রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা ও জনপরিকল্পনা

পাভেল পার্থ:
ইতিহাসবিদ যতীন্দ্রমোহন রায় ও কেদারনাথ মজুমদার ১৯১০ সালে ‘বৃহত্তর ঢাকা জেলার বিবরণসহ ঢাকার ইতিহাস’ লিখেছিলেন, যা পরবর্তী সময় ‘ঢাকার ইতিহাস’ নামে দুই খ-ে প্রকাশিত হয়। ওই বইতে ঢাকা অঞ্চলের ভেসলান, বোয়াইলা, সাইতা, সূর্যমণি, বায়েন্দা, খামা, বাওয়া ধানের কথা আছে। করিমঞ্জি, ভাওয়ালি, বাকরাবাদী ও ভাটিয়াল জাতের পাটের নাম আছে। খাগরি, ধলসুন্দর, মারকুলি, কাজলী, সারঙ্গ, গেন্ডারি জাতের আখের নাম আছে। হরিণ, চিতা, ভালুক, খেঁকশিয়াল, উদ, সজারু, শুশুক, কাঠবিড়ালি, বানর, উল্লুক, খাটাশ, কচ্ছপ, কুমির এবং বহু জাতের সাপসহ নানা বন্যপ্রাণীর কথা আছে। আছে গৃধিনী শকুন, চিল, কোড়া, বাজ, টিয়া, চন্দনা, ময়না, চড়ুই, বাবুই, বন্যকুকুট, হরিকল, ঘুঘু, টুনি, দুর্গাটুনি, ডাহুক, শালিক, দোয়েল, শ্যামা, হরবোলা, ময়ূর, পেঁচা, কুড়াইলা, বক, মাছরাঙা, হাড়গিলা, শামুকভাঙা, বুলবুলি, পিপি, তিতির, খঞ্জন, কাক, দাঁড়কাক, পানিকাউড়, বউ কতা কও, সারস, রামশালিক, ঢুপি, বাদুড়, মদনা, তোতা, ধনঞ্জয়, মানিকজোড়, ভৃঙ্গরাজ, শ্যামা এমন বহু পাখির নাম। শাল, হিজল, শিমুল, পাকুররানী, মান্দার, তিন্তিরী, জারুল, ছাইতান, কাউ, বউনাসহ বহু ভেষজ উদ্ভিদের নাম আছে বইটিতে। মাত্র ১১৪ বছরে কেবল ঢাকা নয়; তৎকালীন সময়ের বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল থেকে নিদারুণভাবে উধাও হয়েছে প্রাণ প্রজাতির এই ঐশ্বর্যময় ভান্ড। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে স্বাধীন দেশে কেমন আছে দেশের প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ? গত পঞ্চাশ বছরে মানুষের সংখ্যা তরতর করে বেড়েছে। কিন্তু নিদারুণভাবে নিখোঁজ হয়েছে বাঘ, শকুন, হাতি, বনরুই কী বটগাছ। গ্রামের পর গ্রাম সবুজ ধানক্ষেত আর পাটের জমিন দুমড়েমুচড়ে তৈরি হয়েছে অপরিকল্পিত নগর। রাসায়নিক ও জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বাণিজ্যিক কৃষির চাপে আমাদের কৃষিজমি, জলাভূমি ও জনস্বাস্থ্য আজ যন্ত্রণায় কাতর। খাবারে মিশে গেছে বিষ, বিপজ্জনক সিসা আর ধাতব দূষণ। ক্যানসারসহ জটিল অসুখ নিত্য বাড়ছে গ্রাম কী শহরে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ, দূষিত পানি, বননিধন, বৃক্ষ উজাড়, কালো ধোঁয়া, ইটের ভাটা, কৃষিজমি হ্রাস, নদী দখল, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, সিসাদূষণ এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে প্রতিদিন। পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেড়েছে লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়, উত্তরাঞ্চলে তাপপ্রবাহ ও খরা, উত্তর-পূর্বে পাহাড়ি ঢল, মধ্যাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধস, দেশ জুড়ে নদীভাঙন, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড, রাসায়নিক বিস্ফোরণ, জলাবদ্ধতা। আজ মৌমাছি থেকে শুরু করে হাতি কারোর জীবন সুরক্ষিত নয়। জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা আর কার্বন নিঃসরণ যেমন পৃথিবীর জলবায়ু পঞ্জিকাকে প্রতিনিয়ত ছিন্ন ভিন্ন করছে, একই সঙ্গে অপরিণামদর্শী উন্নয়নের অভিঘাত পরিবেশগত যন্ত্রণাকে আরও জটিল ও দুঃসহ করে তুলছে।

প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষয়িষ্ণু সময়ে দাঁড়িয়ে এখনো তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশের মূলশক্তি এর ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। বাংলাদেশ গভীর পানির ধানের আঁতুড়ঘর, বেগুনের আদি উৎপত্তিস্থল এই দেশ। ২৭ জাতের বাঁশ আছে এখানে। আছে খুদবেড়েলা, বনহলুদ, জংলি আদা, বিষলতা, কেওখেরা, গিরিশোভন শাক, গুজের কাঁটা কিংবা পাহাড়ি স্বর্ণলতার মতো ২৮ জাতের এনডেমিক উদ্ভিদ, যা কেবল এখানেই জন্মে। ইরাবতী ডলফিন, চামচ ঠুঁটি বাটান কিংবা বাংলা শকুনের বৃহত্তম বিচরণ ভূমি এই দেশ। দুনিয়ার বৃহত্তম বাদাবন সুন্দরবন থেকে শুরু করে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতও এখানে। সাঁওতাল, চাকমা, হাজং, বাঙালি, পাঙাল ও রাখাইনসহ পঞ্চাশোর্ধ্ব জাতিগোষ্ঠী আর চল্লিশোর্ধ্ব মাতৃভাষার সমাহার আছে এ দেশে। ১০০৮ নদী, ১৭ হাইড্রোলজিক্যাল এবং ৩০ কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল, উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে সমুদ্র কিংবা পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলের ভাটিতে অবস্থান দুনিয়ার খুব কম ভৌগোলিক অঞ্চলেই আছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবী জুড়েই আজ প্রাণবৈচিত্র্য কমছে এবং পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, পৃথিবীর প্রায় ৬০,০০০ প্রজাতির গাছের ভেতর প্রায় ৩০ ভাগই বিলুপ্তির আশঙ্কায় আছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস ছিল বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে তীব্র দাবদাহের মাস। অসময়ে অতিবর্ষণের ফলে ডুবেছিল দুবাই ও বাংলাদেশের সিলেট-বান্দরবান। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন বৈশ্বিক উষ্ণতার পারদ না থামাতে পারলে পৃথিবীর হিমবাহ গলে যাবে, বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও জলমগ্ন হবে, বহু প্রাণপ্রজাতির বিলুপ্তি ঘটবে এবং একই সঙ্গে বরফে ঘুমিয়ে থাকা বহু অণুজীব জেগে উঠবে এবং বিপজ্জনক মহামারীর বিস্তার ঘটাবে। তাহলে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ সুরক্ষায় প্রজাতি হিসেবে মানুষের দায়দায়িত্ব কী? প্রাণবৈচিত্র্যর প্রতি এই যে অবিরাম নিষ্ঠুরতা আর সহিংসতা এর বিরুদ্ধে কী তবে জাগবে না বাংলাদেশ? সুন্দরবনের বাঘ, মহানন্দার ঘড়িয়াল, টাঙ্গুয়ার হাওরের বুনো গোলাপ, পদ্মার ইলিশ, লাউয়াছড়ার উল্লুক, শ্যালা নদীর ইরাবতী ডলফিন, হাকালুকির কালিম, উপকূল দ্বীপের চামচ-ঠুঁটো বাটান কী মল্লিকপুরের বিশ্ববট এদের পাশে কী দাঁড়াবে না মানুষ? মানুষের পাশেই তো এরা জীবনভর দাঁড়িয়েছে, জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মানুষ কী করেছে? হাতি মেরে দাঁতের দোকান দিয়েছে। বাঘের চামড়া দেয়ালে ঝুলিয়ে ব্যাটাগিরি প্রমাণ করছে। গরম জামার জন্য ভাল্লুক খুন করছে। উন্নয়নের নামে অরণ্য, সবুজবলয় আর গাছেদের বিনাশ করছে।

প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ নানা আন্তর্জাতিক নীতি ও সনদ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হলেও এসবের কোনো জোরালো প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের ৫ জুন ‘আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (সিবিডি)’ স্বাক্ষর করে এবং ১৯৯৪ সালের ৩ মে অনুসমর্থন দান করে। ওই সনদের আলোকে দেশে প্রাণবৈচিত্র্য আইন তৈরি করে। জাতিসংঘের সাধারণ সভার দ্বিতীয় কমিটিতে প্রথম উত্থাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের’ কথা। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এটি পালিত হয় প্রতিবছরের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের তারিখটি পরিবর্তিত হয়ে পুনরায় এটি ২২ মে নির্ধারিত হয়। ২০১০ সালকে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য বর্ষ ঘোষণা করা হয়। প্রতিবছর এ দিবসের জন্য একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়। ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় পরিকল্পনার অংশ হোন’। প্রশ্ন হলো, কে এই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে? জনগণ, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে? বাংলাদেশে লাখো কোটি প্রমাণ আছে, দেশের প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা করে আসছেন মূলত দেশের গ্রামীণ জনগণ এবং আদিবাসী সমাজ। এমনকি রাষ্ট্র এসব মানুষের নিরলস অবদানের কথা অস্বীকার করতে পারেনি। ‘পরিবেশ পদক’, ‘বন্যপ্রাণী পদক’ কিংবা ‘বৃক্ষরোপণ পদক’ প্রদানের মাধ্যমে কিছুটা হলেও রাষ্ট্র জনগণের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশ জুড়ে যে মানুষেরা দিন-রাত কোনো বাজেট বা প্রকল্প বা বেতন ছাড়াই দেশের প্রাণসম্পদ রক্ষা করছে সেসব মানুষদের নিয়ে রাষ্ট্র কেন প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার কোনো পরিকল্পনা করে না? কিংবা মানুষের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে কেন রাষ্ট্রের প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার অন্যতম কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে না? তাহলে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় কে কার পরিকল্পনার অংশ হবে? কীভাবে হবে? রাষ্ট্রীয় অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পই প্রাণবৈচিত্র্যবিরোধী। চলনবিল, হাওর, সাজেক পাহাড়, সুন্দরবন, মধুপুর শালবন, আলতাদীঘি শালবন, রেমা-কালেঙ্গা, লাউয়াছড়া, পাথারিয়া পাহাড়, রাতারগুল, হাকালুকি, টাঙ্গুয়ার, সোমেশ্বরী কোন এলাকায় প্রাণবৈচিত্র্য নিরাপদে আছে? এসব প্রতিটি অঞ্চলে নানাবিধ রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্প ও বাণিজ্যিক কর্মসূচির কারণেই প্রাণবৈচিত্র্য নিদারুণভাবে বিপন্ন। এমনকি নগরের খাল, সবুজবলয়, জলাভূমি কিংবা উন্মুক্ত চত্বর ও গাছগাছালি সবকিছুই প্রাণবৈচিত্র্যবিনাশী উন্নয়নের যন্ত্রণায় নিহত। চট্টগ্রামের সিআরবি কিংবা ঢাকার ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত আনোয়ারা উদ্যান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাণবৈচিত্র্য বিনাশ হয়েছে কীভাবে? বৈচিত্র্য ও প্রকৃতির প্রতি প্রবলভাবে অমনোযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণেই এসব প্রাণসম্পদ আমরা হারিয়েছি। অথচ পাখির বাসা, গাছপালা, মৌমাছি, সরীসৃপ, জলাভূমি সবকিছুকে রেখেই আমরা স্থাপনা কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারতাম। বারবার প্রাণবৈচিত্র্য বিনাশ করে অপরিণামদর্শী যে উন্নয়ন আমরা করছি তা কার জন্য? কোন প্রজন্মের জন্য? কোন প্রজাতির জন্য? কারণ মানুষ গাছ, পাখি, পানি, মৌমাছি ছাড়া বাঁচবে কীভাবে? তাহলে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার এমন প্রাণবিনাশী পরিকল্পনার অংশ কেন জনগণ হতে যাবে? বরং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলানো জরুরি। প্রাণ, প্রকৃতি, প্রতিবেশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান ও বিবরণ জানাবোঝা জরুরি। আর এর সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর ভান্ডার হলো দেশের জনগণ। গ্রামবাংলার মানুষের আছে লোকায়ত জ্ঞান এবং প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার তাদের ঐতিহাসিক অনুশীলন এবং নানা বিশ্বাস। রাষ্ট্রকে এসব মান্য করতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে। দেশ জুড়ে এখনো কিছু মানুষ নিজেরা খেয়ে না খেয়ে পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী, উভয়চর প্রাণী কিংবা গাছের বৈচিত্র্যময় ঐশ্বর্য সুরক্ষা করছেন। আর এই মানুষরাই হতে পারেন প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার অন্যতম পরিকল্পক। সংরক্ষক এবং চর্চাকারীদের পরিকল্পনাই হতে পারে আমাদের বহুমুখী পরিকল্পনা। ওপর থেকে বারবার প্রাণবিনাশী উন্নয়নের বাণিজ্যিক বাহাদুরি চাপিয়ে না দিয়ে, রাষ্ট্র জনগণের এই পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। আমাদের সংবিধান প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় এমন অঙ্গীকার রক্ষায় দায়বদ্ধ।

আমরা যখনই বলি ‘নদীটি মারা যাচ্ছে’, ‘গাছটি হত্যা করা হয়েছে’ কিংবা ‘ধরিত্রী আমাদের নয়, আমরা ধরিত্রীর’ তখন আমরা কোনো না কোনো পরিবেশগত দর্শনকে সামনে হাজির করি। মানুষের জন্য ধান আবাদ করতে গিয়ে বিষ দিয়ে জমির পতঙ্গ-কেঁচো-অণুজীব-বুনো শাক মেরে ফেলা কিংবা দাবদাহের সময় বারান্দায় পাখিদের জন্য পানির পাত্র রাখার ভেতর দিয়ে আমাদের পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়। কেন আমরা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা, ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পাখির ছানাদের রক্ষা করতে পারি না কিংবা শামুক ও ব্যাঙদের মেরে ফেলি? সড়ক প্রশস্তকরণ, স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে কেন প্রথমেই নির্দয়ভাবে গাছ কাটতে শুরু করি? এর অন্যতম কারণ আমাদের মনোজগৎ এবং দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ আমরা প্রবলভাবে ‘মানুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’ ধারণ করি। আমাদের কাছে প্রাণজগতের অন্য কেউ কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। একই সঙ্গে নয়াউদারবাদী অতি মুনাফাপ্রবণ করপোরেট জীবনযাপন আমাদের বাধ্য করে সবকিছু ল-ভ- জখম করে বাজারে বিক্রি করে দিতে। গাছ তাই আমাদের কাছে কাঠ, কৃষিজমি ইট তৈরির মাটি কিংবা বিলুপ্ত বাঘাইড় মাছ আমাদের কাছে মহাসমারোহে ভোজের বিষয়। আর এসব দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই আমাদের উন্নয়ন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। উন্নয়নের তলায় অগণিত বুনোপ্রাণের আহাজারি ও লাশের ক্ষত থাকে।

আজ আমাদের প্রিয় গ্রহ এক নিদারুণ পরিবেশ ও জলবায়ুগত সংকটের খাদে দাঁড়িয়ে। এই সংকট আমরাই তৈরি করেছি। তাই নিজের দেশ ও প্রিয় গ্রহকে বাঁচাতে মানুষ হিসেবে আমাদেরকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতির স্বাস্থ্য ও খাদ্যশৃঙ্খলের সুরক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ দরকার। পাহাড়ের জন্য, অরণ্যের জন্য, নদীর জন্য, হাওরের জন্য, ঝিরি-ছড়ার জন্য, বাঁওড়-বিলের জন্য, বরেন্দ্র কী গড়ের জন্য, সমুদ্র বা দ্বীপ এবং নগরের প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর জনপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। দেশের সব মানুষ ও প্রাণসত্তাকে যুক্ত করার কাজকে সক্রিয় করতে রাষ্ট্রের হাতে খুব বেশি সময় নেই। জলবায়ু সংকটে বিদীর্ণ পৃথিবী কাঁপছে, বাড়ছে তাপ, গলছে বরফ, দীর্ঘ হচ্ছে খরা। রাষ্ট্র কী টের পায়?

লেখক: গবেষক ও লেখক

animistbangla@gmail.com

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION