পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটন শিল্পের মন্দা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কক্সবাজারের হোটেল- মোটেল, রিসোর্ট মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবছর ঈদুল আজহার ছুটিতে বেশিরভাগ হোটেলে অগ্রীম বুকিং হলেও এবারে কক্সবাজারে অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ে সাড়া নেই। বরং এবছর উল্টো চিত্র। এতে করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হোটেল মোটেল মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অবশ্য, ঈদুল আযহার পরে কিছুটা হলেও পর্যটক আসার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
প্রতি বছর ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহাসহ বিভিন্ন ছুটিতে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে হোটেল-মোটেলে অগ্রিম বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে। অনেক সময় অগ্রিম বুকিংয়েও মিলে না হোটেল কক্ষ। কিন্তু, এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সেই চিত্র একেবারে উল্টো। অর্থাৎ এবার অগ্রিম হোটেলে-মোটেল বুকিংয়ের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ২০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়নি।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন-সম্প্রতি সংঘটিত বন্যা, পদ্মা সেতু খুলে দেয়া, দ্রব্যমূল্যেও উর্ধ্বগতি ও আসন্ন এসএসসি পরিক্ষার কারণে কক্সবাজারে হোটেল বুকিং হ্রাস পেয়েছে। পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটিতে এখনও অগ্রিম হোটেল বুকিং ২০ শতাংশের নিচে। স্মরণকালে এমন বিপর্যয়ের চিত্র দেখেনি কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাই, এ বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে নিতে হবে।
এদিকে, হোটেল ব্যবসার এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে জরুরী বৈঠকও করেছে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি। গত বৃহস্পতিবার এই জরুরী বেঠক করেন সমিতির নেতারা। বৈঠকে সম্প্রতি সংঘটিত বন্যা এবং পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় পর্যটকদের কুয়াকাটা যাওয়ার ইচ্ছাকে কক্সবাজারে হোটেল বুকিং হ্রাসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এই দুই কারণে এতটা বিপর্যয় হতে পারে না বলে মনে করা হচ্ছে। আরো গভীরতর কারণ অনুসন্ধানে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবে নেতারা।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়ক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৌখিম খান বলেন, বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে কক্সাবাজারের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। এমনকি কটেজগুলোতেও বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো: আবুল কাসেম সিকদার বলেন, কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের অগ্রিম বুকিং বিপর্যয় কাটিয়ে ঈদের পরবর্তী সময় গুলোতে লাভের আশার প্রত্যাশা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
হোটেল ‘আইল্যান্ডিয়া’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূরুল কবির পাশা জানিয়েছেন, তাদের হোটেলে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বুকিং শূন্য। একই কথা জানিয়েছেন ‘গ্র্যান্ড সেন্ডি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুর রহমান।
অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ের বিপর্যয়ের বিষয়টি এখন কক্সবাজারের পর্যটন অঙ্গনে বেশ আলোচনায়। শুধু হোটেল মালিক নয়; এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলে।
পর্যটন জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াব’র সভাপতি তোফায়ের আহমদ বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ^জুড়ে নীরব অর্থনৈতিক সংকট চলছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যদিনের আরো কিছুর সংকটে মানুষের মানসিক অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। একারণে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে মানুষ তেমন বেড়াতে বের হবে না। এটাই কক্সবাজারের হোটেল বুকিং অত্যদিক কম হওয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় যারা বেড়াতে ইচ্ছুক তারা কম দূরত্বের কুয়ারকাটার দিকে যেতে পারে।’
পর্যটক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্রিম হোটেল বুকিং না হওয়া মানে ধরে নেয়া এবারে ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারের স্মরণকালের রেকর্ড কম পর্যটক আসতে পারে। আবার আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে হোটেল বুকিং ছাড়াই আকস্মিক ছুটে আসতে পারে পর্যটকেরা- এমন প্রত্যাশাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পর্যটন ব্যবসায়ীরা।