রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

দুঃখ প্রকাশের অভ্যাস ভালো গুণ

মাওলানা আবদুল জাব্বার:

কোনো ভুল হয়নি তবুও যারা অপকটে ‘সরি’ বলতে পারেন, এমন মানুষেরা অনেক বিনয়ী হয়ে থাকেন। কোনো কথাবার্তায় সামান্যতেই সরি বলতে তারা দ্বিধা করে না। তারা মনে করে, এই বুঝি আমার কোনো কথায় লোকটি কষ্ট পেয়ে গেল। নিজেদের কষ্ট নিয়ে তারা ততটা ভাবে না যতটা অন্যের কষ্টের ব্যাপার তাদের ভাবায়। আর কোরআন মাজিদ বলছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একদম প্রথম গুণই হচ্ছে বিনম্রতা অর্থাৎ বিনয়ী হয়ে চলা, অহংকারী না হওয়া।

ইরশাদ হয়েছে, ‘রহমানের (আল্লাহর) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। (সালাম বলার অর্থ, মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও তর্ক-বিতর্ক ছেড়ে দেওয়া। ইমানদাররা মূর্খ লোকদের সঙ্গে তর্কে জড়ায় না। বরং তারা এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং ফালতু বিতণ্ডা বর্জন করে)।’

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো মুমিনের চালচলন হয় ভদ্র ও মার্জিত। তবে এর দ্বারা খুব ধীরে চলা উদ্দেশ নয়। কেননা, বিনা প্রয়োজনে ধীরে চলা সুন্নত বিরোধী। হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব ধীরে চলতেন না; বরং কিছুটা দ্রুতগতিতে চলতেন। হাদিসের ভাষা এরূপ, ‘চলার সময় পথ যেন তার জন্য সংকুচিত হতো।’-ইবনে হিব্বান: ৬৩০৯

এ কারণেই পূর্ববর্তী মনীষীরা ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের মতো ধীরে চলাকে অহংকার ও কৃত্রিমতার আলামত হওয়ার কারণে মকরুহ সাব্যস্ত করেছেন। হজরত ওমর (রা.) জনৈক যুবককে খুব ধীরে চলতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি অসুস্থ? সে বলল, না। তিনি তার প্রতি চাবুক ওঠালেন এবং শক্তি সহকারে চলার আদেশ দিলেন।-ইবনে কাসির

বর্ণিত আয়াতের তফসির প্রসঙ্গে হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, খাঁটি মুমিনদের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চোখ, কান, হাত, পা, আল্লাহর সামনে হীন ও অক্ষম হয়ে থাকে। অজ্ঞ লোকেরা তাদের দেখে অপারগ ও পঙ্গু মনে করে, অথচ তারা রুগ্ণও নয় এবং পঙ্গুও নয়; বরং সুস্থ ও সবল। তবে তাদের ওপর আল্লাহভীতি প্রবল, যা অন্যদের নেই। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে না এবং তার সমস্ত চিন্তা দুনিয়ার কাজেই ব্যাপৃত, সে সর্বদা দুঃখই ভোগ করে। কারণ, সে তো দুনিয়া পুরোপুরি পায় না এবং আখেরাতের কাজেও অংশগ্রহণ করে না। যে ব্যক্তি পানাহারের বস্তুর মধ্যেই আল্লাহর নেয়ামত সীমিত মনে করে এবং উত্তম চরিত্রের প্রতি লক্ষ করে না, তার জ্ঞান খুবই অল্প এবং তার জন্য শাস্তি তৈরি রয়েছে।-ইবনে কাসির

আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘যখন জাহেলরা (মূর্খ) তাদের সঙ্গে কথা বলে, তখন তারা বলে-সালাম। এখানে ‘জাহিলুন’ আরবি শব্দের অর্থ বিদ্যাহীন ব্যক্তি নয়, বরং যারা মূর্খতার কাজ ও মূর্খতা প্রসূত কথাবার্তা বলে, যদিও বাস্তবে বিদ্বান। মূর্খ মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কোনো ভদ্রলোকের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। রহমানের বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না।-ফাতহুল কাদির

যেমন কোরআন মাজিদের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আর যখন তারা কোনো বেহুদা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে যায়। বলে, আমাদের কাজের ফল আমরা পাব এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জাহেলদের সঙ্গে কথা বলি না।’-সুরা আল কাসাস: ৫৫

ইসলামি স্কলাররা আরও বলেছেন, অহংকারীদের একটি আলামত হচ্ছে তারা সহজে কাউকে সরি (দুঃখিত) বলতে পারে না। এতে তাদের ইগোতে (ইগো একটি মানসিক প্রবৃত্তি, নিজেকে অন্যের চেয়ে বিশেষ বা শ্রেষ্ঠ ভাবা। বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে আমি, আত্মা, আত্মমর্যাদা, অহম, অহংবোধ, স্বাতন্ত্র্যবোধ) লাগে। তারা কোনো ভুল করেও সরি বলবে না, উল্টো আরও দম্ভ করে বলে আমি কেন তাকে সরি বলব, কই আমি তো কিছু করিনি এভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে উঠেপড়ে লাগে তবুও তার মুখ থেকে ‘সরি’ আসে না। তারা মনে করে সরি বললে বুঝি তারা ছোট হয়ে যাবে। অথচ সরি বলা ব্যক্তিরাই সব সময় সম্মানিত হয়। সরি বা ক্ষমা প্রার্থনার আমল কোনো সাধারণ আমল নয়। এটা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আমল। ফলে এটি দামি এক আমল।

ধরুন, আপনার কাছ থেকে কেউ কোনো সাহায্য চাইতে এসেছে। কিন্তু আপনি তাকে কোনো কারণে সাহায্য করতে পারছেন না। এ জন্য তাকে শুধুমাত্র এটা বলবেন না যে, আমি পারব না। আপনি তাকে অবশ্যই বিনয়ের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করবেন। আপনি বলবেন, ভাইয়া! আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিংবা এভাবে সম্বোধন করে বলতে পারেন, ভাইয়া! আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমার ভালো লাগত কিন্তু পারছি না বলে মাফ করবেন। এভাবে বললে লোকটি আপনার অপারগতা প্রকাশ সত্ত্বেও আপনার প্রতি খুশি থাকবে। এ ছাড়া মন থেকে দোয়া পাবেন।

আপনি নিজেই একটু চিন্তা করে দেখুন, কেউ আপনার সঙ্গে কথাবার্তায় তেমন কোনো ভুল করেনি তবুও সরি বলছে। কেমন লাগবে তখন? মনে হবে না, আহ, লোকটা কত বিনয়ী? আমি কষ্ট পেয়ে যাচ্ছি কি না সেই সচেতনতা তার আছে। তাই তো ভুল না করেই সরি বলছে। এই ভাবনা তার প্রতি আপনার মহব্বত সৃষ্টি করবে, আন্তরিকতা আরও বাড়াবে। আপনার সঙ্গে যে কাজ করলে আপনি খুশি হন, সে কাজ নিশ্চয়ই অন্যের সঙ্গে করে অন্যেকেও আপনার খুশি করার চেষ্টা থাকা উচিত।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION