রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নবাব শায়েস্তা খাঁ মসজিদ

মুহাম্মদ জিয়াউল হক:
বর্তমান মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছনে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ৩ গম্বুজবিশিষ্ট একটি প্রাচীন মসজিদ, লোকচক্ষুর অন্তরালে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিলালিপি অনুযায়ী মসজিদটি নবাব শায়েস্তা খাঁ নির্মাণ করেন। যতদূর জানা যায় ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লবের সময় মসজিদটি আগুন লেগে পুড়ে যায়। ফলে এর প্রকৃত সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। ব্রিটিশ সরকারের পূর্ত বিভাগ পুড়ে যাওয়া মসজিদটির পুনঃসংস্কার করেন।

এ মসজিদ সম্বন্ধে ‘তাওয়ারিখে ঢাকা’ গ্রন্থে লেখা আছে, নবাব শায়েস্তা খাঁ নির্মিত প্রাসাদগুলোর মধ্যে এই মসজিদটিই প্রথম। এ মসজিদ তার বাসভবন তৈরির সময় নির্মাণ করা হয়। বাবুবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পাড়ে মসজিদটি অবস্থিত। এটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট অত্যন্ত সুদৃঢ় মসজিদ, যা এখনো টিকে আছে। ওই মহল্লার লোকজনই এর দেখাশোনা করেন। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তারাই ব্যবস্থা করেন। প্রতি ওয়াক্তে আজান ও নামাজের জামাত হয়। নির্ধারিত একজন ইমামও রয়েছেন। মসজিদের অনতিদূরে বুড়িগঙ্গা নদী তীরে নওয়াব শায়েস্তা খাঁর বাড়ি ছিল। বাড়ির কোনো নিদর্শন এখন আর অবশিষ্ট নেই। শুধুমাত্র বাবুবাজার ঘাট থেকে পূর্বদিকে খাল পর্যন্ত একটি ভিত আছে। নবাব শায়েস্তা খাঁ এ ঘাটও নির্মাণ করেছেন।

আগে পাকুরতলী কাটরা নামে এলাকাটির নাম ছিল। পরে এটি বাবুবাজার নামে প্রসিদ্ধি পায়। ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খাঁর প্রথম সুবেদারির আমলে তিনি এটি নির্মাণ করেন। জানা যায়, শাহজাদী খানম ওরফে বিবি নামে শায়েস্তা খাঁর এক কন্যার কবর মসজিদের উত্তর পাশে ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই কবরটি সরিয়ে এখানে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করা হয়। শিলালিপি থেকে আরও জানা যায়, মসজিদটি পরিচালনা করার জন্য নবাব শায়েস্তা খাঁ অনেক জমি ও বাড়ি ওয়াকফ করেছিলেন।

আগুনে পুড়ে যাওয়ায় শিলালিপিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা বুঝা যায় তার অনুবাদ হলো- সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য এবং ধর্মভীরু লোকদের জন্য পরকাল অপেক্ষা করছে। (অতঃপর সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে,) যেহেতু আল্লাহর দয়া প্রত্যাশী, মঙ্গল কামনাকারী আমির উল-উমারা শায়েস্তা খাঁ ইমারত নির্মাণ করে ধর্মীয় বিধি অনুসারে এ পবিত্র স্থান ওয়াকফ করেছেন। তাই এই ইমারত থেকে প্রাপ্ত সমুদয় আয় মসজিদের সেবায় ও প্রয়োজনীয় নির্মাণকাজে ব্যয় করা অত্যাবশ্যক। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৭.৮ ফুট আর প্রস্থ ১৬.৮ ফুট। মসজিদটিতে আলঙ্কারিক খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ ছিল পাঁচটি। পরবর্তী সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দুটিকে জানালা বানানো হয়। পূর্ব দিকের দেয়ালে রাখা হয় তিনটি প্রবেশপথ। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব। মূল মেহরাবে রয়েছে চিনামাটির টুকরো দিয়ে কালেমা এবং ফুল ও পাতার অলংকৃত দৃশ্য। বর্তমানে মসজিদের পূর্বদিকে একটি বারান্দা আছে। যা পরবর্তী সময়ে সংযোজন করা হয়েছে। বাংলার সুবেদারখ্যাত একজন কিংবদন্তি শাসকের স্মৃতিবিজড়িত মসজিদটি-পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিহাসের খোরাক হয়ে থাকবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION