বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন
মাওলানা রফিকুল ইসলাম:
মানবসেবা মহান সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম মাধ্যম। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে যেমন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় এবং পাপমুক্ত হওয়া যায়, তেমনি মানবসেবার মাধ্যমেও তার সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। এজন্যই মহান আল্লাহ বান্দাদের উদ্দেশ্য করে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই সৎকর্ম নয়; বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ওই ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতামণ্ডলী, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের ওপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য।’ (সুরা বাকারা ১৭৭)
মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনোরকম বিনিময় ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রক্তদান করাও একটি মহান ইবাদত। কেউ যদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রক্তদান করে, তাহলে সে মহান আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদান পাবে ইনশাআল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল।’ (সুরা মায়েদা ৩২)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘কুকুরকে পানি পান করিয়ে এক ব্যভিচারী নারী ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি)
কুকুর তো হলো নিকৃষ্ট প্রাণী। আর মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। সুতরাং মানুষের জীবন বাঁচানো কতটা ফজিলতের হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় তাদের পাশে দাঁড়ালে দুনিয়া ও আখেরাতে মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। মানুষের দোয়া পাওয়া যায়। আল্লাহর কাছে এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবনদান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদের উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহাল ৯৭)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক কোনো ইমানদারের দুনিয়া থেকে কোনো মুসিবত দূর করে দেবে, আল্লাহতায়ালা বিচার দিবসে তার থেকে মুসিবত সরিয়ে দেবেন। যে লোক কোনো দুস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে লোক কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে মহান আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন।’
(সহিহ মুসলিম)
তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, এ সময় রক্ত দিলে রক্তদাতার কোনো সমস্যা হবে কি না। যদি রক্তদাতা রক্ত দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে উপযুক্ত থাকে এবং রক্তদানের বিনিময় গ্রহণ না করে তাহলে জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে রক্ত দিতে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে এর বিপরীত হলে রক্তদান করা জায়েজ হবে না। অর্থাৎ রক্তদাতার বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে অথবা রক্তদানের বিনিময় গ্রহণ করলে। অতএব মুমিনের উচিত হলো, একান্ত আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করা।
ভয়েস/আআ