শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শারীরিক পবিত্রতায় উদাসীনতা নয়

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক জ্যোতির্ময় বাণী, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক।’ বাক্যটি এক দীর্ঘ হাদিসের প্রথম অংশ, যেখানে পবিত্রতার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। পুরো হাদিসটি হলো পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ মিজানকে ভরে দেয়। সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী সব কিছুকে। নামাজ হচ্ছে জ্যোতি, সদকা প্রমাণ, সবর হচ্ছে রশ্মি আর কোরআন হয়তো তোমার পক্ষে দলিল অথবা বিপক্ষে। প্রতিটি মানুষ প্রত্যুষে উপনীত হয়ে নিজেকে বিক্রয় করে এরপর সে হয়তো নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে। সহিহ মুসলিম : ২২৩

ইসলামি জীবন দর্শনে, পবিত্র থাকা ও পবিত্রতার রয়েছে বিস্তৃত অর্থ। অর্থাৎ বাহ্যিক ও দৈহিক পবিত্রতা, অভ্যন্তরীণ ও অন্তকরণের পবিত্রতা এবং স্বভাব ও চারিত্রিক পবিত্রতা ইত্যাদি। তবে এ হাদিসে বাহ্যিক ও দৈহিক পবিত্রতাই মুখ্য। শরীরের, কাপড়ের ও স্থানের পবিত্রতা তো নামাজের অপরিহার্য শর্ত। অন্যভাবে বললে, পবিত্রতা ছাড়া নামাজ হয় না। আর নামাজ ছাড়া ইমান হয় না। এদিক থেকে ইমানের অর্ধেক হচ্ছে পবিত্রতা আর অর্ধেক নামাজ।

চিন্তা করুন, ইসলামে পবিত্রতা কী অপরিহার্য ব্যাপার। পবিত্রতার এই মহিমা ইসলামেরই বৈশিষ্ট্য। সুতরাং এ বিষয়ে অবহেলা যে হবে অতি গুরুতর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সহিহ বোখারি ও মুসলিমসহ হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোতে একটি হাদিস বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনার একটি বাগান থেকে বের হয়ে (দুটি কবরের কাছ দিয়ে অতিক্রমকালে) দুজন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন, যাদের কবরে আজাব হচ্ছিল। তিনি বললেন, দুজনের আজাব হচ্ছে। তবে সে আজাব কঠিন কোনো কারণে হচ্ছে না। (যা থেকে বিরত থাকা ওদের জন্য কঠিন ছিল) তবে নিশ্চয়ই তা গুরুতর। এদের একজন পেশাব থেকে বাঁচত না। অন্যজন চোগলখোরি করে বেড়াত।… সহিহ বোখারি : ৬০৫৫

অর্থাৎ একজনের আজাব হচ্ছে প্রস্রাব থেকে শরীর ও কাপড় পাকসাফ না রাখার কারণে আর অপরজনের আজাব হচ্ছে চোগলখোরির কারণে। চোগলখোরি মানে একজনের কথা আরেকজনের কাছে লাগানো, যার ফলে মনোমালিন্য ও বিবাদ-বিসংবাদের সৃষ্টি হয়। তাহলে এ দুটি বিষয় কবর-আজাবের কারণ। সুতরাং তা গুরুতর। পরিণাম ও আখেরাতের শাস্তির দিক থেকে যেমন পার্থিব ক্ষতি ও অনিষ্টের দিক থেকেও তেমনি।

ইসলামের বিধানে প্রস্রাব থেকে শরীর ও কাপড়-চোপড় পবিত্র না রাখা অতি গুরুতর ব্যাপার। কারণ এ অবস্থায় নামাজ হয় না। আর নামাজ না হলে তার যে কল্যাণ নেই এ তো বলাই বাহুল্য। এ কারণে প্রস্রাব থেকে পবিত্র না থাকাকে, আলেমরা কবিরা গোনাহ সাব্যস্ত করেছেন।

এক সাধারণ অভিজ্ঞতা এই যে, প্রস্রাবের ছিটে-ফোঁটা থেকে শরীর ও কাপড় পবিত্র না থাকায় অনেক মানুষ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে। এই তো কয়েক দিন আগে এক দোকানে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য যাওয়া হলে দোকানি নানা কথার পর আফসোস করে বলল, ‘হুজুর! আমাদের তো কাপড়চোপড় পাক থাকে না, তাই নামাজ পড়তে পারি না।’

এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে যে, নামাজের সময় হয়েছে মসজিদে যাওয়ার সময় কাউকে বলা হলো চলুন, নামাজটা পড়ে আসি! তখন সে আমতা আমতা করতে থাকে। একপর্যায়ে লজ্জিত স্বরে বলেই ফেলে, ‘কাপড় ঠিক নেই।’

এখানে এক ব্যাপার হতে পারে, পবিত্রতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। আর এ কারণে নাপাকি নয়, এমন কিছুকেও নাপাকি মনে করা হতে পারে। যেমন ধুলাবালু, ঘাম ইত্যাদির কারণে বা অন্য কোনো অপরিচ্ছন্নতাকেও কেউ অপবিত্রতা মনে করতে পারেন এবং এ কারণেও সময়মতো নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। এমন হয়ে থাকলে সেটা বিভ্রান্তি, যার নিরসন কাম্য। তবে সাধারণত যেটা হয় তা হচ্ছে, ব্যক্তির নিজেরও জানা থাকে যে, প্রস্রাবের ছিটে-ফোঁটা থেকে তিনি তার শরীর ও কাপড় পবিত্র রাখেন না। তাই শরীর পাক নেই, কাপড় ঠিক নেই। আর এ অজুহাতে নামাজ পড়া হয় না! কী ভয়ানক ব্যাপার!

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কাপড় ও শরীর পাক রাখা কি খুব কঠিন? আসলে কঠিন নয়। কঠিন যদি হতো তাহলে নানা বয়সের ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দ্বীনদার মানুষ নিজেদের কাপড় ও শরীর পাক রাখতে পারতেন না। পাক-সাফ থাকার জন্য শুধু প্রয়োজন অভ্যাস ও সদিচ্ছা। বাথরুমে তো প্রত্যেকেরই সময় যায়। সেই সময়ের সঙ্গে দু-চার মিনিট যুক্ত করেই পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। টয়লেট-টিস্যুও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে প্রস্রাবের অবশিষ্ট থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়া খুবই সহজ। আর তা সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় যেখানে ব্যক্তিগত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই সেখানেও তা সঙ্গে থাকলে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা থাকে না। বিষয়টি কঠিন নয়, এ জন্য দরকার শুধু অভ্যাসের পরিবর্তন।

ইসলাম যে পবিত্রতা ও নির্মলতার শিক্ষা দান করেছে আধুনিক সভ্যতা ও জীবনধারা এখনো ওই পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। চারদিকে সুরুচি ও সংস্কৃতিবানতার এত কলরব কিন্তু এরই সঙ্গে শরীরে ও কাপড়ে ‘মূত্রাবশিষ্ট’ বয়ে বেড়ানো! অভ্যাসটাই এই রপ্ত হয়েছে, বা রপ্ত করানো হয়েছে, যা কাপড় ও শরীর দিনমান নাপাক করে রাখে। এই অভ্যাসের পরিবর্তনটাই মূল কাজ। বড় কিছু তো নয়, শুধু টয়লেট সারার সময় সতর্ক থাকা যেন প্রস্রাব বা নাপাকির ছিটা শরীরে বা কাপড়ে না লাগে। এরপর নিশ্চিত হওয়া যে, আর প্রস্রাব ঝরবে না, ব্যস এটুকু অভ্যাস করে নিলেই শরীরও পাক, কাপড়ও পাক। এখানে পবিত্রতার বিধান ব্যক্তির নিশ্চিত হওয়ার ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। এ জন্য যদি চার-পাঁচ মিনিট ব্যয় করতে হয়, তা তো সারা দিনের পবিত্রতার তুলনায় কিছুই নয়। এরপর যখনই নামাজের সময় হচ্ছে, নিকটবর্তী মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে নিন, মসজিদে যাওয়ার সুযোগ নেই তো নিজেরা জামাত করা যাচ্ছে। তা-ও হচ্ছে না তো একা পড়া যাচ্ছে। তাহলে চিন্তা করুন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বাণী ‘কিন্তু সে আজাব কঠিন কোনো বিষয়ে হচ্ছে না’, আজকের জন্যও কত প্রাসঙ্গিক।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION