রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

জুয়ার যত ক্ষতি

ইসমাঈল সিদ্দিকী :
বর্তমান সামাজিক ব্যাধিগুলোর অন্যতম হচ্ছে জুয়া। একটা সময় গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন বাঁশঝাড়ে জুয়াড়িদের দেখা মিলত। লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে মানুষ এসব অসামাজিক কাজে জড়িত হতো। কিন্তু সময় যত এগুচ্ছে জুয়াড়িদের দৌরাত্ম্য ততই বেড়ে যাচ্ছে। নতুন নামে অপরাধের ভিন্ন রূপ নিয়ে জুয়ার অভিনব সব পদ্ধতির আবিষ্কার হচ্ছে।

প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, বিভিন্ন অলি-গলিতে, শহরে কিংবা গ্রামে নামে-বেনামে জুয়ার রমরমা ব্যবসা চলছে।

কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে জুয়াবাজির জন্য বিভিন্ন রকমের আসর বসে বিভিন্ন স্থানে। কোথাও হাউজি আবার কোথাও সবুজ টেবিল নামে। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বাজি ধরা হয়।

আর্থিক ও পারিবারিক ক্ষতি : জুয়ার খপ্পরে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। জুয়ার নেশায় পড়ে একজন বিত্তশালী মানুষ মুহূর্তেই ধনসম্পদ হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। গেম থিওরির সফল ব্যবহারের কারণে কোনো জুয়াড়ির পক্ষেই ক্রমাগত জিতে যাওয়া সম্ভব নয়। এরকম ক্ষেত্রে কিংবা ক্রমাগত হার স্বীকার করে দেউলিয়া হলে মানুষ হতাশায় পড়ে।

ক্রমেই সে বিষণœতায় ভোগে এবং শান্তির পরিবারে অশান্তির আগুন প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে। সম্পর্কের অবনতি ঘটে যা ডিভোর্স ও ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত গড়ায়, আবার কেউ কেউ তো আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নেয়।

সামাজিক ক্ষতি : জুয়া সমাজে অনাচার অস্থিরতা সৃষ্টি করে। জুয়ার প্রভাবে সমাজে দ্বন্দ্ব কলহ বাড়তে থাকে। জুয়ার কারণে একটা সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজ ক্রমেই বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায়, জুয়াকে কেন্দ্র করে সমাজে মারামারি আর হতাহতের ঘটনাও ঘটে। জুয়া খেলতে গিয়ে পরস্পর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়ে বহুদিনের সম্পর্কে ভাটা পড়ে।

রাষ্ট্রীয় ক্ষতি : জুয়ার মাধ্যমে একই স্থানে অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকার লেনদেনের কারণে দেশে অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। নানা রকমের প্রতারণা, আন্ডারওয়ার্ল্ড গ্যাংয়ের উদ্ভব, বিভিন্ন রকমের অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে। জুয়া বিত্তবানদের আরও বিত্তশালী হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, যা সম্পদে বৈষম্য আছে এমন একটি দেশে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

ধর্মীয় ক্ষতি : জুয়া মানুষকে উম্মাদ করে দেয়, নীতিনৈতিকতা কেড়ে নেয়। ফলে তারা আল্লাহকে ভুলে এই শয়তানি মরীচিকায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। জুয়া জীবন ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে, দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে। জুয়ার কারণে সভ্যতা ও সম্ভাবনার চাকা পেছনের দিকে ঘুরতে থাকে। তাই কল্যাণের ধর্ম ইসলামের কোনো স্থান নেই। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা-বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না? ’-সুরা মায়েদা: ৯০-৯১

নবী কারিম (সা.) জুয়া থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। ভয় দেখিয়েছেন জুয়ার শাস্তির কথা বর্ণনা করে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।’ বায়হাকি: ৪৫০৩

আসক্ত হওয়ার কারণ : মানুষের যখন আখেরাত ও অনন্ত জীবনের ব্যাপারে উদাসীনতা সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার দু’দিনের জীবন ছাড়া আর সবকিছুই তার কাছে ফিকে মনে হয়, এ জগতের বাইরে কল্পনার ঊর্ধ্ব আরেকটি জগত আছে, সময় ও সীমাহীন আরেকটি জীবন আছে বলে যার জানা নেই, সে কী আর করতে পারে, বরং কী না করতে পারে!

ষাট সত্তর বছর তার পুঁজি, তার আশা আকাক্সক্ষার শেষ সীমা, তার জ্ঞান ও চিন্তার শেষ সীমানা। কীসের আশায় কীসের ভরসায় বর্তমানের ভোগ-উপভোগ, স্বাদ আহ্লাদ ও আনন্দ ফূর্তির কোনো সুযোগ হাতছাড়া করবে সে? কোন জীবনের জন্য, কোন আনন্দের জন্য, কোন প্রাপ্তি ও তৃপ্তির জন্য ত্যাগ ও আত্মত্যাগ ক্ষুধা ও তৃষ্ণা এবং সাধনা ও সংযমের জীবন অবলম্বন করবে সে?

এই হচ্ছে জীবন সম্পর্কে আজকের সভ্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই তো হেসে খেলে, জুয়ার আড্ডায়, মদের বারে, আল্লাহর দেয়া জীবনটাকে হেসেখেলে নষ্ট করে দিচ্ছে।

মুক্তির উপায় : আমরা যদি সামাজিক ব্যাধিগুলো থেকে মুক্তি পেতে চাই, তাহলে গোড়া থেকে সংস্কার শুরু করতে হবে। আমাদের ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। ইমানী পরিবেশে, ইমানী তারবিয়াত গ্রহণ করতে হবে।

মনস্তত্ত্ব ও নৈতিকতার ইতিহাস মানুষের মধ্যে মানবিক বিচ্যুতি ও নৈতিক স্খলনের পথে যতগুলো প্রতিরোধকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে তার মধ্যে ইমানই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর ও শক্তিশালী প্রতিরোধক। সেই ইমানই সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছিলেন নবীজির সোহবত ও তারবিয়াত থেকে। আমরা যদি পরিপূর্ণ ইমান অর্জন করতে পারি, গোনাহের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফিরে আসতে সচেষ্ট থাকি, তাহলে ইনশাআল্লাহ শুধু জুয়া নয় সব অনাচার থেকে মুক্তি পাব।সূত্র: দেশ রূপান্তর

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION