মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

আসুন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই

মুফতি ইবরাহীম আল খলীল:
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। বৃহত্তর ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার কিছু অংশ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ছে। হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। মানবেতর একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত অগ্রসর করা দরকার।

বহু মানুষ তাদের পরিবারের সদস্য, গবাদিপশু ও আসবাবপত্র নিয়ে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পেরেশান হয়ে ছোটাছুটি করছেন। কারও বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। আবার কেউ কেউ নৌকা ব্যবস্থা করতে পারেননি। রাস্তাঘাটেও পানির মাত্রা বেশি। অনেক রাস্তা ঘাট ভেঙে গেছে, ব্রিজ তলিয়ে গেছে। দোকানপাট বন্ধ। বাজার সদাইয়ের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। সুপেয় পানিরও মারাত্মক সংকট। শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমে। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে, বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের পাশে যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা ইমানি দায়িত্ব ও নববি আদর্শ। অসহায় মানুষকে খাদ্য-বস্ত্র দিয়ে সাহায্যের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

অসহায় মানুষ ও সৃষ্টির সেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এটি স্বতন্ত্র একটি ইবাদতও বটে। এ বিষয়ে ত্রুটি হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। প্রশ্ন করা হবে বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান ও ক্ষুধার্তদের খাদ্যদান সম্পর্কে। ইসলাম মানবীয় গুণাবলির ক্ষেত্রে পরোপকার ও জনকল্যাণমূলক কাজকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ আখ্যা দিয়ে এর প্রতি উৎসাহ দেয়। কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।’ (সুরা কাসাস ৭৭)

মানবেতর লোকদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় ইসলাম। ক্ষুধার্ত লোকদের আহারের ব্যবস্থা করার শিক্ষা ইসলামেরই দেওয়া। কোরআন ও হাদিসে এর প্রতি অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান ১১০)

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তদের খাবার দান করা।’ (সহিহ বুখারি) অন্য এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে, হে প্রভু! কীভাবে আমি আপনাকে দেখতে যাব? আপনি তো সারা জাহানের পালনকর্তা। তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল। তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি আপনাকে কীভাবে খাবার দেবে? আপনি তো সারা জাহানের প্রভু। আল্লাহ বলবেন, তোমার কি জানা ছিল যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল। কিন্তু ‘তাকে তুমি খাবার দাওনি। তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ‘তুমি আমাকে পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আপনাকে বিরূপ পানি পান করাব? আপনি তো সমগ্র জগতের প্রভু। তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি করতে চেয়েছিল। তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পান করাতে তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে।’ (সহিহ মুসলিম)

সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, তাদের জন্য আল্লাহর দয়া সংকুচিত হয়ে আসবে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (জামে তিরমিজি)

পক্ষান্তরে যারা তাদের এই দুঃখের দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করে, তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করা হবে। মহান আল্লাহ তাদের মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জমিনে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া করো, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (জামে তিরমিজি)

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলে মহান আল্লাহ তাদের জান্নাতে রিজিক দিয়ে সম্মানিত করবেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী পানীয় পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)

অন্য এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব সংকট বা বিপদ দূর করবে আল্লাহতায়ালা তার কিয়ামতের কঠিন বিপদ দূর করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম)

আসুন আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। সারা দেশের সামর্থ্যবান মানুষ যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই দুর্যোগকে কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অচিরেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে, এ কথা আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি। বন্যা কবলিত এলাকায় এ দুঃসময়ে সমাজের বিত্তবানদের জন্য মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা একান্ত আবশ্যক। নিজ প্রতিবেশী থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সমাজের সর্বস্তরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইমানের একান্ত দাবি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION