রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

একজন মুমিন ২৪ ঘণ্টা যেভাবে কাটাবেন

মাওলানা আবদুল জাব্বার:
মুসলমান হিসেবে যারা ইমান এনেছেন মহান আল্লাহর প্রতি, নবী-রাসুলদের প্রতি, আল্লাহর প্রেরিত এবং সর্বশেষ গ্রন্থ কোরআন মাজিদের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, জান্নাত-জাহান্নামের প্রতি, শেষ বিচারের দিন তারাই মুমিনের আওতায় পড়বে। যারা আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ গ্রন্থ কোরআন মাজিদে বর্ণিত সহজ-সরল পথ সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ, জান্নাতের পথ অনুসরণ করে জীবনযাপন করছে, তাদেরই আল্লাহর নেয়ামতভরা জান্নাতে স্থান হবে। আর যারা কোরআনে বর্ণিত সহজ-সরল পথ পরিহার করে চলবে বা আল্লাহর পথের বিরোধিতা করবে, তারা আগুনে-অশান্তিতে ভরা জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। এটাই আল্লাহর ওয়াদা এবং তিনি ওয়াদার ব্যাপারে সদা-সতর্ক।

যারা কোরআন-হাদিসের আলোকে জীবন গড়তে চায়, তাদের জন্য আজকের এই লেখা। একজন মুমিনের দিন শুরু হয় ফজরের নামাজের মাধ্যমে। যারা ফজরের নামাজ পড়তে ওঠেন, তাদের প্রতি অনুরোধ ফজরের ৩০ মিনিট আগে উঠে ২/৪/৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ে নিন। নফল নামাজ তাহাজ্জুদের ব্যাপারে কোরআন মাজিদের সুরা মুজ্জাম্মিলে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ রাতের শেষভাগে সপ্তম আকাশ থেকে নিম্নাকাশে নেমে আসেন বান্দার আর্জি শোনার জন্য। বান্দা এ সময় যা চাইবে, মহান আল্লাহ তাই দিয়ে দেবেন এটা আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহর কাছে চাইতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আল্লাহতায়ালা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করবেন না। ঘরে তাহাজ্জুদ পড়ার সময় প্রিয় ঘরনিকেও ডেকে দেবেন।

ঘরে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে অন্যদের ডেকে দেবেন ফজরের নামাজের জন্য। আপনি ফজরের ফরজ দুই রাকাত নামাজ আদায় করার জন্য কাছাকাছি কোনো মসজিদে যাবেন। মসজিদে যাওয়ার সময় পারলে কাছের লোকদের ডেকে নিতে পারেন। এতে উভয়ই উপকৃত হবেন। মসজিদে যাওয়া এবং আসার সময় প্রতি কদমে সওয়াব পাবেন এবং গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। মসজিদে আসা-যাওয়া বা সাধারণ চলাফেরার সময় ছোট-বড়, ধনী-গরিব, রিকশাওয়ালাসহ সবাইকে সালাম দেবেন। নবী করিম (সা.) সমাজে সালামে প্রচলন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

বলে রাখা ভালো, নামাজের আগে অজু ‘গোসল দরকার হলে’ সুন্দরভাবে অজু-গোসল করলে মহান আল্লাহ আমাদের অনেক সওয়াব দেবেন এবং গোনাহ মাফ করে দেবেন। অজুর জন্য বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা খুবই জরুরি। অজুর শেষে কালেমা শাহাদাত পড়ার ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বড় সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যারা অজুর পর কালেমা শাহাদাত পড়বে, তিনি বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবেন, ইনশাআল্লাহ।

ফজরের নামাজের পর কোরআন তিলাওয়াত খুবই উপকার। বাজারে অর্থসহ কোরআন পাওয়া খুবই সহজ, সেটা সংগ্রহ করে রাখা; অর্থসহ কোরআন পড়ার চেষ্টা করা। যারা মহান আল্লাহর আনুকূল্য পেতে চাই, তাদের তার শোকরিয়া আদায় করতে হবে সব সময়। বিশেষ করে নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিদিন ৩৬০টি সদকা দেওয়ার জন্য। সাহাবারা জানালেন, এত সদকা দেওয়া তো আমাদের জন্য খুবই কঠিন। নবী করিম (সা.) বললেন, তোমরা ফজরের পর সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারবে কি না? সাহাবারা জানালেন, এটা তো সহজ কাজ। নবী করিম (সা.) বললেন, তোমরা যদি এ দুই রাকাত নামাজ আদায় করো, তবে ৩৬০টি সদকা আদায় হয়ে যাবে। সুবহান আল্লাহ! এই নফল নামাজ দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যায়। বিশেষ করে যারা অফিসে কিংবা অন্য কাজে বের হন, তারা যদি অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেন, তবে খুবই ভালো হয়। আবার অজু অবস্থায় সব সময় থাকার ব্যাপারেও আল্লাহর নবী তাগিদ দিয়েছেন। কারণ কারও জানা নেই, কার মৃত্যু কখন হবে? অজু অবস্থায় মারা গেলে মহান আল্লাহ অনেক পুরস্কার দেবেন।

মুমিনের চলাফেরা, ওঠাবসার সময় অনবরত সুবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকা। এর ফলে শয়তান কাছে আসতে পারে না।

সকালের নাশতা খাওয়া বড় কাজ। নাশতা একটু ভারী হওয়া ভালো। সারা রাত অভুক্ত থেকে সকালের নাশতা খাওয়া জরুরি। অফিস বা ব্যবসার কাজে যাওয়ার সময় পোশাক মার্জিত হওয়া প্রয়োজন। দামি পোশাক না হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে ঘর থেকে বের হওয়া ভালো। একবার নবী করিম (সা.)-এর সামনে এক ধনী ব্যক্তি বেমানান পোশাক পরে এলে তাকে তার জন্য মানানসই পোশাক পরার ব্যাপারে পরামর্শ দেন। কারণ আপনি শিক্ষক হন, ব্যবসায়ী হন বা অন্য কোনো অফিসে কাজ করেন, আপনার পোশাক মার্জিত ও দর্শনীয় হলে আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে। আপনাকে অন্যরাও পছন্দ করবে। দল-মতভেদে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলার অভ্যাস করতে হবে এটাই নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ।

যেকোনো অফিসে গিয়ে একজন মুমিন ব্যক্তি তার ওপরের ও নিচের লোকদের সালাম দিয়ে ঢুকবে এবং কুশলবিনিময় করে মহান আল্লাহর নামে কাজ শুরু করবে। আগের দিনের কাজ, আজকের কাজ এবং আগামী দিনের কাজ যত্নসহকারে নিজে করবেন, অন্যকে তার কাজে সাহায্য করবেন। আপনার অফিসে যেন সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকে, তার চেষ্টা একজন মুমিন করবে। সর্বক্ষেত্রে ঝগড়া-ফ্যাসাদ পরিহার করে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অফিসের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একজন মুমিনের অফিস আর অন্যের অফিস চালানোর পার্থক্য বুঝে আপনাকে চলতে হবে। সব সময় আপনাকে সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে প্রমাণ রাখতে হবে। রাগ-বিরাগ পরিহার করে ওপর-নিচের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। সমাজে সর্বক্ষেত্রে বন্ধু বাড়াতে হবে এবং শত্রু কমাতে হবে।

আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।’ এ নীতি মেনে চললে কোনো দিনও আপনার বিরোধী পক্ষ মনঃক্ষুন্ন হবে না। আপনি পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার অনুভূতি নিয়ে কাজ করলে আল্লাহর বরকত পেতে সহজ হবে। বিষয়টি ছোট-বড়, নেতাকর্মী, এমপি-মন্ত্রীসহ সর্বক্ষেত্রে চালু করতে পারলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলে ভালো ভূমিকা রাখা সম্ভব। সব কাজে লোভ-মোহ পরিত্যাগ করতে হবে। আমার-আপনার থাকা-খাওয়ার জন্য কত টাকা দরকার? এ টাকার জন্য ব্যাংক ডাকাতি, কাজে ফাঁকি দেওয়া, টাকার বিনিময়ে কাজ করিয়ে দেওয়া, ঘুষবাণিজ্য চালানোর দরকার হয় না। আবার এ কথাও বলতে চাই, বিদেশে টাকা না পাঠিয়ে দেশে বিনিয়োগ করলে দেশের মানুষ কাজ পেত। দেশে উন্নয়ন হতো। আমার-আপনার চলার পথ প্রশস্ত হতো। মনে রাখতে হবে আমার-আপনার মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর সময় আমাদের তিনটি সাদা কাপড় পরেই চলে যেতে হবে, যদি আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। আবার স্বাভাবিক মৃত্যু না হলে কাপড় ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। আমরা তা চাই না।

অফিস বা কর্মক্ষেত্রে জোহরের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মসজিদ কাছে থাকলে মসজিদে যাওয়াই ভালো। না হলে অফিসেই যথাসময়ে জোহরের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মুমিন ব্যক্তির সব নামাজই যথাসময়ে জামাতে পড়তে হবে। যেনতেনভাবে নামাজ পড়লে চলবে না। নামাজকে বলা যাবে না আমার কাজ আছে, বরং কাজকে বলতে হবে আমার নামাজ আছে। মুমিনকে প্রত্যেক নামাজের আগে ভালোভাবে অজু করে সুন্নত আদায় করার সময় নিয়েই মসজিদে বা নামাজের জায়গায় উপস্থিত হতে হবে। সব নামাজে, অর্থাৎ ওয়াক্তমতো নামাজ, জুমার নামাজ ও ঈদের নামাজ ও জানাজার প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ নবী করিম (সা.) প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন এবং অনেক বেশি সওয়াবের কথা বলেছেন। আমরা যারা মুমিন-মুসলমান দাবি করি, তাদের অবশ্যই আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সব নামাজ খুসু-খুজুর (একাগ্রতা) সঙ্গে আদায় করতে হবে। মনে করতে হবে, আমি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলছি। আবার আল্লাহপাকও আমাকে দেখছেন। বৈঠকের পর নামাজ পড়ে নেব এ দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। হাদিসের খেলাপ। অফিসের কাজ যথাসময়ে যথাযথভাবে সম্পাদন করতে হবে। দিনের কাজ দিনেই শেষ করতে হবে। চিন্তা করে সিদ্ধান্ত দ্রুত দিতে হবে। কোনোভাবেই সিদ্ধান্ত দেরিতে দেওয়া যাবে না। এতে প্রতিষ্ঠানের কাজে গাফিলতি হয়। আপনি যে দায়িত্বশীল, তারও মর্যাদাহানি হয়। সব কাজে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা মুমিনের বড় বৈশিষ্ট্য।

দেখতে দেখতে আসরের নামাজের সময় এসে যায়। এ ক্ষেত্রেও আগের মতোই সময় ঠিক রেখে নামাজ আদায় করে নিতে হবে। অনেক অফিসে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে নিজেরাই বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসে। সর্বক্ষেত্রেই যথাসময়ে খাওয়ার কাজ শেষ করে অফিসের কাজ যথাযথভাবে করে বাড়ি ফেরার উদ্যোগ নিতে হবে। মোটকথা, অফিসের পরিবেশ দ্বীনি পরিবেশ, সততার পরিবেশ, ন্যায়ের পরিবেশসহ সর্বক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শের আলোকেই চালাতে হবে। কোনোভাবেই এ পরিবেশের ব্যতিক্রম করা যাবে না। মুমিনরা সব সময় মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী হবে। কোনো ক্ষেত্রেই সীমালঙ্ঘন করা যাবে না।

বাড়ি ফেরার সময় ছোট-বড় সবাই তার সামর্থ্যানুসারে বাড়ির ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরলে বাসার লোকরা খুশি হয়। বিশেষ করে আপনার সহধর্মিণীর জন্য ছোটখাটো জিনিস বা তার সঙ্গে ফোন করে প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে নিয়ে এলে দরজা খুলেই সালাম বিনিময় করার সঙ্গে সঙ্গে হাতের জিনিস যদি তার হাতে দেন, তবে ভালোবাসার নিদর্শন ফুটে উঠবে। সবার ক্ষেত্রে এ অবস্থা বা পরিবেশ না হলেও ভিন্নভাবেও ঘরের পরিবেশ স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরকে জান্নাতের টুকরো বানানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উভয়ের ভূমিকা, আচার-ব্যবহার পরিবেশ ভালো রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। ঘরে ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি থাকলে তাদের প্রয়োজনও যথাযথভাবে পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার ব্যবহার ও স্ত্রীর প্রতি আপনার ভালোবাসা ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনির ওপর ভূমিকা রাখে। আমার জানা মতে, একজন ৪০ বছর সংসার করে স্বামী-স্ত্রী কোনো দিনও সীমালঙ্ঘন করে আচার-ব্যবহার করতে হয়নি বা কোনো দিনও একটি চড় মেরে শাসন করতে হয়নি। শুধু তাই নয়, তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনিকে কোনো দিনও হাত দিয়ে শাসন করতে হয়নি। কী সুন্দর পরিবেশ। মুমিনের একটি বড় গুণ তার পরিবারে জান্নাতি পরিবেশ। আমরা যদি নিজ নিজ পরিবারে জান্নাতি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি, তবে সমাজ থেকে সব অনাচার কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ, তখন তো ঘরে ঘরেই আদর্শ মানুষ, রাস্তায়, হাটে-বাজারে কিংবা অফিসে অন্যায়-অপকর্ম করার লোক থাকবে না। সমাজে এমনিতেই শান্তি নেমে আসবে।

এশার নামাজের পর বেশি সময় জেগে না থেকে তাড়াতাড়ি ঘুমালে শেষ রাতে ওঠা সহজ হয়। আল্লাহর নবীর শিক্ষাও তাই। তিনি এশার নামাজের আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। আল্লাহর নবীর নিয়মনীতির বাইরে কোনো কাজেই বরকত হবে না। তার দেখানো পথই মুমিনের চলার পথ।

‘মুমিন’ ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে সজাগ-সচেতন থাকতে হবে। আমরা যেহেতু মুসলমান, সুতরাং তার দেখানো পথেই আমাদের এগোতে হবে, কোনো বিকল্প পথে চললে বরকত আসবে না। আমাদের মনের কথা ও প্রকাশ্য কথায় কোনো গরমিল করা যাবে না। কারণ মহান আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক ভালো কাজের অণু পরিমাণ লিখে রাখছেন আবার অণু পরিমাণ খারাপও লিখে রাখছেন। দুনিয়ায় পার পেলেও আল্লাহর কাছে পার পাওয়া যাবে না। ঘুমানোর আগে অজু করে সারা দিনের কাজের হিসাব নিয়ে আত্মসমালোচনা করতে হবে। ভালো কাজের জন্য আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে আলহামদুলিল্লাহ এবং ভুলের জন্য আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে হবে। আয়তুল কুরসি, চারকুলসহ দৈনন্দিন পাঠের দোয়া-দরুদ পড়ে আল্লাহর নামে ঘুমাতে যেতে হবে শেষ রাতের ওঠার নিয়ত করে।

আসুন, আখিরাত সামনে রেখে দুনিয়ার কাজ সাজাই। ‘মুমিন’ হিসেবে আমার-আপনার কাজ দুনিয়া ও আখিরাতে জবাবদিহির আওতায় এনে চলার পথকে সাজাতে পারলে দুনিয়াতেই আল্লাহ আমাদের ইজ্জত দেবেন এবং আখিরাতে দেবেন নিয়ামতভরা জান্নাত।

মনে রাখতে হবে, মুমিন যা ইচ্ছা তা-ই করে না। মুমিনরা হয় আল্লাহতায়ালার খুব প্রিয়, আর মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা দুনিয়াকে আপন মনে করে না; বরং সামান্য সময়ের অবস্থানই মনে করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘দুনিয়া মুমিনের কারাগার আর কাফেরের জান্নাত।’সহিহ মুসলিম : ২৯৫৬

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, মুমিন যা মন চায়; তা করতে পারে না। দুনিয়ার প্রেমে প্রেমাসক্ত হয়ে মুমিন আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কোনো হুকুম পালন করতে পারে না। মুমিনরা পৃথিবীকে আবাসস্থল মনে করে না। তাই দুনিয়ার জীবনে আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসের মোহ তার থাকে না। বরং তার মন চির সুখের জান্নাতে যেতে ব্যাকুল থাকে। এজন্য সে তা লাভ করার জন্য কঠিন প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকে এবং সব বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্টকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বস্তুত আমরা মানুষকে কঠোর কষ্ট ও শ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।’ সুরা বালাদ : ৮

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION