শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস প্রতিবেদক:
কক্সবাজার জেলা হচ্ছে মাদক ও মানবপাচারের দূর্গ বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। বিশেষ করে মানবপাচার একটি জটিল, সংঘবদ্ধ ও আন্তসীমান্ত অপরাধ। একারণে এই অপরাধ প্রতিরোধে কেবল আইনগত পদক্ষেপ নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়, দারিদ্র বিমোচন ও পুনর্বাসনের টেকসই কাঠামো দরকার।
আজ বিকাল সাড়ে ৫টারদিকে কক্সবাজারের একটি তারকামানের হোটেলে বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব মন্তব্য করা হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সীমা জহুরের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জজ মুন্সী আবদুল মজিদ। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা জজ মো: রবিউল আলম, যুগ্ন জেলা জজ মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: শাহিদুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: জসিম উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক নাফিজ ইমতিয়াজ হাসান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন্নেছা লিপি, ‘আইওএম’র নিরাপত্তা সমন্বয়ক সাদিয়া আলিন ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রকল্প কর্মকর্তা নাজমুল করিম ও এডভোকেট প্রতীভা দাশ সহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেয়া তথ্য বলছে- ২০১৮ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ১,৪৫৪ জন পাচার ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের শিকার ব্যক্তি সনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০২ জন পুরুষ, ৫৫ জন কিশোর, ৭৮৯ জন নারী ও ১০৮ জন কিশোরী। সনাক্ত ৪১০ জন বিদেশে পাচার হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৫৩০ জনকে জীবিকা সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে ১৮০ জন পুরুষ এবং ৩৫০ জন নারী উপকারভোগী অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
কক্সবাজারে মানবপাচার আইনে ৪৬০টি মামলা চলমান রয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে ২৫১টি, ২০২০ সালে ১৫টি, ২০২১ সালে ১২টি, ২০২২ সালে ১৬টি, ২০২৩ সালে ১৯টি, ২০২৪ সালে ১৮টি ও চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ১০টি মামলা আদালতে রুজু হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৬টি। এসব মামলাগুলোতে স্বাক্ষীর দুর্বলতাকে দায়ে করা হয়।
অনুষ্ঠানে পাচারের কয়েকটি কৌশল চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্য বেশিরভাগ নারীরা মধ্যপ্রাচ্যে ভালো চাকরির আশায় পাচারের শিকার হন। তবে বাস্তবে তাদের বেশিরভাগই গৃহকর্মে নিয়োজিত হয়ে নির্যাতনের শিকার হন এবং উপযুক্ত বেতন বা সুযোগ-সুবিধা পান না। অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে অনেকেই অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচার হন বা বৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যান কিন্তু ভুয়া কাজের প্রতিশ্রুতি ও চাকরির চুক্তিবিহীনভাবে, যা প্রকৃত অর্থে মানব পাচার হিসেবে বিবেচিত।
ভয়েস/আআ