শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
মাওলানা আবদুল জাব্বার:
জীবন ধারণের জন্য সব মানুষকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে হালাল ও হারাম সম্পর্কে অবগত থাকা আবশ্যক। যেন হালালকে হারাম থেকে পার্থক্য করে হালালকে গ্রহণ আর হারামকে বর্জন করা যায়। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এজন্যই হালাল জীবিকার উপায় অবলম্বন করা ওয়াজিব। কেননা হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে জীবনযাপন করলে ইবাদতের কোনো সওয়াব হয় না। হারাম উপার্জন একজন মুসলমানের দুনিয়ার জীবনকে কলুষিত করে এবং পরকালীন জীবনের জন্য শাস্তি বয়ে আনে। দুনিয়ার জীবনকে কলুষমুক্ত, ইবাদতের সওয়াব অর্জন এবং পরকালীন জীবনে আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে জান্নাতে যাওয়ার জন্য হালাল উপার্জনের বিকল্প নেই।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৬৮
আল্লাহতায়ালা নিজে পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। যাদের উপার্জনের পুরোটা হারাম কিংবা হালালের সঙ্গে হারামের ঈষৎ সংমিশ্রণ রয়েছে, তাদের খাওয়া-দাওয়া, পোশাকপরিচ্ছদ সবকিছুতেই হারাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সবকিছুতে হারামের এই অন্তর্ভুক্তির কারণে শরীরের রক্ত-মাংসেও হারাম মিশে যায়। হারামের সংমিশ্রণে কলুষযুক্ত এমন বান্দার ইবাদত পবিত্র সত্তা মহান আল্লাহ কীভাবে গ্রহণ করবেন?
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ দিয়েছিলেন রাসুলদের। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদাররা, তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো। যেগুলো আমি তোমাদের রুজি হিসেবে দান করেছি। অতঃপর হজরত রাসুল (সা.) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল নিয়ে ধূলি-ধুসরিত হয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম। হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?’ সহিহ মুসলিম ২০১৫
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে যাওয়ার জন্য খুব বেশি আমলের প্রয়োজন নেই। বরং কারও উপার্জনে যদি হারামের কোনো সংমিশ্রণ না থাকে, তাহলে মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর বিধিনিষেধ মেনে একনিষ্ঠভাবে অল্প আমল করলেই আল্লাহতায়ালা জান্নাত দান করবেন।
কারও উপার্জনে যদি হারামের সংমিশ্রণ থাকে, তাহলে অনেক আমলও পরকালে কোনো কাজে আসবে না। তাই হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে সবচেয়ে বেশি। আমাদের মতো মিশ্র অর্থনীতির দেশগুলোতে হালালকে হারাম থেকে পৃথক করার জন্য সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর নয়তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও হারামের সংমিশ্রণ হয়ে যাবে, যা পরকালের জীবনকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ভযেস/আআ