মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

যুগে যুগে জুলুম ও জালেমের পরিণতি

মুফতি ইবরাহীম আল খলীল:
জুলুম করা মহাপাপ। যারা জুলুম করে তাদের গন্তব্যস্থল জাহান্নাম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৃথিবী জুড়ে চলছে জুলুমের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। চারদিকে প্রকাশ পাচ্ছে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র আজ এই জুলুমে লিপ্ত। জুলুমের ওপর দাঁড়িয়েই তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করছে। যার পরিণতি খুবই মন্দ ও ভয়াবহ। অন্যের ওপর অন্যায়-অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালেমরা। যেমনটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের বিভিন্ন বিপদাপদে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ জুলুম।

যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। কারও অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, নির্যাতন করা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ আর জুলুম করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহতায়ালার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহতায়ালা মজলুমের দোয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। মানুষের উচিত দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতি জুলুম না করা।

দুনিয়াতে খুব কম জালেমই নিজেকে জালেম মনে করে। আবার জালেম যখন মজলুম ও দুর্বলের প্রতি অত্যাচার চালায়, তখন সে নিজেকে মনে করে অনেক ক্ষমতাবান। ভাবে তার অর্থবিত্ত, শক্তি ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী। মনে করে তার সহযোগী অনেক। কিন্তু সে ভুলে যায়, ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও মহান আল্লাহ তার সঙ্গে আছেন। তিনি সবই দেখেন এবং হিসাব রাখেন। পৃথিবীতে জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত থাকে। অনেক অসহায় মানুষ দুই হাত তুলে জালেমের ধ্বংসের জন্য প্রার্থনা করে। আর মজলুমের বদ দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। আজ যে জালেম নিজেকে শক্তিশালী অনুভব করে এবং শক্তির দাপটে দুর্বলের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, কেয়ামতের দিন সে নিজেকে মারাত্মক দুর্বল ও দরিদ্র অনুভব করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জালেমদের কোনো বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে।’ (সুরা মুমিন ১৮)

আল্লাহ জালেমের ব্যাপারে উদাসীন নন : জুলুম এক অমার্জনীয় অপরাধ। এর শাস্তি অনিবার্য। জালেমদের ব্যাপারে আল্লাহ উদাসীন নন। বরং সার্বক্ষণিক তিনি সবকিছু দেখছেন। জালেম যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন আল্লাহর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার সযোগ নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কখনো মনে করো না যে, জালেমরা যা করছে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, যেদিন সব চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ভীত-বিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছোটাছুটি করবে, আতঙ্কে তাদের নিজেদের দিকেও ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (ভয়ানক) উদাস। সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক করো যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যেদিন জালেমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কিছু কালের জন্য অবকাশ দিন, আমরা আপনার আহ্বানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করব। (তখন তাদের বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইব্রাহিম ৪২-৪৪)

মজলুমের অভিশাপে জালেমের পতন হয় : মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ জালেমের পতনের অন্যতম কারণ। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (জামে তিরমিজি)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মজলুমের বদ দোয়ার ভয় করো। কেননা মজলুমের বদ দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোনো অন্তরাল নেই। অর্থাৎ মজলুমের দোয়া সরাসরি আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। (সহিহ বুখারি)

শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত থাকা শর্ত। যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি জুলুম করে সে কেবল অন্যেরই ক্ষতি করে না, নিজ জীবনের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকিতে ফেলে। আর সমাজের অধিকাংশ লোকেরই যখন চরিত্র হয় জুলুমবাজি অর্থাৎ যারা পারস্পরিক হক আদায়ের কোনো তোয়াক্কা করে না, সেই সমাজ দুর্যোগকবলিত হবেই। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা আমার (নবীর) কথা শোনো, তা হলে বেঁচে থাকতে পারবে। সাবধান! তোমরা জুলুম করো না। সাবধান তোমরা জুলুম করো না। সাবধান তোমরা জুলুম করো না। (মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ কোনো জালেমকে ছেড়ে দেননি : যারা জুলুম করে এমন কাউকে মহান আল্লাহ অতীতে ছেড়ে দেননি, তার শেকড় যতই শক্ত হোক। ফেরাউন ও নমরুদ তাদের শক্তির দাম্ভিকতায় নিজেদের রব বলে দাবি করেছিল। স্বীয় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এবং তার পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সব নবজাতক ছেলে সন্তানদের হত্যা করেছিল। তারা নিজেদের সর্ব ক্ষমতার অধিকারী ভেবেছিল। ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। জুলুম করেছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহ তাদের দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করেছেন। যাতে পরবর্তীরা তা থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিলাম। মুসা তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা পৃথিবীতে দম্ভ করল। তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড ঝটিকা। কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ। কাউকে আমি ধসিয়ে দিয়েছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো জুলুম করেননি। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। আমি মানুষের কল্যাণার্থে এসব দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকি, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই কেবল তা বুঝে। (সুরা আনকাবুত ৩৯-৪৩)

ফেরাউনের পরিণতি : ক্ষমতার জোরে ফেরাউন দেশের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। নিজেকে রব বলেও দাবি করেছিল। মনে করেছিল নিজেকে চিরস্থায়ী ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু না, তা আর হয়নি। তার সব অহমিকা আর দাপট মুহূর্তের মধ্যেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একটি শ্রেণিকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিল, যাদের পুত্রদের সে জবাই করত এবং মেয়েদের জীবিত রাখত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।’ (সুরা কাসাস ৪)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় ও অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদের আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদের পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখো, জালেমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে। (সুরা কাসাস ৩৯-৪০)

জালেমদের শেষ পরিণতি দেখে মানুষ যাতে শিক্ষা নেয়, এজন্য তাদের কিছু নিদর্শন আল্লাহ দুনিয়াতে উদাহরণ হিসেবে রাখেন। তারা যেন তাদের পরিণতি দেখে। যেমনটা আল্লাহতায়ালা ফেরাউনের ক্ষেত্রে করেছেন। তার সেই জুলুমে ভরপুর শরীরকে আজও মানুষের সামনে রেখেছেন। পরবর্তী সময়ে তারা যেন এমন ক্ষমতার দাপট ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন না করে। যেন মানুষ তার থেকে শিক্ষা নেয়। পরস্পর যেন পরস্পরের ওপর জুলুম-নির্যাতন না করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি বনি ইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম। তখন ফেরাউন ও তার বাহিনী জুলুম ও সীমা লঙ্ঘনের উদ্দেশে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। পরিশেষে যখন সে ডুবে মরার সম্মুখীন হলো, তখন বলতে লাগল, আমি স্বীকার করলাম, বনি ইসরাইল যেই আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছে তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমিও অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (উত্তর দেওয়া হলো) এখন ইমান আনছ? অথচ এর আগে তো তুমি অবাধ্যতা করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তী কালের মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকো। (কেননা) আমার নিদর্শন সম্পর্কে বহু লোক গাফেল হয়ে আছে।’ (সুরা ইউনুস ৯০-৯২)

কারুনের পরিণতি : মহান আল্লাহ জালেম কারুনের পরিণতি সম্পর্কে বলেন, ‘কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। কিন্তু সে তাদেরই প্রতি জুলুম করেছিল। আমি তাকে এমন ধনভাণ্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিমান লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিল। স্মরণ করো, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। সে বলল, এসব তো আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি। সে কি জানত না যে, আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতেও তার অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং লোকবলেও বেশি ছিল? অপরাধীদের তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হয় না। পরিণামে আমি তাকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলাম। তার পক্ষে এমন কোনো দল ছিল না যারা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও পারল না আত্মরক্ষা করতে। ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সকল লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য দেখাতে ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকিদেরই অনুকূলে থাকবে।’ (সুরা কাসাস ৭৬-৮৩)

নমরুদের পরিণতি : নমরুদ এক সময় সাধারণ জনগণের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু সেও টিকতে পারেনি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি ঐ ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করোনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইব্রাহিমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইব্রাহিম বলল, তিনিই আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই। ইব্রাহিম বলল, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত করো তো! এ কথায় সে কাফের নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ জালেমদের হেদায়েত করেন না।’ (সুরা বাকারা ২৫৮)

পৃথিবীতে প্রথম ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ছিল নমরুদ। সে আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ করেছিল। আল্লাহ তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটি মশা পাঠান। সেটি তার নাকে প্রবেশ করে। মশার জ্বালা থেকে বাঁচার জন্য তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হতো। তার রাজত্ব ছিল চারশ বছর। সে যেমন চারশ বছর পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল তেমনি আল্লাহ তাকে চারশ বছর এই আজাবে রাখেন। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে। (তাফসিরে ইবনে কাসির ২/৮৭৮)

যুগে যুগে বহু জালেমের জন্ম হয়েছে। দুনিয়াতে তারা অনেক নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম আর নির্যাতন চালিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহতায়ালা কোনো জালেমকেই ছাড় দেননি। তাদের পাকড়াও করেছেন কঠিনভাবে। চরমভাবে অপমান করেছেন। পরবর্তীরা যাতে শিক্ষা নিতে পারে সেজন্য পরবর্তীদের মধ্যে তাদের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। উল্লেখ করেছেন তাদের জুলুম আর নির্যাতনের বিবরণ। যা আজও মানুষ ঘৃণাভরে স্মরণ করে।

জালেম রেহাই পাবে না : মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এটি সুনিশ্চিত। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহি ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, বরং কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম।

আমাদের মনে রাখা দরকার জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত মজলুম ব্যক্তি জালেমকে মাফ না করে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সুরা হুদ ১১৩)

রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য। (সহিহ বুখারি)

মানুষের অধিকার হরণ করা এবং তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে এবং ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন আর নিপীড়ন করে। ফলে এক সময় জালেম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদাপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের শাস্তি প্রদান করবেন। (সহিহ মুসলিম)

জুলুমের শেষ পরিণাম : জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহতায়ালা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালেমের বিচার শুধু কেয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহতায়ালা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি। (তিরমিজি)

সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা রুম ৪১)

মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন জালেমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে আমাদের রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION