প্রকল্প পরিচালক আবুল আজাদ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, দু’টি চ্যানেলে খালাস হয়েছে ৬১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন পণ্য। যার ফলে বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাশ্রয় হয়েছে ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ইউএস ডলার। ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৩.২০ শতাংশ। বন্দর ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬৫.৯৬ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, গেল বছরের ২৮ ডিসেম্বর ১৭ জন ভারতীয় শ্রমিক ছুটি শেষে কাজে যোগ দেন। ২৯ ডিসেম্বর তাদের করোনা টেস্ট করা হয়। ফলাফলে ১৭ জনসহ তাঁদের সংস্পর্শে থাকা ৮০ জনের মধ্যে ৬৯ জনের শরীরে পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর হটস্পটে পরিণত হয় প্রকল্প এলাকা।
আক্রান্তের হার দ্রæত বাড়ায় শ্রমিকদের সুরক্ষায় নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণকাজ স্বাভাবিক রাখাসহ সংক্রমণের কারণ অনুসন্ধানে গঠন হয় তদন্ত কমিটি। সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যের দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর গেল সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহফুজুল হক কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘অনেক শ্রমিক পজেটিভ হওয়ার দু’দিনের মাথায় তথ্য গোপন রেখে পুনরায় ফলোআপ স্যাম্পল দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে একজন রোগী তিনবার পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ রকম ৩০ জনের নাম পাওয়া গেছে। যার ফলে ৩০ জনের স্থলে ৬৫ জন হয়ে যায়। আক্রান্তরা সকলে ডেল্ট ভ্যারিয়েন্টের। ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’
ডা. মাহফুজুল হক বলেন, ‘১৭ জন ভারতীয় কাজে যোগ দেয়ার পর তাদের সংস্পর্শে যারা গেছেন তারাই সংক্রমিত হয়েছেন। জমা দেয়া প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে’। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘শ্রমিকদের সুরক্ষায় ১৪ দিনের আইসোলেশন বাধ্যতামূলক। কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা গেছেন তাদের র্যাপিট টেস্ট অ্যান্টিজেন্ট করা। ১৪ দিন পর স্যাম্পল দেয়ার সময় অবশ্যই ল্যাব কর্তৃপক্ষকে সেটি ফলোআপ স্যাম্পল সে বিষয়ে অবহিত করা।’
সুপারিশগুলো মেনে চলতে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে জানানো হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহফুজুল হক জানান।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে, চলতি মাসের ১ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১৭৭ জন বিদেশীসহ ২৩০ জন শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৫ জন ভারতীয়, জাপানের ৪ জন, মালয়েশিয়ার ৫জন, ফিলিপাইনের ১ জন, ইন্দোনেশিয়ার ৪ জন, থাইল্যান্ডের ১ জন এবং বাকীরা বাংলাদেশি।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘আক্রান্তরা সকলেই ভারতীয় সাব-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জুলুং ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের শ্রমিক। তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। নির্মাণকাজে এখনো ব্যাঘাত ঘটেনি। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করতে পারব।’
আবুল কালাম আজাদ কক্সবাজার ভয়েসকে আরও জানান, ‘সরকারের এই মেগা প্রকল্পে জাপানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুমিতোমোর তত্ত¡াবধানে ১৭টি সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৫শ বিদেশী ও ৯ হাজার দেশীয় শ্রমিক কাজ করেন। যার মধ্যে মাতারবাড়ির রয়েছে ২ হাজার ৫শ জন। তাদের সুরক্ষায় চারজন ডাক্তারের সমন্বয়ে মেডিকেল টিম রয়েছে।’
বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আলফাজ উদ্দিন কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘প্রকল্পের কাজে যোগ দিতে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। বিদেশীরা পজেটিভ এলে পুরো প্রতিষ্ঠানের সকলেই টেস্টের আওতায় আসছেন। দৈনিক ৫-৬শ লোক দৈনিক যাতায়াত করতো, এখন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া ‘মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। মোট ব্যয় দাঁড়াল প্রায় ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পটিতে আগে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) দেওয়ার কথা ছিল ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এবার সেই ঋণ বাড়িয়ে জাইকা মোট দিচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আর প্রকল্পটিতে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।