শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা প্রদান করায় এখন পর্যন্ত দুইটি মামলার হয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দুই মামলায় আসামী প্রায় সাড়ে ৬শ জন।
উচ্ছেদের তৃতীয় দিন উচ্ছেদ আতংকে থাকা লোকজনের প্রতিবন্ধকতায় কার্যক্রম পণ্ড হলেও এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪ শত জনকে আসামী করে মামলা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের কক্সবাজার নৌ বন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াকিল বাদি হয়ে বুধবার রাতেই কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান ওসি মো. ইলিয়াস খান।
ওসি বলেন, সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ধারায় মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা করছে।
এর আগে মঙ্গলবার কস্তুরাঘাট এলাকায় স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের পর হামলার ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।
এদিকে বিক্ষোভের মুখে তৃতীয় দিন স্থগিত থাকলেও চতুর্থ দিনে এসে বেশ কিছু স্থাপনা গুড়িয়ে দিতে দেখা গেছে।
তবে আগের দিনের মতো পেশকার পাড়ায় বিক্ষোভ করতে থাকে স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে আর অভিযান চালাতে যায়নি প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কস্তুরাঘাটের পশ্চিমে বদরমোকাম অংশে উচ্ছেদের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
উচ্ছেদের অংশে পড়েছে স্থানীয় আদনান সাউদের বাড়িও। তার পরিবার সেখানের আদি বাসিন্দা দাবী করে বলেন, আমরা এই এলাকার জমিদার। আমার চৌদ্দ পুরুষ এই এলাকার বাসিন্দা। একদম প্রাচীন আমল থেকে আমরা এখানে বসবাস করছি। এখানে অভিযান হোক তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে এই অভিযানটি সবার জন্য সমান হতে হবে, সুষ্ঠু হতে হবে। আমার জানামতে হাইকোর্টের রায়ে এই জায়গাগুলো উচ্ছেদের জন্য তালিকাভুক্ত নয়। কিন্তু তারা বলছে এই জায়গাগুলোও তাদের তালিকাভুক্ত। তবে কোনরকম কাগজপত্র তারা দেখাতে পারছে না। এখানে যাদের জায়গা আছে তারা যাবতীয় সব কাগজপত্র দেখা যে চাইলেও তারা এসবের তো অপেক্ষা করছেন না।
পেশকার পাড়ার বিক্ষোভে স্থানীয় নুরুল আমিন বলেন, আমি মনে করি যদি রাষ্ট্র আমাকে খতিয়ান দিয়ে থাকে তাহলে সরকার আমার জায়গা কিভাবে ভাঙবে। আগে তো খতিয়ান বিলুপ্ত করতে হবে তারপর তারা ভাঙতে পারবেন। গত দুইদিন ধরে যে বাঁকখালীতে উচ্ছেদ অভিযান করা হচ্ছে এখানে অধিকাংশ মানুষের কাগজ আছে। তারা এখন পথে পথে হয়ে গেছে। তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত।
শাহাদাত হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, শত শত মানুষের কাছে যেসব কাগজপত্রগুলো আছে এগুলোতো অবৈধ না। এগুলো রাষ্ট্রই দিয়েছে। যদি জায়গাটি অবৈধ হয় তাহলে রাষ্ট্র কাগজ দিল কেন। আগে কাগজ বাতিল করুন তারপর উচ্ছেদ করুন।
“আপনারা একটি সুনির্দিষ্ট সমীক্ষা করুন। কতটুকু জায়গা নদীর মধ্যে পড়ছে এটি পর্যবেক্ষণ করে মানুষকে সঠিক তথ্য দিন।”
তবে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন এর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই। বাঁকখালী নদীর দখলদারদের প্রতি আমাদের স্পষ্ট বার্তা, এখানে কোন দখলদার থাকবে না। দেরিতে হলেও সকলকে উচ্ছেদ করা হবে। কারণ কোন দখলদার সরকারের উর্ধ্বে নয়। অবৈধ দখল করে বসবাস করার কিংবা বসতি গড়ে তোলার কোন সুযোগ নেই।
সরকার থেকে নদী দখলকারীরা কখনোই বড় হতে পারে না উল্লেখ করে আরিফ উদ্দিন বলেন, এই উচ্ছেদে আমাদের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। আমরা শুধুমাত্র বাঁকখালী নদীকে তার অস্তিত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই লড়ছি। এর ফলে কক্সবাজারবাসীই উপকৃত হবে।
উচ্ছেদ অভিযানকে ব্যাহত করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর এই কর্মকর্তা বলেন, এখানে আমাদের উদ্দেশ্য করে অনেকে ইট পাটকেল ছুঁড়েছে, একজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। এগুলোকে আমরা নেতিবাচকভাবে দেখছি না। কারণ যেকোনো উচ্ছেদ অভিযানে এগুলো চলেই। এসব উচ্ছেদ অভিযানের কেমিস্ট্রি। এসব আমলে নিলে তো আমরা সামনের দিকে আগাতে পারবো না।
“আমাদের শুধু একটাই লক্ষ্য বাঁকখালী নদীকে তার জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া, তার অস্তিত্ব বুঝিয়ে দেওয়া।”
বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় দিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে এসে উচ্ছেদ কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শনিবার পর্যন্ত চলবে অভিযান।
অভিযানের চতুর্থ দিন পর্যন্ত ৪ শতাধিক ছোট-বড়, কাঁচা-পাকা সহ নানা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অন্তত ৫৮ একর বেশী জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক।
ভয়েস/জেইউ।