বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রাণাধিক ভালোবাসা নবীজির জন্য

মাওলানা রফিকুল ইসলাম:
হজরত রাসুল (সা.) ঠিক কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেটা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ হলো, তিনি ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। তার জীবনী লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন ইবনে ইসহাক। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) হস্তিবাহিনীর ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম ১১৫৮) তার জন্মদিন সম্পর্কে আরেকটি মত হলো, তিনি ৯ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। (আর রাহিকুল মাখতুম ১/৪৫) তবে তার ইন্তেকালের তারিখ সম্পর্কে মতপার্থক্য নেই। সবার ঐকমত্যে তিনি ১১ হিজরির রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখেই ইন্তেকাল করেছেন। (আস সিরাহ আন নববিয়্যাহ ৪/৫০৯)

রাসুল (সা.)-কে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসা ইমানের দাবি। অন্যথায় ইমানদার হওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়।’ (সুরা আহজাব/৬) রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছে আমি তার পিতা-মাতার চেয়ে, সন্তানাদির চেয়ে এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হবো।’ (সহিহ বুখারি)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একবার হজরত ওমর (রা.) হজরত রাসুল (সা.)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়, কেবল আমার জীবন ছাড়া। রাসুল (সা.) বললেন, না (এ কথা সত্য নয়), আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ওই সময় পর্যন্ত (সত্য) নয়, যতক্ষণ না কারও কাছে আমি তার জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয় হব। রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে এই কথা ওমর (রা)-এর মনে বিদ্যুতের মতো স্পর্শ করল এবং তার মন ওই সময়ই বদলে গেল। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি আমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয়। রাসুল (সা.) বললেন, ওমর! এখন তোমার ইমান পরিপূর্ণ হলো। (সহিহ বুখারি)

আমরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আমাদের হৃদয়ের একান্ত আশা, যদি সব কিছুর বিনিময়ে হলেও প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে জীবনে একবার স্বপ্নে দেখতে পেতাম! আমাদের জীবন সার্থক হয়ে যেত! আমরা আমাদের মানসপটে প্রিয়নবীর ছবি আঁকি। তার আকার-আকৃতি ও চেহারা মুবারক সম্পর্কে অনেক সাহাবি বর্ণনা করেছেন। সেসব বর্ণনা আমাদের শিহরিত করে। যেন চোখ বন্ধ করলেই প্রিয়নবীর চেহারা আমাদের চোখে ভাসে। হাদিসের বর্ণনা থেকে তার আকার-আকৃতির বিবরণ তুলে ধরা হলো।

হজরত আলি (রা.) যখনই রাসুল (সা.)-এর দেহ মুবারকের বর্ণনা দিতেন, তখন বলতেন, রাসুল (সা.) অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না এবং একেবারে বেঁটেও ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন মধ্যম আকৃতির। তার মাথা মুবারকে চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না; বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল। তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তার চেহারা একেবারে গোল ছিল না; বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রঙ ছিল লাল-সাদা সংমিশ্রিত। চোখের বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা ও চিকন। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। পুরো দেহ ছিল পশমহীন। অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বুক থেকে নাভি পর্যন্ত লম্বা ছিল। দুই হাত এবং দুই পায়ের তালু ছিল গোশতে পরিপূর্ণ।

যখন রাসুল (সা.) হাঁটতেন, তখন পা পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উঁচু জায়গা থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনোদিকে তাকাতেন, তখন ঘাড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে তাকাতেন। তার উভয় কাঁধের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুওয়াত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দানশীল, সবচেয়ে বেশি সত্যভাষী। তিনি ছিলেন সবচেয়ে কোমল স্বভাবের এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত এবং মর্যাদার অধিকারী। যে ব্যক্তি তাকে হঠাৎ দেখত, সে ভয় পেত (গাম্ভীর্যের কারণে)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরিচিত হয়ে তার সঙ্গে মিশত, সে তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলত। নবী (সা.)-এর গুণাবলি বর্ণনাকারীরা এ কথা বলতে বাধ্য হন যে, আমি তার আগে ও পরে তার মতো কাউকে কখনো দেখতে পাইনি। (শামায়েলে তিরমিজি)

হজরত হাসান ইবনে আলি বলেন, আমার মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর অবয়ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি রাসুল (সা.)-এর পুরো দেহের বর্ণনা দেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর কপাল ছিল বেশ উন্নত। ভ্রু ছিল সরু ও ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট। দুই ভ্রু আলাদা ছিল। মাঝখানে একটি রগ ছিল। তিনি যখন রাগান্বিত হতেন, তখন তা ভেসে উঠত। তার নাক খাঁড়া ছিল। ভালোভাবে না দেখলে মনে হতো তিনি প্রকাণ্ড নাক বিশিষ্ট। নাক থেকে এক ধরনের নুর চমকাত। রাসুল (সা.)-এর পেট সম্পর্কে হিন্দ ইবনে আবু হালা বলেন, তার পেট ও বুক সমান ছিল। (শামায়েলে তিরমিজি)

রাসুল (সা.)-এর আকৃতি সম্পর্কে হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, একবার আমি চাঁদনি রাতে রাসুল (সা.)-কে দেখলাম। অতঃপর একবার রাসুল (সা.)-এর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন তিনি লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর মনে হলো। (শামায়েলে তিরমিজি) হজরত কাব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন, তখন তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনে হতো যেন তার মুখমণ্ডল চাঁদের টুকরো। (সহিহ বুখারি) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুল (সা.)-এর সম্মুখের দাঁত দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথাবার্তা বলতেন, তখন মনে হতো উক্ত দাঁত দুটির মধ্য দিয়ে যেন নুর বিচ্ছুরিত হচ্ছে। (দারেমি)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর চেয়ে বেশি সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। মনে হতো যেন সূর্য তার মুখমণ্ডলে ভাসছে। আর রাসুল (সা.) অপেক্ষা চলার মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কাউকে দেখিনি। তার চলার সময় মনে হতো মাটি যেন তার জন্য সংকুচিত হয়ে এসেছে। আমরা তার সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক নিয়মে চলতেন। (তিরমিজি)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION