শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সৈকতে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ

?????????????????????????????????????????????????????????

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

ঠিক মধ্য দুপুরে সৈকতে পৌঁছে যান রাশেদ দম্পতি। পানিতে নামার আগে একটু দূরেই স্যান্ডেল-জোড়া রেখে পানিতে নেমে যেই না কয়েক পা হাঁটলেন, হঠাৎ তার পায়ে বিঁধলো কিছু একটা। মুহূর্তে রক্তে ভিজে গেলো পা। বালুর মধ্যে বাঁকা হয়ে পড়েছিল ক্যাপসুলের খোসা। অসতর্ক হয়ে পা পড়ায় এই দুর্ভোগ। দুই দিনের ছুটিতে কক্সবাজার গিয়ে আর একবারের জন্যও সৈকতে যাওয়া হলো না এই নবদম্পতির।

কেবল ক্যাপসুলের খোসা না, চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের ঠোঙা, গোসলের জন্য আনা কাপড় রাখার পলিথিনের ছেঁড়া ব্যাগ, ছেঁড়া স্যান্ডেল—কী নেই এই সৈকতে। ফলে শুধু যে অপরিচ্ছন্ন তা-ই নয়, পুরো সৈকত বিপজ্জনকও বটে। চারপাশে অসংখ্য ময়লার স্তূপ। কক্সবাজার প্রশাসন বলছে, এখন পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো। প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী পুরো এলাকা পরিষ্কারের দায়িত্বে নিয়োজিত। যদিও সারা দিন নানা সময়ে সৈকত পরিদর্শনে গিয়ে ময়লা এলোমেলো অবস্থায় ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর সৈকত থেকে কিছুটা দূরে মাসের পর মাস জমা হচ্ছে ডাবের খোসা, পলিথিনের বর্জ্য। পরিবেশবাদীরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে নেওয়া উদ্যোগগুলো কাজে আসছে না। এই বিষয়টি প্রশাসন যতদিন স্বীকার না করবেন, ততদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবেন না।

সম্প্রতি কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী জাতীয় স্যানিটেশন মাসের একটি দিনে লাবনী পয়েন্ট থেকে শুরু করে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত সমুদ্রসৈকত ও ঝাউ বাগানের অভ্যন্তরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৫০ বস্তা বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্র সৈকত থেকে অপসারণ করা হয়। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা অব দ্য রেকর্ডে স্বীকার করেছেন সৈকতের এই অপরিচ্ছন্নতার কথা। কোনোভাবেই পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যাচ্ছে না, সেই কথাও উল্লেখ করেন। তারা বলছেন, বিভিন্ন পয়েন্টে ডাস্টবিন ছিল। সেগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছিল বিধায় লোহার রড দিয়ে তিনটি করে বিন কিছু দূর পরপর স্থাপন করা হয় এবং সেগুলো পর্যাপ্ত। ৩৫ থেকে ৪০ জন কর্মী আছেন, সেগুলো সুনির্দিষ্ট সময় পরপর পরিচ্ছন্ন করার জন্য। সেটা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টি আমরা তদারকি করি। সৈকতে বিচ-চেয়ারের পেছনে একটি করে ময়লার ডিব্বা রাখা আছে। আশপাশে কেউ ময়লা ফেললে এই ডিব্বায় ফেলার দায়িত্ব এসব চেয়ারের মালিকের। সেটিও খুব ভালো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।

কেন এত ধরনের উদ্যোগের পরেও পরিচ্ছন্ন একটি সৈকত পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না প্রশ্নে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। লাখ লাখ মানুষ আসে, নোংরা করে। আমরা পরিষ্কার করি। নানারকম প্রচারণারও ব্যবস্থা আছে। এই মানুষগুলোই বিদেশে গিয়ে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে না, নোংরা করে না। নিজের দেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না কেন, প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য দেশে লোক কম, একজন

আরেকজনের চোখের মধ্যেই থাকে। ফলে পরিচ্ছন্ন জায়গা ময়লা করতে পারে না। ১০ জন ভালো মানুষের মধ্যে একজন খারাপ মানুষ নিজেকে সুধরে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ১০ জন খারাপ লোকের মাঝে একজন ভালো লোক খারাপ হয়ে যায়। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে অবস্থা এখন ভালো। সুগন্ধা পয়েন্টে একমাস ধরে বিশাল পলিথিনের স্তূপের প্রতি নজরদারি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে গত মাসে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেসবের বর্জ্যও থেকে থাকতে পারে। তবে আমরা নজরদারিতে রাখবো।’

এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের কি কোনও দায়িত্ব নেই? এমন প্রশ্নে কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘কাজটি আমাদের না। জেলা প্রশাসনের অধীন বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি এটি তদারকি করে। আর ময়লা ব্যবস্থাপনা স্থানীয় প্রশাসন মানে পৌরসভা দেখে। পরিবেশের দূষণ ঘটছে, সেখানে অধিদফতরের হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা পরামর্শ দিই। মূলত ইকোলজিক্যাল রিসোর্সের ক্ষেত্রে অবৈধ কিছু ঘটলে আমরা উদ্যোগী হই। যেহেতু টুরিস্ট স্পট, তাই বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি দেখে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে অভ্যাস হওয়া দরকার, তা গড়ে ওঠেনি। বিচে অনেক ব্যবস্থা আছে সেটা মানছে না। আগামীতে আমরা কিছু ডিসপ্লে বোর্ড লাগিয়ে সচেতনতা বার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।’

প্রশাসনকে পরিস্থিতি স্বীকার করে নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামাল বলেন, ‘পর্যটকরা যেন সৈকত নষ্ট না করে, সে নিয়ে কেবল সচেতনতা কার্যক্রম চালালে হবে না। একইসঙ্গে নির্দেশনা না মানলে কী হবে, সেই বিধান থাকতে হবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়, মানুষের জীবন ধ্বংসকারী পলিথিন বন্ধ না হওয়ায় যে অর্থনৈতিক মানবিক বিপর্যয় হয়, সেটা থামাতে সরকারকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। পুরো সৈকত এলাকায় খাবার নিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। বড় বিপর্যয় এড়াতে সবাই মিলে একটা পথ বের করতে হবে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION