বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য

মাওলানা আশরাফুল ইসলাম:
ওয়াদা শব্দের অর্থ অঙ্গীকার, প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি। পরিভাষায় বলতে গেলে, কারও সঙ্গে কোনো অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন বা রক্ষা করার নাম ওয়াদা। সামাজিকভাবে প্রকৃত মানুষ চেনা যায় প্রতিশ্রুতি রক্ষার মাধ্যমে। প্রতিশ্রুতি রক্ষার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সমাজে সম্মানী ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। মানুষের চরিত্রগত দিক বোঝা যায় প্রতিশ্রুতি রক্ষার মধ্য দিয়ে। আর মুমিন ব্যক্তি কখনো তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুমিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

আমাদের সমাজে কিংবা আশপাশে এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দেন না; নানা কারণে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে থাকেন। এতে সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায় এবং অবিশ্বাসযোগ্য মানুষ হিসেবে বিবেচিত হন। সমাজে সে যত সম্মানী ব্যক্তি হোক না কেন, সবাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ (প্রতিশ্রুতি) পূরণ করো।’ (সুরা মায়েদা ১)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর, সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং পাকাপাকি কসম করার পরে তা ভঙ্গ করো না। আর এই ব্যাপারে তো তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা নাহল ৯১)

পবিত্র কোরআনে যেমন ওয়াদা পালনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি হাদিসেও ওয়াদা পালনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ওয়াদা পালনের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে নবী কারিম (সা.)-এর আচরণ। তিনি ওয়াদা রক্ষায় তিন দিন একই স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের আগে একদা আমি তার কাছ থেকে কেনাকাটা করি। যার কিছু মূল্য পরিশোধ করতে বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলাম যে, আমি অবশিষ্ট দাম নিয়ে তার নির্ধারিত স্থানে এসে হাজির হবো। আমি এই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পরে আমার স্মরণ হলো। এসে দেখলাম তিনি সেই নির্দিষ্ট স্থানে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি আমাকে খুব বিপদে ফেলেছিলে। আমি তিন দিন ধরে তোমার অপেক্ষা করছি। (সুনানে আবু দাউদ)

বর্ণিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ওয়াদা পালনে কতটা আন্তরিক ছিলেন। এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। বলতে দ্বিধা নেই, আমরা হাসি-তামাশার ছলে অনেক ওয়াদা ভঙ্গ করে ফেলি। আমরা ছোট কিংবা বড়দের দুষ্টামির ছলে বলি, তোমাকে আমি এটা দেব, ওটা দেব। কিন্তু পরে আর তা দেই না। এটা যে ওয়াদা ভঙ্গ করার মতো কাজ, তাও মানি না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন। তখন রাসুল (সা.) আমাদের ঘরে বসেছিলেন। মা বললেন, এদিকে এসো। তোমাকে আমি কিছু দেব। তখন রাসুল (সা.) আমার মাকে বললেন, তুমি তাকে কী দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছ? তিনি বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছা করেছি। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, সাবধান! যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তবে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা কথা বলা লেখা হতো। (সুনানে আবু দাউদ)

সুতরাং আমাদের ব্যক্তি জীবনে হাসি-তামাশা কিংবা দুষ্টামির ছলে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এর ভয়াবহতা কঠোর। ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকের আলামত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি ১. কথা বললে মিথ্যা বলে। ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। ৩. আমানত রাখলে খেয়ানত করে। (সুনানে তিরমিজি)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION