শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে ময়মনসিংহ: পরে জনপ্রতিনিধি

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

ভালোবাসার টানে নিজের দেশ ছেড়ে ১০ বছর আগে বাংলাদেশে ছুটে আসেন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা। ছিলেন ফিলিপাইনের নাগরিক। পড়াশোনা করেছেন সেখানকার নামি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ বিভাগে। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের পর সিঙ্গাপুরে চাকরি করতে গিয়ে পরিচয় হয় বাংলাদেশি তরুণ জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম, এরপর বিয়ে।

আর ভালোবাসার টানে নিজের দেশ ছেড়ে ১০ বছর আগে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। সংসার পাতেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁয়ে। এখানেই শেষ নয়, সবাইকে চমকে দিয়ে এখন তিনি জনপ্রতিনিধি।

দ্বিতীয় ধাপের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েই করেছেন বাজিমাত। প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে জেলাজুড়ে।

সরেজমিনে রাধাকানাই ইউনিয়নের দবরদস্তা গ্রামে জুলহাস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৮ সালে ফিলিপাইনের Mindanao State University থেকে তিনি ফিশারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরিতে যোগ দেন সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে। সেখানেই চাকরি করতেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার যুবক জুলহাস।

তিনি আরও জানান, সে সময় জুলহাসের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। বছর দুয়েক পরে নিজেদের দেশে ফিরেন তারা। তবে তাদের মধ্যে চলতে থাকে যোগাযোগ। সিদ্ধান্ত নেন আবদ্ধ হবেন বিয়ের বন্ধনে। সে জন্য ২০১০ সালের শেষের দিকে জুলহাস পাড়ি জমান ফিলিপাইনে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পেট্রিয়াকা স্বামীর হাত ধরে চলে আসেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায়।

জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা জানান, ১০ বছর হয়ে গেছে আমি এখানে এসেছি। বাবা-মা ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়েছে। শুরুতে বেশ বিপাকে ছিলাম। কারণ আমি বাংলা বলতে পারতাম না। আর এখানকার মানুষ ইংরেজি বুঝে না। তবে আস্তে আস্তে শিখার চেষ্টা করেছি। এখন আমি সবার কথাই মোটামুটি বুঝি। আমিও কিছু কিছু বলতে পারি।

নির্বাচন করার কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না জানিয়ে এ নারী আরও বলেন, আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইনি, ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু এলাকার মানুষ জোর করে বলেছে নির্বাচন করতে। তারা আমাকে খুব ভালোবাসে, তাই তাদের কথা রাখতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। প্রার্থী হওয়ার পর অনেক কষ্ট করেছি। সকালে নাস্তা খেয়ে প্রচারণায় বের হয়ে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেছি। কিন্তু জয় পাওয়ার সব কষ্ট ঘুচে গেছে।

একটা সময় জুলহাস মন জয় করেছিলেন ফিলিপাইন তরুণী পেট্রিয়াকার। সে কারণেই তো সব ছেড়ে তিনি পেট্রিয়াকা থেকে পরিণত হয়েছেন জেসমিন আক্তারে। তিনি রাজনীতি বুঝেন না, নন বাঙালিও তবে ঠিকই জয় করেছেন এলাকাবাসীর মন। তাইতো এর প্রতিদান ব্যালটেই দিয়েছেন তারা।

মাইক প্রতীক নিয়ে নবনির্বাচিত এ ইউপি সদস্য পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৭ ভোট। আর মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এমন ভালোবাসায় আপ্লুত একসময়ের ভীনদেশি এ নারী। খুশি তার স্বামী জুলহাসও।

জুলহাস উদ্দিন বলেন, আমার মনের পাশাপাশি আমার স্ত্রী এলাকাবাসীর মনও জয় করতে পেরেছে। তাদের জন্যই নির্বাচন করেছে এবং তারাই জয়লাভ করিয়েছে। আমার আশা সবার সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থেকে সাধারণ মানুষের উপকার করে যাবে পেট্রিয়াকা।

ফুলবাড়ীয়া উপজেরার রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে এলাকার পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় খুশি সবাই। বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি করেছেন আনন্দ মিছিলও।

সুফিয়া খাতুন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, তিনি নিজের দেশ, পরিবার ছেড়ে এখানে এসে আমাদেরকে আপন করে নিয়েছেন। আমরাও তাকে অনেক পছন্দ করি। সেজন্যই তাকে আমরা ভোট দিয়ে পাস করিয়েছি। তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।

প্রেমের টানে যুগে যুগে বাঁধা পেরিয়েছে মানুষ। জুলহাস-পেট্রিয়াকার ভালোবাসাও তার ব্যতিক্রম নয়। ১০ বছরের সুখের সংসারে পেট্রিয়াকা এখন দুই ছেলে-মেয়ের জননী। মানিয়ে নিয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশ। অভ্যস্ত হয়েছেন বাংলা ভাসাতেও।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION