রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অভ্যাসগত কাজ যেভাবে ইবাদত হয়

মুফতি আইয়ুব নাদীম:
আল্লাহতায়ালা মানুষকে একমাত্র তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাই মুসলমানদের ওপর আবশ্যিক দায়িত্ব হলো আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা। আমরা পার্থিব জীবনে আবশ্যিক ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি দৈনন্দিন অভ্যাসমূলক এমন অনেক কাজ করে থাকি, যেগুলো নেক নিয়তের মাধ্যমে ইবাদত ও সওয়াব অর্জনের মাধ্যমে পরিণত করা যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল আমল (এর ফলাফল) নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করবে তাই পাবে।’ সহিহ বোখারি : ১

এখানে এমন কিছু অভ্যাসমূলক কাজের কথা উল্লেখ করা হলো যেগুলো নেক নিয়তের মাধ্যমে ইবাদতে পরিণত হয়।

ঘুম : মহান আল্লাহ মানুষকে শারীরিক আরাম ও বিশ্রামের জন্য দিয়েছেন ঘুম, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অনন্য এক নেয়ামত। মানুষের সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি ও বিষণœতা দূর করতে আল্লাহ দিয়েছেন ঘুম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই নিজ রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন বানিয়েছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম নিতে পারো ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো।’ সুরা কাসাস : ৭৩

অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি ঘুচানোর উপায় বানিয়েছি এবং রাতকে বানিয়েছি আবরণস্বরূপ।’ সুরা নাবা : ৯-১০

তো এই ঘুম মানবজাতির অবিচ্ছেদ্য কাজ, তাদের চিরায়ত অভ্যাস, সকালে, দুপুরে, রাত্রে, যখন যার ইচ্ছা প্রয়োজন মাফিক ঘুমায়। কিন্তু এই ঘুমের কোনো সওয়াব নেই। অভ্যাস ও ইবাদতের মধ্যে দূরত্ব খুব কম, তাই নেক-নিয়তের মাধ্যমে অভ্যাসমূলক ওই ঘুম ইবাদত ও সওয়াবের মাধ্যম হয়ে যায়। তাই কেউ যদি অজু করে, তাহাজ্জুদের নিয়তে, ঘুমের দোয়া পড়ে ইবাদতের শক্তি বৃদ্ধির ইচ্ছায় ঘুমিয়ে যায়, তখন তার এই ঘুম নেক নিয়তের কারণে ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে, তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে।

হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত মুয়াজ (রা.) কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন, তখন কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কীভাবে কোরআন তেলাওয়াত করেন? উত্তরে বললেন, ‘রাতের প্রথম অংশে ঘুমিয়ে যাই এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি, এরপর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যে পরিমাণ সুযোগ হয়, তেলাওয়াত করি, আর আমি আমার ঘুমকে (সওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি, যেমনিভাবে তেলাওয়াতের বিষয়কে সওয়াব মনে করি।’ সহিহ মুসলিম : ১৭৩৩

অপর এক বর্ণনায় আছে, হজতর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে, নামাজের ন্যায় অজু করে নেবে।’ সহিহ বোখারি

এসব বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ঘুমানোর সময় অজু করে তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমালে, অভ্যাসের ঘুমও ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় এবং ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়।

সন্তানকে আদর করা : সন্তান পিতা-মাতার সবচেয়ে প্রিয়, কতটা প্রিয় তা বুঝানোর ভাষা ও যোগ্যতা কোনো মানুষের নেই। সন্তানকে সবাই ভালোবাসে ও আদর করে, এই আদর-ভালোবাসায় কোনো সওয়াব নেই। তবে হ্যাঁ, যদি আদর-ভালোবাসার সময় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণের নিয়ত করে আদর করে, তখন সেই আদর-ভালোবাসা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না বড়দের সম্মান করে না সৎ কাজের আদেশ, নির্দেশ দেয় না এবং অসৎ কাজের বাধা দেয় না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ জামে তিরমিজি : ১৯২১

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন হজরত হাসান বিন আলী (রা.)-এর কপালে চুমু দিলেন, হজরত আকরা ইবনে হাবেস (রা.) তা দেখে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার দশটি সন্তান, আমি কখনো তাদের চুমু খাইনি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে দয়া করে না (সন্তানদের আদর-ভালোবাসা ও চুমু খায় না) তার ওপর দয়া করা হয় না।’ সহিহ মুসলিম : ৫৯২২

পানি পান : পানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অনন্য এক নেয়ামত। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি ছাড়া মানুষের জীবন অচল, খাবার ছাড়া মানুষ এক সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তবে পানি ছাড়া একদিনও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, শরীরে কর্মচঞ্চলতা, উদ্যমতা ঠিক রাখার জন্য পানি জরুরি। আর পানি এমন এক নেয়ামত যা পানাহারে মানুষ বিরক্ত হয় না। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, তথা সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিন পানি পান করে থাকে, কিন্তু কোনোদিন পানি পানে বিরক্ত হয় না। গরমকালে ঠা-া পানি আর শীতকালে গরম পানি পান করা মানুষের চিরায়ত অভ্যাস।

এই শীতল ও গরম পানি পানে কোনো সওয়াব নেই। তবে হ্যাঁ, যদি পানি পানের সময় এই নিয়ত করে যে, পানি পান করলে শরীরে শক্তি সঞ্চার হবে ইবাদতে উদ্যমতা সৃষ্টি হবে, তাহলে এই পানি পান ইবাদত হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্বাচ্ছন্দে খাও ও পান করো, তোমরা যা কিছু করতে তার বিনিময়ে।’ সুরা মুরসালাত : ৪৩

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিনের কাজ সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা করে ও শোকর করে, আর বিপদের সময় আল্লাহর প্রশংসা করে ও ধৈর্যধারণ করে, মুমিনের প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেওয়া হয়, এমনকি স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সময়ও।’ মিশকাত : ১৭৩৩

এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেল, মুমিনের প্রতিটি কাজেই প্রতিদান থাকে। তবে সেই প্রতিদান নিয়তের ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ তার নিয়ত যেমন হবে, তাকে সেই হিসাবে সওয়াব দান করা হবে। যেহেতু অভ্যাসমূলক কাজ ও ইবাদতের মাঝে দূরত্ব একেবারে সামান্য, মহান আল্লাহ আমাদের নেক নিয়তের মাধ্যমে সেই দূরত্ব দূর করে অভ্যাসমূলক সব কাজ ইবাদতে পরিণত করার তওফিক দান করুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION