বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
জিকির উল্লাহ জিকু:
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর। এঘটনায় ক্লিনিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন সদস্যরা। এসময় আরও ৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) ভোর ৪টারদিকে উখিয়ার কুতুপালং লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রীজ এলাকা তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ নিয়ে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন ১৪নং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ‘এপিবিএন’র অধিনায়ক মো: নাইমুল হক।এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
গত ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টারদিকে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়। ঘটনার পরপরই ১৪ এপিবিএন পুলিশ মাননীয় আইজিপি গ্যারের নির্দেশক্রমে ছায়াতদন্ত পরিচালনা করে। ১৪ এপিবিএন পুলিশ ইতোমধ্যে ৪ জন আসামী গ্রেফতার করে। তন্মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইলিয়াস বিজ্ঞ আদালতে কাঃ বিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
অন্যান্য আসামীদের মধ্যে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আজিজুল হক’কে শনিবার ভোররাতে লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রীজ এলাকা হতে ১টি ওয়ান শুটারগান এবং ১ বাউছ ভাজ্য কার্তুজসহ গ্রেফতার করা হয়।
এসময় মোঃ বশিদ @ মুরশিদ আমিন, পিতা-আব্দুল মাবুদ, ব্লক-ডি-৮, ক্যাম্প- ১/ইস্ট, ২। মোঃ আনাছ, পিতা-ফজল হক, ব্লক-বি, ক্যাম্প-১/ওয়েস্ট ৩। নূর মোহাম্মদ, পিতা-নুর সালাম, ব্লক-বি, ক্যাম্প-১/ওয়েস্ট’দের গ্রেফতার করা হয়।
কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ধৃত আসামী আজিদুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন ২৭/০৯/২০২১খ্রিঃ রাত অনুমান ১০ টারদিকে নাম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। উক্ত মিটিং এ ঝিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ধৃত আসামী আজিজুল হকসহ আরও ৪ জন উপস্থিত ছিল। তথাকথিত দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে উক্ত মিটিং এ আলোচনা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছে। তাকে থামাতে হবে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজ এর পর মাস্টার মহিবুল্লাহ তার শেষে ফিরে গেলে ধৃত আসামী মুরশিদ আমিন তাকে নিজ শেষের বাইরে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলে এবং কিছু লোক তার সাথে অফিসে কথা বলবে মর্মে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়।
তারপর ধৃত আসামী মুরশিদ আমিন মহিবুল্লাহর নিজ অফিসে অবস্থান সম্পর্কে যুক্ত অপর দুই আসামী মোঃ আনাছ (৩২) নুর মোহাম্মদ এর নিকট নিশ্চিত করে অফিস এলাকা দ্রুত ত্যাগ করে। এ দুই জনই মাস্টার মহিবল্লাহ কে হত্যা করার জন্য দুর্বৃত্তদের ঘটনাঙ্কুলে আসার সংকেত প্রদান করে। দুর্বৃত্তদের দলটি ১/ডব্লিউ সিয়াইসি অফিসের পাশে আরটিসিসি অফিস সংলগ্ন সি/৮ ব্লকের মধ্য দিয়ে চিকন গলি ব্যবহার করে কুইয়া বাগানের (পেঁপে বাগান) দিকে একটি শেতে আগে থেকেই অবস্থান করছিল। ধৃত আসামীদের নিকট হতে সংকেত পাওয়ার পর পূর্ব হতে অবস্থান নেওয়া মুত্তদের দলটি ক্যাম্প ১/ইন্ট এর ডি/৮ ব্লকের রাস্তা ব্যবহার করে মাস্টার মহিবুল্লাহ’র অফিসে চলে আসে। এ সময় মুখোশধারী ৭ জন তাদের সঙ্গ নেয়। দুর্বৃত্তনের দলটির মঞ্চ থেকে ০৩ জন অস্ত্রধারী মহিবুল্লাহ’র অফিস কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় ধৃত আসামী মোঃ আনাছ এবং নূর মোহাম্মদ অপর অস্ত্রধারী আসামী আজিদুল হক ও অপর একজন অন্তযারীসহ মোট ৪ জন মহিবুল্লাহর অফিস কক্ষের প্রবেশ দরজায় অবস্থান নেয়। ঘটনার সময় মাস্টার মহিবুল্লাহ ১০/১৫ ডান লোকসহ তার অফিস রুমে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেছিলেন। এ সময় অফিস কক্ষে প্রবেশকারী অন্তধারীদের মাঝে একজন মাস্টার মহিবুল্লাহকে বলেন “মহিবুল্লাহ উঠ”। মহিবুল্লাহ চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালে প্রথম দুর্বৃত্ত একটি দ্বিতীয় দুর্বৃত্ত ২টি এবং সর্বশেষ দুর্বৃত্ত একটি সহ মোট ৪ টি গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ভিকটিম মাস্টার মহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দুরকারী দলটি হত্যাকান্ড সংগঠনের পর ধৃত আসামী আজিজুল হক অপর দুই ধৃত আসামী মোঃ আনাছ এবং নূর মোহাম্মদসহ মহিদুল্লাহ’র অফিস সংলগ্ন পিছনের রাস্তা দিয়ে পেঁপে বাগান হয়ে পালিয়ে যায়। হত্যা কাতেয় পরে দুর্বৃত্তরা পুলিশের গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায় এবং সকলেই নিজ নিজ মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। উল্লেখ্য যে, কিপিং স্কোয়াডে ৫ জন অস্ত্রধারী ছিল।
উত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সংগঠনের পরপরই এপিবিএন পুলিশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করে এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বর্ণিত আসামীদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য এপিবিএন এর অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ভয়েস/আআ