শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
মুফতি আইয়ুব নাদীম:
আল্লাহতায়ালা জিন ও মানবজাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত বলতে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি এই কয়েকটি বিষয়কে বুঝায় না; বরং ইবাদত হলো যাপিত জীবনে প্রতিটি কাজকর্ম এবং প্রতিটি বিষয় কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী করা। আর ইবাদত কবুলের জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।
ইবাদত আল্লাহর জন্য হওয়া : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সঙ্গে আর কাউকে শরিক করো না।’ (সুরা নিসা ৩৬) আরেকটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘অথচ তাদের এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়নি।’ (সুরা তাওবা ৩১)
ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা : ইখলাসের শাব্দিক অর্থ একনিষ্ঠতা। ইখলাস হলো ইবাদতের প্রাণ। প্রাণ ছাড়া যেমন ব্যক্তির মূল্য নেই, ঠিক তেমনি ইখলাস ছাড়া ইবাদতের কোনো মূল্য নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, আমাকে তো আদেশ করা হয়েছে, যেন আল্লাহর ইবাদত করি তার আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।’ (সুরা জুমার ১১) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুয়াজ (রা.)-কে বললেন, ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করো, অল্প আমলই যথেষ্ট হবে। (শুআবুল ইমান)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মরণ, সবই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তার কোনো শরিক নেই। আর এ ব্যাপারেই (অর্থাৎ শরিক না করার ব্যাপারে) আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’
(সুরা আনআম ১৬২-১৬৩)
হালাল পানাহার করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করো এবং যেই আল্লাহর প্রতি তোমরা ইমান রাখো তাকে ভয় করে চলো।’ (সুরা মায়েদা ৮৮) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাবের (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে দেহের মাংস হারাম সম্পদ দ্বারা গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন। (মেশকাত) অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে, তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে বলেন, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাবার হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে। তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কীভাবে কবুল হবে? (সহিহ মুসলিম)
রিয়ামুক্ত হওয়া : রিয়া অর্থ লোক দেখানো ইবাদত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদকাকে সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না।’ (সুরা বাকারা ২৬৪) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুব্বুল হুজন’ থেকে তোমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ‘জুব্বুল হুজন’ কী? তিনি বললেন, ‘জুব্বুল হুজন’ হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকা। এ থেকে খোদ জাহান্নামও প্রতিদিন ১০০ বার পানাহ চায়। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কে তাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, ঐসব কারি, যারা লোকদের দেখানোর জন্য আমল করে। (তিরমিজি)
অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রিয়াকে ছোট শিরক বলেছেন। তিনি বলেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে ততটা ভীত নই। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া বা লৌকিকতার চিন্তা। আল্লাহ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ)
সঠিক পদ্ধতিতে হওয়া : ইবাদত মহান আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়া আবশ্যক। মনগড়া ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ ও তার রাসুল কোনো বিষয়ে ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) এখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা আহজাব ৩৬) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখছো, সেভাবে নামাজ পড়ো। (সহিহ বুখারি)
অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজের যাবতীয় বিষয় আমার কাছ থেকে গ্রহণ করো। (সহিহ মুসলিম) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত শর্তগুলো মেনে যথাযথভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।
ভয়েস/আআ