শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মসজিদে বিয়ে পড়ানোর তাৎপর্য

মাওলানা আবদুল জাব্বার:
মুসলিম সমাজে মসজিদে বিয়ে পড়ানোর প্রচলন রয়েছে। ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মুসলমানদের কাছে বর্তমানে মসজিদে বিয়ে পড়ানোর আগ্রহ বেড়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে বিয়ের অন্ষ্ঠুান সম্পন্ন করার অনুমতি দিয়েছে সৌদি আরব।

হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশটির বিবাহবিষয়ক কর্মকর্তা মাসুদ আল জাবরি বলেছেন, ‘ইসলামে মসজিদে বিয়ে পড়ানোর অনুমোদন রয়েছে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে এক সাহাবির বিয়ে পড়িয়েছেন। পবিত্র মসজিদে বিয়ে পড়ানোর রীতি মদিনাবাসীর মধ্যে অনেক আগ থেকেই রয়েছে।’

তবে এ ক্ষেত্রে তারা বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে, জোরে শব্দ করে মুসল্লিদের মনোযোগ নষ্ট করা যাবে না এবং কফি, মিষ্টিসহ অন্যান্য খাবার বেশি পরিমাণে আনা যাবে না।

ইসলামি বিধান অনুযায়ী মসজিদে বিয়ে পড়ানো বা বিবাহ সম্পন্ন করা মুস্তাহাব, জরুরি কিছু নয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতেরও অংশ নয়। তবে হাদিসে মসজিদে বিয়ের বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। আহমদ ইবনু মানি (রহ.) হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিবাহের ঘোষণা দেবে এবং তা মসজিদে সম্পন্ন করবে। আর এ উপলক্ষে দফ বাজাবে। -ইবনে মাজাহ : ১৮৯৫

মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে আলেমরা বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগ, নবী কারিম (সা.) -এর মাদানি জীবন, (মদিনায় বসবাসের ১০ বছর সময়কাল) চার খলিফা ও সাহাবিদের জীবনকালে মুসলমানেরা নামাজ-ইবাদত ছাড়াও মসজিদে যেতেন। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করে সেখানে খাবার খাওয়া, ধর্মীয় আলোচনা করতেন। মসজিদভিত্তিক সমাজব্যবস্থার বাস্তবচিত্র ছিল তৎকালীন সময়ে। আলেমদের মতে, মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে এক্ষেত্রে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

যেহেতু বিয়ে ইবাদত ও মসজিদ বরকতময় স্থান, আর মসজিদে জনসাধারণের উপস্থিতি থাকে। তাই খুব সহজেই বিয়ের ব্যাপারটি সবাই জানতে পারে- যেটা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়। তবে এটা অপরিহার্য বা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় যে প্রতিটি বিয়ের আকদ মসজিদেই হতে হবে। দুই পক্ষের সুবিধা অনুযায়ী যে কোনো জায়গায় বিয়ের আকদ হতে পারে।

মসজিদে বিয়ে হওয়ার কারণে যদি বিয়ের ইসলামের নির্দেশনাবিরোধী আচার অনুষ্ঠান কমানো সম্ভব হয়, তাহলে বিয়ে মসজিদেই করা উচিত। বরকতময় স্থান, জনসাধারণের উপস্থিতি ও দোয়ার সুযোগ ইত্যাদি কারণে মসজিদে বিয়ে হওয়া অবশ্যই পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব। কিন্তু মসজিদে বিয়ে হওয়াকে অপরিহার্য বা মুআক্কাদা সুন্নাত মনে করা, মসজিদের বাইরে বিয়ে হওয়াকে নিন্দনীয় মনে করা সমীচীন নয়।

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব

সভ্য পৃথিবীর জন্য পবিত্র ও বৈধপন্থায় বিবাহবন্ধনের গুরুত্ব অপরিসীম। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’-সুরা আর রুম : ২১

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন।’ -সুরা নুর : ৩২-৩৩

বিয়ের প্রতি আগ্রহী করতে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে নেয়, কেননা তা চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে।’ -সহিহ বোখারি: ৫০৬৬

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’-মুসতাদরাক হাকিম : ২৭২৮

সহজ ও অনাড়ম্বর বিয়ে

বিয়ের বিষয়টিকে সহজ ও অনাড়ম্বর করতে উৎসাহিত করা হয়েছে ইসলামে। যেই বিয়েতে খরচ যত কম হবে, সে বিয়েকে তত বরকতপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে হাদিসে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’-মুসনাদে আহমাদ : ২৪৫২৯

সহজ-স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন বিয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সা.) বরকতের দোয়া করেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রা.)-এর গায়ে হলদে চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, খেজুর বিচির পরিমাণ সোনার মেহরের বিনিময়ে আমি এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। নবী কারিম (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন। ওয়ালিমা করো, একটি বকরি দ্বারা হলেও। -ইবনে মাজাহ : ১৯০৭

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION