বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সংসার সুখের হয় যেভাবে

মুফতি মুহাম্মদ আবু সালেহ:
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তবে বিয়ে শুধুই সামাজিকতায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। পৃথিবী সৃষ্টির পর প্রথম মানব আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পরই তার স্ত্রী হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এ থেকে বোঝা যায় মানুষের সুস্থতা, স্বাভাবিকতা ও প্রশান্তির জীবন যাপনের জন্য মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বিকল্প নেই।

বিয়ের মাধ্যমে মানুষের জীবন সুশৃঙ্খলভাবে যাপিত হয়। বিয়ের অনেক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব বংশের সংরক্ষণ এবং প্রজনন ধারা অব্যাহত রাখা। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রী হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত।’ (সুরা বাকারা ২২৩) মানুষ যেমনিভাবে শস্য ক্ষেতের মাধ্যমে খাদ্যের ধারা অব্যাহত রাখে, তেমনিভাবে বিবাহের মাধ্যমে বান্দার প্রজনন ধারা অব্যাহত থাকে।

বিয়ের বিধান : স্বাভাবিক অবস্থায় বিয়ে করা সুন্নত। তবে ক্ষেত্রবিশেষ মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের বিধানেও আসে পরিবর্তন। জৈবিক চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির বিয়ে না করার কারণে ব্যভিচারের আশঙ্কা না থাকলেও বিয়ে করা সুন্নত। জৈবিক চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির বিয়ে না করার কারণে ব্যভিচার করার আশঙ্কা থাকলে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তির জৈবিক চাহিদা না থাকলে তার জন্য বিয়ে করা জায়েজ। যেমন পুরুষত্বহীন বা বৃদ্ধ লোকের খেদমত ও মানসিক প্রশান্তির জন্য বিয়ে করা জায়েজ। আর বিয়ে পরবর্তী স্ত্রীর প্রতি জুলুম হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে বিয়ে করা জায়েজ নয়।

পাত্র-পাত্রী নির্বাচন : বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ দাম্পত্য জীবন বেশ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টির নাম। একসঙ্গে দুজন মানুষের অমৃত জীবন যাপনের প্রতিশ্রুতি। আর এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ে করো নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমাদের ভালো লাগে।’ (সুরা নিসা ০৩) শরিয়ত নির্বাচনকে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেয়নি। দিয়েছে কিছু নির্দেশনা। হাদিসের নির্দেশনা মতে বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারি, রূপ-লাবণ্য, বংশ মর্যাদা ও ধন-সম্পদের বিষয় লক্ষণীয়। তবে দ্বীনদারির বিষয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কাছে পাত্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও দ্বীনদারিতে তোমরা সন্তুষ্ট, তাহলে তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো। (জামে তিরমিজি) অথচ বর্তমানে এ বিষয়টিকে অনেকটাই উপেক্ষা করা হয়। পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে দ্বীনদারির চেয়ে অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও রূপ-লাবণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যার ফলে পারিবারিক অশান্তি ও বিচ্ছেদের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা অহরহ ঘটে। অথচ রাসুল (সা.) দ্বীনদারি দেখে বিয়ে-শাদি করে জীবনের সফলতা অর্জন করতে বলেছেন।

স্বামীর গুণাবলি : বিয়ের মাধ্যমে দুজন মানুষের নতুন পথচলা শুরু হয়। আর এ পথ চলায় রাগ-অভিমান ও অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। আর তা নিরসনে স্ত্রীর তুলনায় স্বামীর ভূমিকা থাকতে হয় বেশি। এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে স্বামীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে কিছু দিকনির্দেশনা।

স্ত্রীর প্রতি আন্তরিক হওয়া : একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে স্ত্রীর প্রতি আন্তরিক হওয়া একান্ত কাম্য। অন্যথায় নানা সময়ে কারণে-অকারণে ভুল বোঝাবুঝি ও মনোমালিন্য হয়ে থাকে। স্বামীর জন্য উচিত নিজের পরিবার ও নিকটতম আত্মীয়দের মানসিকতা স্ত্রীকে বুঝতে সাহায্য করা। এ ক্ষেত্রে বিয়ের পরই অন্তত নিজের মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে কিছু সময় দেওয়া। এতে স্ত্রী সবার মানসিকতা বুঝতে পারবে এবং সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারবে। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম উপদেশ গ্রহণ করবে। কারণ নারীকে পুরুষের পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হার অধিক বাঁকা। তুমি তা সোজা করতে গেলে ভেঙে যাবে, আর ছেড়ে দিলে তা বাঁকাই রয়ে যাবে। কাজেই তাদের নম্র উপদেশ দিতে থাকবে। (সহিহ বুখারি ৩৩৩১)

ঘরের কাজে সহযোগী হওয়া : রাসুল (সা.) পুরো উম্মতের চিন্তা মাথায় নিয়েও ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঘরের কাজ করতেন, জুতা সেলাই করতেন, কাপড় সেলাই করতেন। তোমরা যেভাবে কাজ করো, তিনিও সেভাবে ঘরের কাজ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ) অথচ আমরা বাইরে থেকে এসে ঘরের কাজ তো করিই না, বরং অমানবিক ও অনাকাক্সিক্ষত ব্যবহার করি।

স্ত্রীর কাজে আনন্দ প্রকাশ করা : স্ত্রীর অবদানগুলো স্বীকার করা। তাকে আরও উৎসাহ দেওয়া। তার রান্নার প্রশংসা করা। ঘরের কাজের প্রশংসা করা। কখনো অসহনীয় হলে চোখে আঙুল দিয়ে ভুল ধরিয়ে না দিয়ে বুঝিয়ে বলা।

স্ত্রীর গুণাবলি : সতীত্বের হেফাজত করা। একজন আদর্শবান স্ত্রীর প্রথম লক্ষণীয় বিষয় হবে চরিত্রবান হওয়া। অন্যথায় সংসারে অশান্তি ও বিচ্ছেদের মতো ঘৃণিত কাজ হবে। বিয়ের পর পরপুরুষে আসক্ত হওয়া বর্তমান সমাজে এক ভয়ংকর বিপর্যয় ধারণ করেছে। অথচ মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, ‘নেককার স্ত্রীরা অনুগত হয়ে থাকে এবং আল্লাহ যা হেফাজত করতে আদেশ করেছেন, তা লোকচক্ষুর অন্তরালে হেফাজত করে।’ (সুরা নিসা ৩৪)

স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা : মানুষের দিন কখনো সমান যায় না। হয়তো আজ খারাপ, কাল ভালো। অথবা আজ ভালো তো কাল খারাপ। তেমনি আর্থিক অবস্থাও স্থির থাকে না। তাই স্বামীর সর্বাবস্থাতেই খুশি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আর এ গুণ না থাকলে বিত্তশালী লোকের সংসারেও সুখ আসবে না। কারণ মানুষের চাহিদার কোনো শেষ থাকে না। এক জনের ৫ হাজার টাকা দিয়েই খুশিতে ঈদ কাটে। আবার কারও ৫০ হাজার টাকা দিয়েও মন ভরে না। তাই স্বামীর অবস্থানকে মেনে নেওয়াই একজন আদর্শবান স্ত্রীর পরিচয় হবে। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) নারীদের সতর্ক করে বলেন, আমাকে জাহান্নাম দেখানো হলো। আমি সেখানে অধিকাংশই নারী দেখতে পেলাম। (কারণ) তারা কুফরি করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করে? তিনি বললেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হয়। দীর্ঘ সময় তাদের প্রতি ইহসান করার পরও সামান্য কিছুতে অবহেলা দেখা দিলে বলে ফেলবে, আমি তোমার থেকে কখনোই ভালো কিছু পেলাম না। (সহিহ বুখারি ২৯)

স্বামীর হক আদায় করা : স্বামীর ছোট ছোট আবদার এবং ভালো লাগার বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা। ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুতকরণে সহযোগী হওয়া। আবার ঘরে ফেরার সময় তার কাছে এগিয়ে আসা। প্রয়োজনে ঠাণ্ডা পানি বা ক্লান্তি দূর করার উপকরণ প্রস্তুত করা। এভাবে স্বামীর প্রতি সর্বাবস্থায় যত্নশীল হওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি যদি মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করতে নির্দেশ করতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ করতাম স্বামীকে সেজদা দিতে। আল্লাহর কসম! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় করার আগে প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। (ইবনে মাজাহ ১৮৫৩)

দায়িত্বশীল হওয়া : বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে উভয়ের দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। প্রথমত স্বামীকে এ ব্যাপারে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ দুটি পরিবার মিলিত হয়ে চলতে গেলে কিছু সমস্যা ও অপছন্দনীয় কাজ সংঘটিত হাওয়া স্বাভাবিক। তাতে স্বামীর জন্য বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা এবং সমস্যা সমাধানে দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। স্ত্রীর ভরণপোষণ ও সুখময় সংসার হয় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মাঝে মাঝে স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য ভ্রমণ ও খোশগল্প করা। স্ত্রীর নিকটতম আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। এ ব্যাপারে স্ত্রীরও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। স্বামীর প্রতি খেয়াল রাখা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভরণপোষণ তলব না করা। সর্বদা স্বামীর মন জয় করা এবং স্বামীর সম্পদের যথাযথ হেফাজত করা। তার অনুমতি ছাড়া সম্পদে হাত না দেওয়া। কারণ এতে সংসারের বরকত নষ্ট হয়। সন্তান লালন-পালনে সচেষ্ট

থাকা। এক কথায়, একটা সংসার সুখময় ও শান্তিময় করতে স্ত্রীর ভূমিকা থাকে অতুলনীয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION