রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সম্পদ উপার্জন ও ব্যয়

মাহমুদ হাসান ফাহিম:
সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় মানুষের অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে যেন ভারসাম্য ক্ষুণœ না হয়, সেজন্য ইসলাম হালাল-হারামের সুস্পষ্ট সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আর অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আয়-উপার্জন ও ব্যয়ের নিয়ন্ত্রণ। ইসলাম মানুষকে অবাধ ও যথেচ্ছভাবে সম্পদ অর্জনের সুযোগ দেয়নি, তেমনি হালালভাবে উপার্জিত অর্থসম্পদ যথেচ্ছ ব্যয় করার অধিকারও কাউকে দেয়নি। ফলে একদিকে যেমন আয়ের ব্যবস্থা হয় বহুমাত্রিক, অন্যদিকে ব্যয়ের ক্ষেত্র থাকে অপচয় ও অপব্যয়মুক্ত।

সম্পদের উপার্জন

ইসলামে হালাল আয়-উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জন বলতে বৈধ উপার্জনকে বোঝায়। হালাল উপার্জনের মধ্যে রয়েছে মানুষের বিপুল কল্যাণ। হারাম বা অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ অপবিত্র বিধায় তাতে রয়েছে মারাত্মক অকল্যাণ। পবিত্র কোরআনে হালালকে উত্তম ও পবিত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তা ভক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু খাও, যা আমি তোমাদের জীবিকারূপে দান করছি।’ সুরা বাকারা : ১৭২

আল্লাহতায়ালা রিজিকদাতা। রিজিক অন্বেষণের দায়িত্ব তিনি বান্দার ওপর অর্পণ করেছেন। নিজ নিজ যোগ্যতা ও সামর্থ্যানুযায়ী জীবিকার জন্য পরিশ্রম ও চেষ্টা-তদবির করা সক্ষম প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘হালাল জীবিকা অন্বেষণ করা ফরজ বিধানগুলোর মতো একটি ফরজ।’ বায়হাকি শোয়াবুল ইমান

হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জনের খাতগুলো

এক. হালাল উপার্জনের প্রথম উপায় কৃষিকাজ। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত বর্ণিত হয়েছে। নবী-রাসুলরা কৃষিকাজ করে জীবিকা উপার্জন করেছেন।

দুই. ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে হালাল ঘোষণা করেছে। কোরআন-হাদিসে ব্যবসার প্রতি বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে ইসলাম এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ ধোঁকা-প্রতারণা, ঠকবাজি, জুয়া, মাপে কম দেওয়া, ভেজাল মেশানো কিংবা পণ্যদ্রব্য আটক করে লোকদের কষ্ট দেওয়া, অহেতুক পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি অসৎ কাজকে হারাম ঘোষণা করেছে।

তিন. চাকরি করা নিঃসন্দেহে ইসলামে জায়েজ। তবে সুদি কারবারের প্রতিষ্ঠান, মদ উৎপাদনের কারখানা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের ইমান ও আমল নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গঠিত প্রতিষ্ঠান, নৃত্যশালা, থিয়েটার অশ্লীল ছায়াছবি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতেও চাকরি করা জায়েজ নয়। একজন মুসলমান কখনো হারাম গ্রহণ করতে পারে না। সে কারণেই ইসলাম মানুষকে অবাধ ও যথেচ্ছভাবে সম্পদ কামাইয়ের সুযোগ দেয় না।

চার. আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্যেরে ক্ষেত্রে ব্যাংক-বীমা, স্টক এক্সচেঞ্জ, শেয়ারবাজার, হুন্ডি ও বন্ডসহ ইত্যাদির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যারা এসবে জড়িত আছেন, তাদের দেখতে হবে, এসবের সঙ্গে সুদের ভূমিকা কেমন! যদি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ন্যূনতম সংযোগ ও সম্পৃক্ততা থাকে তবে তাতে চাকরি করা জায়েজ হবে না। কেননা ইসলাম সুদকে চিরতরে হারাম করে দিয়েছে।

পাঁচ. মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ইমলাম চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও জবরদখল হারাম করেছে। অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জনকারী শুধু আল্লাহর রহমত থেকেই বঞ্চিত থাকবে এমন নয়, হারাম ভক্ষণের পরিণতি খুব ভয়াবহ।

ইসলামে ব্যয়

ইসলাম শুধু হালালভাবে উপার্জনের কথাই বলে না, হালাল পন্থায় ব্যয় করার প্রতি উৎসাহিতও করে। হালালভাবে উপার্জিত সম্পদ যখন যেখানে ইচ্ছা ব্যয় করা যাবে না। ইসলাম ব্যয়ে উৎসাহিত করলে অপচয় ও অপব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ সম্পদ মানুষের কাছে রবের দেওয়া আমানত। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অবকাশ নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।’ সুরা বনী ইসরাইল : ২৭

সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্র

এক. পিতা-মাতার জন্য ব্যয়। পিতা-মাতা সন্তানের সম্পদের হকদার। ধন-সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে আগ্রাধিকার দিয়েছে ইসলাম। সেই সঙ্গে অন্যান্য খাতও উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘লোকে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য) তারা কী ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করো তা পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য হওয়া চাই। আর তোমরা কল্যাণকর যে কাজই করো না কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত।’ সুরা আল বাকারা : ২১৫

দুই. সম্পদের জাকাত আদায়। নেসাব পূর্ণ হলে বছরে একবার সম্পদের জাকাত আদায় করতে হয়। নগদ অর্থসম্পদ হোক চাই সোনা-রুপা ইত্যাদি। জাকাত ফরজ হওয়ার বিষয়টি সুরা বাকারার ১১০ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

তিন. স্ত্রী-সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণে ব্যয়। স্ত্রীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্ত্রীর মোহর আদায় করাও স্বামীর ওপর ফরজ। সন্তান বালেগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রয়োজনীয় সব ব্যয় নির্বাহ করা পিতার দায়িত্ব। বিয়ের আগ পর্যন্ত কন্যাসন্তানের ভরণপোষণও পিতার দায়িত্বে বর্তাবে।’ সুরা বাকারা : ২৩৩ ও ২৩৬

চার. আত্মীয়স্বজনের জন্য ব্যয়। মানুষ জন্মসূত্রে ও বৈবাহিক সূত্রে একে অপরের আত্মীয়। মাতা-পিতার হক আদায়ের পর অন্যান্য আত্মীয়ের হক আদায় করতে হবে। সমাজের দরিদ্র-নিঃস্ব, এতিম-অনাথ, বিধবাদের প্রতি নফল ব্যয়ের নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে এবং বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে দান-খয়রাতের প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করে। সুরা বাকারা : ১৭৭

সম্পদ আমানত

অর্থ-সম্পদ মানুষের কাছে আল্লাহর দেওয়া পবিত্র আমানত। উপার্জিত সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আর্থিক লেনদেনকে তিনি বৈধ করেছেন। যেন হাতে থাকা সম্পদ ব্যয় করতে করতে নিঃশেষ না হয়ে যায়। মানুষের সম্পদে ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়ের দিকগুলো কাজে লাগিয়ে তারা যেন শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন, এ লক্ষ্যে ইসলাম মানুষকে সততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি অসাধুতার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মেনে চলা অনিবার্য কর্তব্য। আর প্রকৃত সফলতা তখনই অর্জন করা সম্ভব, যখন আমাদের পূর্ণ চেষ্টা ও সামর্থ্য ব্যয় করে ইসলামের অনুশীলন করতে পারব।

ভয়েস/আআ/দেশরূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION