রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মাতৃদুগ্ধপানে ইসলামের বিধান

ড. মাওলানা কামরুল ইসলাম বিন কাসেম:
শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ অপরিহার্য। কারণ মায়ের বুকের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ ও উপাদানযুক্ত আল্লাহ প্রদত্ত এমন তৈরি খাবার, যা শিশু সহজেই হজম করতে পারে এবং সহজেই শিশুর দেহ বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাইতো আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের পর তার মাকে নির্দেশ দেন, ‘আমি মুসার মায়ের অন্তরে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলাম, তাকে দুধ পান করাও।’ -সুরা কাসাস : ৭

জন্মের পর শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার হলো- মায়ের বুকের দুধ। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকে দুধ সৃষ্টি করে রাখেন। যা হালকা মিষ্টি ও উষ্ণ; যা নবজাতক শিশুর নাজুক অবস্থার জন্য বিশেষ উপযোগী।

নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ -সুনানে আবু দাউদ

চিকিৎসা বিজ্ঞান শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দানের ব্যাপারে যে গুরুত্বের কথা বলে, সে গুরুত্বের কথা ইসলাম আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেই ঘোষণা করেছে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমেই নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বিধান ঘোষণা করেছেন। আল্লাহতায়ালা সুরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে। অতঃপর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে।’ -সুরা বাকারা : ২৩৩

পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোচনা থেকে বুঝা যায়- শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময়সীমা হলো, জন্মের পর থেকে চান্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী পূর্ণ দুই বছর। শিশুর প্রয়োজনে এ সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো যেতে পারে। আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, ‘তাকে গর্ভধারণ করতে ও দুধ ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস।’ -সুরা আহকাফ : ১৫

মা ও শিশুর শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞান নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকার কথাও বলেছে। তাছাড়া হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের দেহপসারিণী (ব্যভিচারী নারী) ও পাগল মহিলার দুধ পান করানো থেকে দূরে রাখো।’ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে জানা যায় যে, দেহপসারিণীর (ব্যভিচারী নারীর) দুধ পানে ‘হেপাটাইটিস বি’ ও ‘এইডস’-এর মতো ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে শিশু। তাই ক্ষেত্রবিশেষ শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে।

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করালে শিশু ও মায়ের মধ্যে এমন একটি মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, যা চিরস্থায়ী। মুসলিম উম্মাহর সব শিশুর মায়ের উচিত কোরআন মাজিদের হুকুম অনুযায়ী তার সন্তানকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করানো। পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করানোর পর প্রয়োজনে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস শিশুকে দুধ পান করানো যেতে পারে।

মায়ের দুধ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত। কারণ, অনেক মায়ের সন্তান হওয়ায় পরও শিশুকে পান করার মতো পরিমাণ দুধ হয় না। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃদুগ্ধ নবজাত শিশুর জন্মগত অধিকার। যাতে কোনো কারণে এটি খর্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা ‘আজকের শিশু, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’। অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ দানকে উন্নয়ন ও সহায়তা করা।

মায়ের দুধের অনন্য ভূমিকার কথা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান মায়ের দুধ খাওয়ানোর ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করছে। অনেক মা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় বিশ্বের মাত্র ৪১ শতাংশ শিশুকে। এখনো হাজার হাজার মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করার পরিবর্তে বাজারের কৃত্রিম দুধ পান করান। এতে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে শিশুর। মায়ের দুধ হচ্ছে শিশুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার এবং পানীয়। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ মায়ের দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধই খাবে শিশু, এমনকি পানিও খাওয়ানো যাবে না। এরপর পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯৯২ সাল থেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাতৃদুগ্ধ পানে শিশু যেমন সুস্থ-সবল হয়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি উপকৃত হন প্রসূতি নিজেও।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION