেও।

কেউ যদি কোনো নেক কাজে সম্পদ ব্যয় করার অসিয়ত করে যায়, যেমন আমার সম্পত্তি দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করবে, কোনো মাদ্রাসায় ব্যয় করবে, কোরআন মাজিদ বিতরণ করবে, বিধবা-এতিমের জন্য এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, এমতাবস্থায় তার কাফন-দাফনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা সম্পন্ন করা জরুরি। ওয়ারিশরা তা সম্পন্ন না করলে গোনাহগার হবে। তবে এ অসিয়ত পূরণ করতে যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তির প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অতিরিক্তটা ব্যয় করা আবশ্যক নয়। ওয়ারিশদের ইচ্ছা, চাইলে স্বেচ্ছায় ব্যয় করবে, নইলে না। অবশ্য কোনো ওয়ারিশ যদি নাবালেগ হয়, তাহলে তার অংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশের অধিক গ্রহণ করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।

কারও জিম্মায় নামাজ-রোজা, হজ-জাকাত কাজা রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে যদি সে অসিয়ত করে যায়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে অসিয়ত পূরণ করতে হবে। যদি তা পূরণ করতে আরও বেশি সম্পদের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা পূরণ করা যদিও ওয়ারিশদের ওপর ওয়াজিব নয়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিশদের কর্তব্য, নিজেদের অংশ থেকে তা আদায় করে দেওয়া দরকার।

গায়রে ওয়ারিশের জন্য অসিয়ত করতে হলে : ওয়ারিশ নয় এমন কাউকে নিজের সম্পত্তি থেকে কিছু দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্য থেকে ওই ব্যক্তির জন্য অসিয়ত করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির চার ছেলে। জীবদ্দশায় তার এক ছেলের ইন্তেকাল হয়ে গেছে। বাকি তিন ছেলে তার মৃত্যুর সময় জীবিত ছিল। তার মৃত্যুর পর তিন ছেলের মধ্যে বণ্টন হবে। শরিয়ত তার মৃত ছেলে বা মৃত ছেলের সন্তানদের জন্য কোনো অংশ নির্ধারণ করে দেয়নি। এখন এ ব্যক্তি যদি তার মৃত ছেলের সন্তানদের সম্পত্তি থেকে ভাগ দিতে চায়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি থেকে তাদের ব্যাপারে অসিয়ত করে যাবে যে, আমার সম্পদের এই পরিমাণ তাদের দেওয়া হবে। তবে কোনো ওয়ারিশের ক্ষেত্রে এ রকম অসিয়ত কার্যকর হবে না।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION