রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ইসলাম

ইকরামুল ইসলাম:
পৃথিবীতে শান্তি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে ইসলামের আগমন। সংঘাত-সহিংসতা ও উগ্রতার কোনো জায়গা নেই শান্তির ধর্ম ইসলামে। মুসলিম জাতিকে ধর্মীয় বিধিবিধান পালন ও নিজস্ব স্বকীয়তা বজাই রেখে সমাজে বসবাসরত অমুসলিমদের প্রতি সদয় আচরণ, তাদের অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয় সচেতন থাকা, নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব-অনুষ্ঠান পালন করতে দেওয়া এবং তাদের প্রতিমা ও উপাস্য সম্পর্কে কটুবাক্য না বলার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নতুবা তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহতায়ালাকেও গালি দেবে। আমি এভাবেই প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে সুশোভন করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের নিজ প্রতিপালকের কাছেই ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তাদের তারা যা কিছু করত সে সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ -সুরা আনআম : ১০৮

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুসলিমদের অধিকার সংরক্ষণ, তাদের নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিতসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি সর্বদা তৎপর থাকতেন। তিনি বলেন, ‘সাবধান, যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫১

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (সংখ্যালঘু) অমুসলিমকে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩১৬৬

মদিনায় হিজরত, হুদায়বিয়ার সন্ধি ও মক্কা বিজয়; এগুলো ইসলামের বহুল আলোচিত ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। মক্কা বিজয়ের পর কাফের-মুশরিক ও অমুসলিমদের প্রতি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উদারতা, মহানুভবতা ও সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, অনন্তকাল পর্যন্ত পৃথিবীবাসী তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তিনি কুরাইশদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘ওহে কুরাইশ জনগণ, তোমাদের কী ধারণা, তোমাদের সঙ্গে আমি কীরূপ ব্যবহার করব বলে মনে করছ? সবাই বলল, ‘খুব ভালো। আপনি সদয় ভাই এবং সদয় ভাইয়ের পুত্র।’ অতঃপর নবীজি (সা.) বললেন, ‘তাহলে তোমরা জেনে রাখো- আমি তোমাদের সঙ্গে ঠিক সেরূপ কথাই বলছি যেমনটি হজরত ইউসুফ (আ.) তার ভাইদের সঙ্গে বলেছিলেন যে, আজ তোমাদের কোনো নিন্দা নেই। যাও আজ তোমাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হলো।’ -আর রাহীকুল মাখতুম : ৪৬৫

মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধানের নাম ‘মদিনা সনদ।’ বহু জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক অন্যতম প্রামাণ্যপত্র। মদিনা সনদের একটি ধারা হলো ‘বনু আওফের ইহুদিরা মুসলমানদের সঙ্গে একই উম্মতের মতো থাকবে। কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। এটা তাদের নিজেদের অধিকার হিসেবে যেমন গণ্য হবে, ঠিক তেমনিভাবে তাদের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত তাদের এবং তাদের অধীনস্তদের বেলায়ও গণ্য হবে। বনু আওফ ছাড়া অন্য ইহুদিদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।’ -আর রাহীকুল মাখতুম : ২৩৬

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশের সরকার ও জনগণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ লালন করে এবং নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। ফলে আমরা দেখতে পাই- সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এ দেশে সংখ্যালঘু অমুসলিমরা যতটা নিরাপদ, সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক অমুসলিম দেশেও তারা এতটা নিরাপদ নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যহীনভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

কতিপয় শর্তসাপেক্ষে প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধমূলক ‘সংগ্রামী আন্দোলন’ ইসলামের স্বীকৃত একটি বিধান। ইসলাম কখনোই অনর্থক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সহিংসতা ও উগ্রতাকে সমর্থন করে না এবং প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের নির্দেশনা হলো- সব ক্ষেত্রে সহিংসতা ও সীমালঙ্ঘন বর্জন করে চলা। সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করার পাশাপাশি অসহিংসতার মাধ্যমে সহিংসতাকে প্রতিরোধ করা। ভালো দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কথায় কে উত্তম ওই ব্যক্তি অপেক্ষা, যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। (মন্দ) প্রতিহত করো উৎকৃষ্টতর (আচরণ) দ্বারা; ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ -সুরা হা-মিম সাজদা : ৩৩-৩৫

দেশকে সামগ্রিক উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে হাতে হাত রেখে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশে অবস্থানরত প্রতিটি ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোক নিশ্চিন্ত ও নিরাপদে জীবনযাপন করুক, ধর্মীয় উৎসব-আয়োজনকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন ও উপভোগ করুন এমনটাই প্রত্যাশা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION