শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

স্বাগতম গোনাহ মাফের মৌসুম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
আরবি শাবান মাসের শেষ শুক্রবার আজ। আগামী শুক্রবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে যাবে। এখন চলছে রোজার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রমজানের প্রস্তুতির অন্যতম একটি হলো- রমজানকে স্বাগত জানানো। এর অংশ হিসেবে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ -সহিহ মুসলিম

রমজান মাস দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের উৎসবের মাস হিসেবে পালিত হয়। এখন থেকেই দুনিয়াজুড়ে এই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস উপলক্ষে গোনাহ মাফের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আধুনিক যুগের সুবিধার কারণে ইতিমধ্যেই অনলাইনে রোজার ক্যালেন্ডার প্রচারিত হচ্ছে। ইফতার, সাহরির সময় উল্লেখ করে মোবাইল ফোনে, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আদান-প্রদান শুরু হয়ে গেছে। খুবই ভালো উদ্যোগ। যেহেতু এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত বলা হয়েছে যে, যারা গোটা মাস আন্তরিকতার সঙ্গে, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে রোজাপালন করবে, তাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। মাস শেষে ধরে নিতে হবে- যেন মায়ের পেট থেকে নিষ্পাপ শিশুর জন্মের সময়ের মতো সে নিষ্পাপ হয়ে গেছে।

মহান আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো মাফ করে দিতে চান। শুধু আমাদের চাওয়ার অপেক্ষা। মহান আল্লাহর কাছে চাইলে আর শিরকমুক্ত থাকলে আমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।

এই রমজান মাসে একটি রাত আছে, যার মূল্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সেটি হলো শবেকদরের রাত। এ মাসের শেষ দশ দিনের যেকোনো বিজোড় রাতে এই শবেকদর খুঁজতে বলা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে রমজানের ২৭ তারিখ রাতকে শবেকদরের রাত বলা হয়। কিন্তু আসল ঘটনা শেষ দশ দিনের প্রত্যেক বিজোড় রাতে শবেকদর খুঁজতে হবে। যেহেতু এক রাতের মূল্য হাজার মাসের চাইতে উত্তম, তার জন্য তো একটু মেহনত করাটাই যুক্তিসংগত।

রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয়। তাই সাহরির একটু আগে উঠে উত্তমরূপে অজু করে অতি মূল্যবান তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে ৮ রাকাত বা তার চেয়ে বেশি পড়া যায়। এর পর আপনমনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়।

মহান আল্লাহ রাতের শেষভাগে সপ্তম আকাশ থেকে নিম্ন আকাশে নেমে আসেন তার বান্দাদের কথা শোনার জন্য। তিনি আহ্বান করতে থাকেন তার বান্দাদের তোমরা কী চাও? সব দিয়ে দেব। গোনাহ মাফ চাও, ছেলে সন্তান চাও, রিজিক চাও, ভালো বিবাহ করতে চাও সব দিয়ে দেব। শুধু কায়মনে শিরকমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।

আল্লাহর নবী (সা.) আমাদের পুরুষদেরই শুধু এ সুযোগের কথা বলেননি। স্বামীদের বলা হয়েছে, তোমরা শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য ওঠো, তোমাদের স্ত্রীদেরও ওঠাও। এমনকি তারা গড়িমসি করতে চাইলে, তাদের মুখে পানি ছিটিয়ে তাদের তাহাজ্জুদের এই অপূর্ব নিয়ামত পাওয়ার সহযোগিতা করো।

রমজান মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতে হবে। কারণ এ মাসে অন্য মাসের চেয়ে সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহতায়ালা বাড়িয়ে দেন। সুন্নতের দাম ফরজের সমান করে দেন, আবার ফরজের দাম ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেন।

রমজান মাসে খেয়াল রাখতে হবে, রোজাদাররা যেন দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে পারেন। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়ে, স্ত্রীদেরও নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। অফিস-আদালতে, চলার পথে, বাস, নদীপথে; এমনকি উড়োজাহাজেও উদ্যোগ নিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ে নিতে হবে। আগেই বলেছি, মহান আল্লাহ যেহেতু সব কাজের মূল্য বাড়িয়ে দেবেন, তাই আমাদেরও এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। রমজান মাসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে ইফতার করা, ছোটদের স্নেহ করা, বড়দের শ্রদ্ধা করা থেকে শুরু করে সব ভালো কথা ও কাজ বেশি বেশি করতে হবে।

রোজার মাসে অনেকে জাকাত দিয়ে থাকেন বেশি সওয়াবের আশায়। ভালো উদ্যোগ। জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ধনীদের অর্থের শতকরা আড়াই ভাগ সমাজের গরিব-মিসকিনসহ ৮ খাতে খরচ করা ফরজ। যেহেতু আল্লাহ রমজান মাসে সওয়াবের পরিমাণ বেহিসাবি ভাবে বাড়িয়ে দেন, তাই ধনীরা কিংবা যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তারা হিসাব করে জাকাত দিয়ে দেবেন। এটা গরিবের হক। সঠিক পথে জাকাত আদায় ও ব্যয়ের সুযোগ পাওয়ায় দাতা-গ্রহীতা উপকৃত হয়। জাকাতের কাপড় দেওয়া বা ধনী ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে লাইন ধরে জাকাত বিতরণের ব্যবস্থা মোটেও ভালো কাজ ও যুক্তিযুক্ত নয়। এ ব্যবস্থা পরিহার করা দরকার।

রমজান মাসে সমাজের পরিবেশ আল্লাহমুখী করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খোলা জায়গায় পানাহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে লোকচক্ষুর আড়ালে অসুস্থ ব্যক্তি, অমুসলিম কিংবা বেরোজদারদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে।

রমজান মাসে ঘরে-বাইরে লোকদের নারী-পুরুষ সবাইকে রোজা পালন সহজ করার লক্ষ্যে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। এতে কাজ কম হবে বলে মনে হয় না, বরং আল্লাহতায়ালা বরকত বাড়িয়ে দেবেন।

বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোয় রোজার সময় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনশীল রাখা ব্যবসায়ী ও সরকারের দায়িত্ব। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে রোজার সময় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের কতিপয় ব্যবসায়ী রোজার জন্য জিনিসপত্রের মজুদ করেন দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে। এটা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান, রোজাদারদের সুবিধার্থে কম লাভে জিনিসপত্র বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এতে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়া যাবে। রোজাপালন সহজ হবে স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য। আর এটা হতে পারে আমাদের জন্য গোনাহ মাফের অসিলা। মনে রাখতে হবে, এই মাসে গোনাহ মাফের অনেক উপলক্ষ রয়েছে। সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে গোনাহ থেকে মুক্ত না হতে পারাটা গোনাহগার বান্দার জন্য লজ্জাকর ও ক্ষতির কারণ। আল্লাহতায়ালা সবাইকে রমজানের বরকত অর্জন এবং রহমত লাভে ধন্য করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION