বুধবার, ৩০ Jul ২০২৫, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
কোনো ধরনের নিরাপত্তার সমস্যা নেই ৫ আগস্ট : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডাকসু নির্বাচন: নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনপ্রসূত ছাত্রনেতাদের নাম আলোচনায় মহেশখালীতে বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা কক্সবাজারের র‌্যাবের অভিযান: দেশি-বিদেশি অস্ত্র গ্রেনেড মাইন সহ রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী শফি ডাকাত গ্রেফতার পর্যটকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে সমুদ্রসৈকতে ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা চকরিয়ায় বৃদ্ধ গরু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা জুলাই মাসের ২৭ দিনে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এলো ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে: নাহিদ ইসলাম নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ বিএনপি নেতা ছৈয়দ নুর স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

কেয়ামতে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার হবে

মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ:
জীবন আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান নেয়ামত। এটা এমন এক সম্পদ, কোনো কিছুর সঙ্গে যার তুলনা হয় না। যখন কেউ অন্যায়ভাবে একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, তখন শুধু একজনের জীবন শেষ হয় না, বরং হারায় মানবতার সম্মান, ভেঙে পড়ে সমাজের স্থিতিশীলতা। ইসলাম মানুষের জীবনের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ এবং নবী করিম (সা.) স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, অন্যায়ভাবে কারও জীবন নেওয়া ভয়াবহ পাপ, যা শিরকের পরে সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হত্যার বিচার হবে। এই কাজ শুধু ব্যক্তির ক্ষতি করে না, পুরো সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে ভয়ংকরভাবে বিপন্ন করে।

বর্তমানে আমরা যখন নানা দিক থেকে হিংসা, সংঘাত ও হত্যাকাণ্ড দেখতে পাই, তখন আমাদের অবশ্যই ইসলামের এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে শান্তি ও মানবতার জন্য কাজ করতে হবে। কারণ মানুষের জীবন রক্ষা করাই ইসলামের মূল শিক্ষা এবং তা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।

রক্তের সম্মান : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুমিনের রক্ত, সম্মান ও সম্পদ অপর মুমিনের জন্য হারাম।’ (সহিহ মুসলিম ২৫৬৪) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের জন্য এতটাই পবিত্র, যতটা পবিত্র এই দিন, এই মাস এবং এই শহর।’ (সহিহ মুসলিম ১৬৭৯) এমনকি বাইতুল্লাহর চেয়েও অধিক সম্মান একজন মুমিনের জীবনের। হজরত ইবনে ওমর (রা.) কাবাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘তুমি কত মর্যাদাবান! তবে একজন মুমিনের সম্মান আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও বেশি।’ (তিরমিজি ২০৩২)

পুরো মানবজাতি হত্যার শামিল : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা ৩২)

মানুষের মৃত্যুর প্রভাব শুধু নিহত ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া, মা-বাবার জীবনে এক গভীর শোক, স্ত্রী ও সন্তানের জন্য এক জীবনের বেদনা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য এক বড় শূন্যতা তৈরি করে। হত্যাকারী হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় না। বরং এর মাধ্যমে সে নিজের এক অভিশপ্ত জীবন শুরু করে, যে জীবনে ইহকালীন কোনো শান্তি নেই, আর পরকালীন কোনো মুক্তি নেই।

সাবার আগে হত্যার বিচার : হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়টির বিচার হবে, তা হলো রক্তপাত তথা মানুষ হত্যার।’ (সহিহ বুখারি ৬৫৩৩) এমনকি নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর মাথার চুল ধরে টেনে নিয়ে আসবে আল্লাহর দরবারে। কণ্ঠনালিতে তখনো রক্ত ঝরবে। সে বলবে, ‘হে আল্লাহ! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে।’ (তিরমিজি ৩০২৯)

হত্যার পরিণতি : হত্যাকারীর জন্য জাহান্নাম ও আল্লাহর গজব অবধারিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার প্রতিদান জাহান্নাম, যেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হবেন, তাকে লানত দেবেন এবং আল্লাহ তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা নিসা ৯৩) এক হাদিসে এসেছে, ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সবাই মিলে একজন মুমিনকে হত্যা করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (তিরমিজি ১৩৯৮)

হাত্যাকারীর শাস্তি দুনিয়াতেই শুরু : হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুমিন দ্বীনের প্রশান্তি ভোগ করে, যতক্ষণ না সে কোনো রক্তপাত ঘটায়।’ (সহিহ বুখারি ৬৮৬২) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে অবৈধভাবে রক্তপাত করে, সে এমন এক বিপদের মুখে পড়ে, যার থেকে মুক্তির পথ নেই।’ (সহিহ বুখারি ৬৮৬৩)

হত্যাকারীর আমল বিফল হয়ে যাবে : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কেয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে বা কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এই ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ওই ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে মানুষরা তার সমস্ত আমল নিয়ে যাবে এবং তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তার পাওনাদার রয়ে যাবে। অতঃপর পাওনাদারদের গুনাহসমূহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। আর পাহাড়সম গুনাহ নিয়ে সে লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

আমাদের করণীয় : জুলুম প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের বুঝতে হবে বিদ্বেষ, হিংসা, জুলুম ও রক্তপাত কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়। একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলতে হলে শুধু নিজেদেরই অন্যায় থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়, বরং অন্যদের বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ, এই দুটিই ইমানের দাবি।

যখন কেউ কারী ওপর জুলুম করে বা কাউকে হত্যা করে, তখন একজন প্রকৃত মুসলমানের দায়িত্ব হলো, জুলুমের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, নিহতের পরিবারকে সহানুভূতি ও ন্যায়ের সহায়তা দেওয়া এবং হত্যাকারীর পক্ষে নীরব বা পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়া।

মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ আমাদের শান্তি, ইনসাফ ও ভ্রাতৃত্বের পথে চলার শিক্ষা দেয়। আমাদের সমাজ তখনই কল্যাণের মুখ দেখবে যখন আমরা সবাই মিলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব এবং মহান আল্লাহর সামনে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ হেদায়াত দান করুন এবং আমাদের সমাজকে নিরাপদ ও কল্যাণময় করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION