রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ঘুষ-দুর্নীতি অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী

ইকরামুল ইসলাম:
অর্থ-সম্পদ মানুষের জীবনোপকরণ ব্যবস্থাপনার প্রধানতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনের ভাষায় অর্থ-সম্পদকে মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে তা অর্জন ও অনুসন্ধানে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক সময় অর্থচিন্তা ও সম্পদ উপার্জনের ভাবনায় মানুষ আল্লাহ এবং তার অনুগ্রহের কথা ভুলে যায়। দুনিয়ার মোহে পড়ে শয়তানের পাতানো ফাঁদে পা দেয় এবং তাকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে শাসক কর্র্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিও না।’ (সুরা বাকারা ১৮৮)

সাধারণত মানুষ অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ ও আত্মসাৎ করতে ঘুষ-দুর্নীতি ও অসদুপায়ের আশ্রয় নিয়ে থাকে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন ‘ঘুষ-দুর্নীতি অর্থনীতির আত্মঘাতী।’ এটি অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং অর্থের সুষম বণ্টন ও ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে একটা মহল লাভবান হলেও দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে চরম দুর্ভোগে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের সামনে যে কয়টি বিষয় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে, অর্থনীতি তন্মধ্যে অন্যতম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে একটি বিষয় দেখে দেশের সচেতন নাগরিকরা আঁতকে উঠেছেন। তা হচ্ছে, বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দের খাত। এবারের বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয়ে ২২% বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধ খাতে। অর্থাৎ সাবেক অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য এক লক্ষ তেরো হাজার পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একক খাত হিসেবে নতুন বাজেটে এটিই বৃহত্তম ব্যয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন বৈদেশিক ঋণের মূল ও সুদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। দেশের অর্থনীতি এই অবস্থায় আসার পেছনে তারা কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এক. প্রকল্প দুর্নীতি, অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এক ধরনের মূল্য দিয়ে, শেষ হয় কয়েক গুণ বর্ধিত মূল্যের মাধ্যমে। দুই. অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিং, এ কারণে একদিকে যেমন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে, অন্যদিকে বিভিন্নভাবে দেশের অর্থ অন্য দেশে পাচার হচ্ছে। তিন. বাজেট পুনর্গঠন না করা, অর্থাৎ আমাদের রাজস্ব নীতিমালায় এখনো পাশ্চাত্য নীতি অনুসরণ করে ভ্যাট ও ট্যাক্সভিত্তিক এককেন্দ্রিক বাজেট রচনা করা হচ্ছে। আর এভাবেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে এক মহাবিপর্যয় ও সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সুদ-ঘুষ ও দুর্নীতি, এসব শয়তানের পাতানো ফাঁদ। এ কাজে শয়তান খুশি হলেও মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট ও নারাজ হন। এতে পার্থিব জীবনে সাময়িক সুখ-শান্তি ও আরামের হাতছানি থাকলেও চিরকালীন দুঃখ-কষ্ট ও অভিশপ্তের পথ উন্মোচিত ও প্রসারিত হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত।’ (জামে তিরমিজি ১৩৩৭) অনুরূপ আরেকটি হাদিস হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফায়সালার ক্ষেত্রে ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে অভিশাপ দিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ৯০২৩)

এখন অনেকে সুদ-ঘুষ ও দুর্নীতিকে অন্যায় মনে করে না; বরং আয়ের ‘ভিন্ন এক উৎস’ হিসেবে গ্রহণ করে। এটাকে ‘স্পিড মানি’ হাদিয়া, উপঢৌকন ও উপহার ইত্যাদি নামেও নামকরণ করেছে। হজরত আবু হুমাইদ সাইদি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে লুতবিয়্যা নামের এক ব্যক্তিকে বনু সুলায়ম গোত্রের জাকাত আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ করলেন। সে ফিরে আসলে হিসাব নেওয়া হলো। তখন সে বলল, এগুলো আপনাদের মাল, আর এগুলো (আমাকে দেওয়া) উপঢৌকন। এ সময় ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে তোমার মা-বাবার ঘরে বসে থাকলে না কেন? সেখানেই তোমার কাছে উপঢৌকন এসে যেত। এরপর তিনি আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেন, আমি তোমাদের কাউকে এমন কোনো কাজে নিয়োগ করি, যার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহ আমাকে মনোনীত করেছেন। কিন্তু সে কাজ সম্পাদন করে এসে বলে, এ হলো তোমাদের মাল, আর এ হলো আমাকে দেওয়া হাদিয়া। তাহলে সে কেন তার মা-বাবার ঘরেই বসে রইল না? সেখানে এমনিতেই তার কাছে তার হাদিয়া এসে যেত। আল্লাহর কস! তোমরা যে কেউ অবৈধভাবে কোনো কিছু গ্রহণ করবে, সে কেয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।’ (সহিহ বুখারি ৬৯৭৯)

আবার অনেকে এ অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে আল্লাহর কাছে সওয়াব, অতীত অপরাধের পাপমোচন ও পরকালে মুক্তি পাওয়ার আশাও করে থাকে। এটা এক রকম দ্বীন ও ইমানের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু না। কেননা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা সওয়াব অর্জন ও পাপমোচন হয় না।

বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়ী একটি রাষ্ট্র। এ দেশের মাটির উর্বরতা ও মানুষের মেধার মান অনন্য। দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর এ অবস্থা থেকে সচল ও উন্নীত করতে কৃষি, রেমিট্যান্স ও পোশাকসহ সম্ভাবনাময়ী সব শিল্প খাত, প্রকল্প ও মন্ত্রণালয়কে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে। যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে দেশের শ্রম-মেধা ও যুবশক্তিকে। কাজ করার সুযোগ দিতে হবে সৎ, নিষ্ঠাবান ও যোগ্যদের। প্রকল্প দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজেট পুনর্গঠন-প্রণয়ন ও আধুনিকায়নে বিজ্ঞজনদের সাহায্য নিতে হবে এবং সঙ্গে রাখতে হবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION