শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পিত্তথলিতে পাথর: রোগ নির্ণয় চিকিৎসা

পিত্ততলীতে পাথর,ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় সলিড অঙ্গের নাম লিভার, যেটি বুকের পাঁজরের ডান দিকে পেটের উপরিভাগে অবস্থান করে। লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, এই লিভার প্রতিদিন প্রায় ৫০০ রকমের কাজ সম্পন্ন করে। এর মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হলো প্রতিদিন প্রায় এক লিটারের মতো পিত্তরস (হজমি রস) তৈরি করা, যেটি আমাদের গৃহীত খাবারের পরিপাকে সহযোগিতা করে। লিভারের একেবারেই নিচে যুক্ত থাকে নাশপাতি আকৃতির একটি থলে, যেটিকে বলা হয় ‘পিত্তথলি’। লিভারে যে পিত্ত তৈরি হয় সেটি এসে এই পিত্তথলিতে জমা হয়। মানুষ যখন খাবার খায়, বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার খেলে ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ‘কোলেসিস্টোরাইলিন’ নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়ে পিত্তথলিতে পৌঁছে পিত্তরস নিঃসরণে উদ্দীপিত করে। তখন পিত্তথলি সংকুচিত হয়ে জমানো রস বের করে দেয়। পরে এই রস পিত্তনালি হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে, ক্ষুদ্রান্ত্রে জমানো খাবার পরিপাকে সহযোগিতা করে। পিত্তথলিতে পাথর জমা হওয়াকে ‘পিত্ত পাথরি বা পিত্ত পাথর’ বলে। ৩০-এর উপরে বয়স এমন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জনের পিত্তথলিতে পাথর থাকে

এই ১৫ জনের মধ্য থেকে দু’-তিন জনের পিত্তথলিতে পাথর থাকার কারণে উপসর্গ দেখা যায়। পিত্তথলিতে পাথর থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ থাকে না।
উপসর্গসমূহ
সাধারণত চর্বিযুক্ত বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর পেটের উপরিভাগের ডান দিকে অথবা পেটের শুধু উপরিভাগে ব্যথা অনুভূত হয়। কখনো কখনো এই ব্যথা ডান কাঁধের দিকে বা পেছনের দিকে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা সাধারণত ১৫ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় ব্যথার পাশাপাশি বমি বা বমি বমি ভাব, খাবার হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

যেসব জটিলতা হয়

– পিত্তথলির ইনফেকশন (পেটের উপরিভাগের ডানদিকে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি, জ্বর এবং কোনো কোনো সময় হাসপাতালে ভর্তিরও প্রয়োজন দেখা দেয়)।
– এ অবস্থায় চিকিৎসা না নিলে পিত্তথলিতে পুঁজ জমতে পারে। পিত্তথলি পচে যেতে পারে, এমনকি পিত্তথলি ছিদ্র হয়ে যেতে পারে।

– পিত্তথলির পাথর পিত্তনালিতে নেমে এসে বাধাজনিত জন্ডিসের উদ্ভব ঘটাতে পারে।
– পিত্তথলির পাথর পিত্তনালি হয়ে অগ্ন্যাশয়ের মধ্যদিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যেতে পারে।
– অগ্ন্যাশয়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রমের সময় অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে একিউট প্যানাক্রিয়াটাইটিস তৈরি করতে পারে, যেটি অনেক সময় রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। সাধারণত পিত্তথলিতে থাকা ক্ষুদ্র আকারের পাথরগুলো এই ভয়ঙ্কর রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

– এক জরিপে দেখা গেছে, পিত্তথলিতে থাকা পাথরের আকার ৪ সেন্টিমিটারের বেশি হলে পিত্তথলির ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যেসব কারণে পাথর হতে পারে:পিত্তথলিতে থাকা পিত্তরসে পানির পরিমাণ ৯০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কঠিন পদার্থ। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পিত্ত লবণ, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ। পিত্তে পাথর হওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং অনেকগুলো উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। পিত্তে পাথর হওয়ার প্রক্রিয়াটি বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তবে সর্বস্বীকৃত প্রতিক্রিয়াগুলো হলো-

– পিত্তরসের মধ্যে কোনো কারণে পিত্ত লবণের মাত্রা কমে গেলে।
– পিত্তরসের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে।
– পিত্তথলি পূর্ণমাত্রায় সংকুচিত হতে ব্যর্থ হলে।

সাধারণত উপরোক্ত তারতম্যগুলো ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টিন নামক দুটি হরমোনের আধিক্যের কারণে হয়ে থাকে এবং এই হরমোনগুলো মহিলাদের শরীরে থাকে বিধায় প্রতি একজন পুরুষের বিপরীতে তিনজন মহিলার ক্ষেত্রে এই রোগটি হয়ে থাকে।

ঝুঁকি কাদের বেশি
– মহিলা
– ৪০ বা তদূর্ধ্ব বয়সীরা
– স্থূল ব্যক্তিরা
– ডায়াবেটিস আছে যাদের
– কায়িক পরিশ্রম কম করেন যারা
– পরিবারের মধ্যে অন্য কারও থাকলে
– লিভারের রোগ হিমোলাইটিক ডিজিজের রোগী, যেমন থ্যালাসেমিয়া ও সিকেলসেল ডিজিজ।

প্রতিকার
– কায়িক পরিশ্রম করা
– ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
– ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
– প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
– চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা।
– শনাক্তকরণের উপায়
– পেটের আলট্রাসনোগ্রাম
– প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে, যেমন-এমআরসিপি।

চিকিৎসা
যাদের উপসর্গ আছে, তাদের অবশ্যই সার্জারি করিয়ে নিতে হবে। বর্তমানে সাধারণত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে (অর্থাৎ পেট না কেটে) শুধু পেট ছিদ্র করে মেশিনের সাহায্যে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়ে থাকে। যাদের উপসর্গ নেই, তাদের সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

লেখক:ডা. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, কনসালট্যান্ট, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগ, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

ভয়েস/জেইউ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION