রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আত্মার পরিশুদ্ধির পথ

বিলাল হোসেন মাহিনী:
দেহ থেকে প্রাণবায়ু বের হয়ে গেলে সেই দেহটাকে মৃতদেহ বলে। দেহটার সমাপ্তি হয় কিন্তু জীবনের পরিসমাপ্তি হয় না। আত্মার মৃত্যু নেই। তাই আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে এর সম্পর্ক স্থাপনই হলো মুসলিম দর্শনের মর্মকথা। অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে তাসাউফ বলা হয়ে থাকে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো, এটি হলো কলব বা আত্মা।’ মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ নিয়ে চিন্তা-ফিকির ও সার্বক্ষণিক জিকির বা স্মরণে কলব কলুষমুক্ত হয়। আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কলবকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন করার পথটাই বাতলে দেয় তাসাউফ বা আত্মশুদ্ধি। আসুন আত্মশুদ্ধির পথসমূহ সংক্ষেপে জেনে নিই।

মহান আল্লাহর প্রতি ভয়মিশ্রিত ভালোবাসা : মহান আল্লাহর প্রতি ভীত-সন্ত্রস্ত থেকে নিখাদ ভালোবাসা অর্জন করা আত্মশুদ্ধির প্রধান লক্ষ্য। মুসলিম সাধকের প্রথম কাজ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিন, তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।’ -সুরা বাকারা : ১৬৫

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা : মুমিন-মুত্তাকি ব্যক্তি আল্লাহর পর তার রাসুলকেই (সা.) সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এমনকি তার নিজের জীবনের চেয়ে নবীজি (সা.)-কে বেশি ভালোবাসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তির ভেতর তিনটি গুণ থাকবে সে ইমানের মিষ্টতা লাভ করবে- ১. তার মধ্যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসা অন্যসব কিছু থেকে বেশি হবে, ২. কোনো মানুষের সঙ্গে তার ভালোবাসা হলে সেটাও আল্লাহর জন্যই হবে, ৩. ইমান গ্রহণের পর কুফরের দিকে ফিরে যাওয়া তার জন্য এমন অপছন্দের ও কষ্টকর হবে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দের।’ -সহিহ বোখারি : ৬৯৪১

মানবীয় সম্পর্কও আল্লাহর জন্য রাখা : মুমিনের মানবীয় সম্পর্কগুলো হবে আল্লাহর জন্য। সে আল্লাহর জন্য মানুষকে ভালোবাসবে এবং তার প্রতি ক্ষুব্ধ হবে। যেমন উল্লিখিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কোনো মানুষের সঙ্গে তার ভালোবাসা হলে সেটাও আল্লাহর জন্যই হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৯৪১

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দান করে, আর আল্লাহর জন্যই কাউকে কোনো কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকে সে স্বীয় ইমানকে পূর্ণ করল।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৬৮১

আল্লাহর জন্য অন্তর বিগলিত করা : আল্লাহর নামে মুমিনের হৃদয় বিগলিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর কম্পিত হয়, আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ইমানের জ্যোতি বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা রাখে।’ -সুরা আনফাল : ২

আল্লাহকে ভয় করা : মহান আল্লাহর ভয় মুমিনকে সব পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। সুতরাং আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করা আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের শরীর এতে শিউরে ওঠে, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে।’ -সুরা যুমার : ২৩

বেশি বেশি জিকির ও এস্তেগফার : জিকির ও এস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) মানবাত্মার রোগ-ব্যাধি দূর করে, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, (তারাই মুমিন) ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর জিকির করে।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৯১

আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকা : সব কিছু ছেড়ে আল্লাহর স্মরণ ও ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার অন্যতম উপায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করুন এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হোন।’ -সুরা মুজ্জাম্মিল : ৮

সর্বোপরি মুমিন আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা চাই, এমন আমল চাই, যা আমাকে আপনার কাছে পৌঁছে দেবে। হে আল্লাহ, আপনার ভালোবাসাকে আমার কাছে আমার নিজের থেকে, আমার পরিবার থেকে এবং সুমিষ্ট ঠাণ্ডা পানি থেকে প্রিয় করে দিন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪৯০

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION