রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইসলামে সামাজিক ও জননিরাপত্তা

বিলাল হোসেন মাহিনী:
নানাবিধ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্ব। খাদ্য (নিত্যপণ্য), বস্ত্র ও নিরাপদ বাসস্থানসহ মানুষের মৌলিক কোনো চাহিদাই স্বাভাবিকভাবে পূরণ হচ্ছে না। এর সঙ্গে রয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিপীড়ন। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ অপরকে ঠকিয়ে নিজেকে চালাক মনে করছে। ফলে একটা ফাঁকির সমাজ গড়ে উঠছে। একে অপরকে ক্ষতি করার মানসে মূলত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিতে ভরে যাচ্ছে দুনিয়া। বাড়ছে জুলুম। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। অথচ, ইসলাম মানুষকে শান্তির পথে চলতে উৎসাহিত করেছে। অল্পে তুষ্ট থেকে মহান রবের প্রতিটি আদেশ-নিষেধের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলেছে। বাহ্যিক ইবাদত-বন্দেগি বেড়েছে সমাজে, বেড়েছে জৌলুসপূর্ণ মসজিদ-মাদ্রাসা, কিন্তু বাড়েনি ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ ও সম্প্রীতি। সামাজিক নিরাপত্তার যে বিষয়গুলো সব থেকে বেশি ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে সেগুলো হলো অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে জবরদখল করা, নারীর অনিরাপত্তা ও মানুষের প্রাণহানি, সম্পদ চুরি, নৈতিক অবক্ষয় ইত্যাদি।

ইসলাম সামাজিক ও জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ের সুন্দর সমাধান দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে দখলের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের ধন-সম্পদ গ্রাস করো না, কেবল পরস্পর সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করো তা বৈধ।’ সুরা নিসা : ২৯

সম্পদ যেন কোনোভাবেই অবৈধ পন্থায় উপার্জিত না হয় এবং তা যেন শোষণের কোনো হাতিয়ার না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা ব্যবসায়কে করছেন হালাল আর সুদকে করছেন হারাম।’ -সুরা বাকারা : ২৭৫

সমাজে দিন দিন নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অহরহ ঘটছে ধর্ষণ। অথচ, ইসলাম মানুষের লজ্জাস্থানের হেফাজতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও খারাপ পথ।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৩২

হাদিসে এসেছে ‘যে ব্যক্তির কন্যাসন্তান আছে, আর যে তাকে জীবন্ত কবরস্থ করেনি কিংবা তার সঙ্গে লাঞ্ছনাকর আচরণ করেনি এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর অধিকার দেয়নি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ -সুনান আবু দাউদ : ৫১৪৮

সমাজে দিন দিন হত্যা বাড়ছে। অন্যদিকে ইসলাম অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে সবচেয়ে বড় গোনাহ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নরহত্যার ভয়ানক পরিণাম সম্পর্কে বলেছে, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণ রক্ষা করল।’ -সুরা আল মায়িদা : ৩২

সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ইসলাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন। কারণ অর্থই সব বিশৃঙ্খলার মূল। ‘আর যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে, তোমরা তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে তাদের হাত কেটে ফেল, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি, আর আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান, মহা প্রজ্ঞাময়।’ -সুরা আল মায়িদা : ৩৮

ইসলাম চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধনের ব্যাপারেও তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বর্তমানে দেখা যায় অতি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা আল্লাহরই রঙে রঞ্জিত, আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতম রঞ্জনকারী? এবং আমরা তারই বান্দা।’ -সুরা বাকারা : ১৩৮

সুতরাং যে আল্লাহর রঙে নিজেকে রাঙায় সে পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে না।

বর্তমান সময়ে সামাজিক ও জননিরাপত্তার ঘাটতি হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে। সুতরাং, নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী তৈরি করতে পারলে সামাজিক নিরাপত্তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। আর তা হবে দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষের মুক্তির অসিলা। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সদাচরণ ও সচ্চরিত্র প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসে। দুশ্চরিত্র আনে দুর্ভাগ্য। পুণ্য হায়াতকে প্রলম্বিত করে।’ -মুসনাদে আহমাদ

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মিজানের পাল্লায় মুমিনের চরিত্রের চেয়ে ভারী আর কোনো আমল হবে না। আর আল্লাহতায়ালা অশ্লীল ও কটুভাষীদের মোটেই পছন্দ করেন না।’ -জামে তিরমিজি : ২০০২)

মহান আল্লাহ সবাইকে পূর্ণ সামাজিক ও জননিরাপত্তা দান করুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION