শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

হালাল উপার্জনে ব্যবসা

শাহাদাত হোসাইন:
সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। কমবেশি সব যুগেই সম্পদের প্রয়োজনীয়তা ছিল। হাল-জামানায় সম্পদের প্রয়োজনীয়তা একটু বেশি। কারণ, সম্পদের আধিক্য যেমন ব্যক্তির বিপথগামী হওয়ার মাধ্যম, তেমনি চলার মতো সম্পদ ছাড়া ইমান নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই, ইমানের ওপর অবিচলতার জন্য হলেও সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, বর্তমান সময়ে সম্পদ মুমিনের হাতিয়ার। অন্যত্র তিনি বলেছেন, অতীতকালে সম্পদকে অপছন্দ করা হতো। কিন্তু বর্তমান যুগে তা মুমিনের ঢাল। আর ব্যবসা সম্পদ উপার্জনের হালাল মাধ্যম।

ব্যবসার মাধ্যমে অল্প সম্পদে স্থায়িত্ব আসে : সম্পদের সঠিক ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিকল্পিত খাতে সম্পদের ব্যবহার সম্পদের স্থায়িত্ব ও বৃদ্ধিকরণে সাহায্য করে আর অপরিকল্পিত ব্যবহার সম্পদের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করে। তাই অল্প সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে, তা অবশিষ্ট থাকে, লাভের মাধ্যমে বহু অংশে বৃদ্ধি পায়। আবার পরিচর্যাহীন অধিক সম্পদ অল্পদিনেই শেষ হয়। যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয় তাহলে অধিক হওয়া সত্ত্বেও তা ধ্বংস হয়। হজরত আবু আবদুল্লাহ (রহ.) বলেছেন, অল্প-সম্পদ সঠিক ব্যবহারে বাকি থাকে। আর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে অধিক সম্পদও নষ্ট হয়। তাই, সম্পদকে ব্যবসায় খাটানো উচিত।

ব্যবসার কারণে জান্নাত : মানুষ ব্যবসা নিজের লাভের জন্য করে থাকে। কিন্তু এই ব্যবসা যদি কেউ ইসলামি বিধি মোতাবেক সততার সঙ্গে পরিচালনা করে। কাউকে ধোঁকা না দেয়। মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আশ্বাস না দেয়। তাহলে এমন ব্যবসা দুনিয়ার পাশাপাশি কেয়ামতেও ব্যবসায়ীর উপকারে আসবে। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সত্যবাদী ব্যবসায়ী জান্নাতের কোনো দরজায় বাধাপ্রাপ্ত হবে না। -কানজুল উম্মাল : ৯২১৯

নবীদের সঙ্গে জান্নাতে থাকার সৌভাগ্য : আমরা দুনিয়াতে বাসাবাড়ি করার ক্ষেত্রে উত্তম ও ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিবেশী খুঁজি। ভালো ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে উদগ্রীব থাকি। এটাকে নিজের জন্য গর্বের বিষয় মনে করি। জান্নাতের প্রথম শ্রেণির নাগরিক হবে নবীরা। আর নবী-রাসুলদের প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে সে সব ব্যবসায়ী যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে। যারা ব্যবসা করবে মানুষের উপকারের নিয়তে। বিশ্বাস ও আমানতদারীর সঙ্গে। মানুষের আস্থা বজায় রেখে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে প্রথম শ্রেণির জান্নাতিদের সঙ্গে থাকবে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সত্যবাদী আমানতদার মুসলিম ব্যবসায়ী জান্নাতে নবী-সিদ্দিক (সত্যবাদী) এবং শহীদদের সঙ্গে থাকবে। -জামে তিরমিজি : ১২০৯

ব্যবসায় দারিদ্র্যের অভিশাপ মুক্তি : ব্যবসা ব্যক্তিকে মুখাপেক্ষিতার অভিশাপমুক্ত করে। দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি দেয়। আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাবলম্বিতা দান করে। ব্যক্তিকে আত্মনির্ভর করে। তাই, আমাদের ব্যবসায় জড়ানো উচিত। জগৎ বিখ্যাত অনেক বড় বড় আলেম ব্যবসা করেছেন। এমনি একজন হলেন- সারি ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.)। তিনি সমুদ্রযোগে ব্যবসা করতেন। এক ব্যক্তি আশ্চর্য হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, দুনিয়া উপার্জনের জন্য আপনি সমুদ্রযাত্রা করবেন? তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আমি তোমার মতো মানুষের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষিতাকে অপছন্দ করি।

ফজল ইবনে যিয়াদ (রহ.) বলেন, আমি হজরত আবু আবদুল্লাহ (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বাজারে যাওয়ার (ব্যবসার) আদেশ করছেন এবং বলছেন, মানুষের থেকে অমুখাপেক্ষিতা কতই না উত্তম।

হালাল রিজিক অন্বেষণ ইবাদত : ফরজ ইবাদতের পর ব্যক্তির জন্য অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো, হালাল রিজিক অন্বেষণ করা। হালাল রিজিক উপার্জন করা। যেমনটা সুরা জুমুয়ায় এসেছে, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে, জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) অন্বেষণ করো।’ আর হালাল রিজিকের বরকতময় মাধ্যম ব্যবসা। হজরত মোজাহিদ (রহ.)-সহ অন্যান্য মুফাসসিরিনদের মতে আয়াতে অনুগ্রহের অর্থ হলো- রিজিক। আমরা নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক। এই দোয়ায় আমরা বলি, হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ-রিজিক চাচ্ছি। -সহিহ মুসলিম : ৭১৩

নব্বই শতাংশ রিজিক ব্যবসায় : ব্যবসা হালাল রিজিকের প্রশস্ত অঙ্গন। ব্যবসায় আল্লাহতায়ালা ধারণাতীত বরকত রেখেছেন। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, রিজিকের দশ ভাগের ৯ ভাগই রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। -কানজুল উম্মাল : ৯৩৪২

মহামানবদের ব্যবসায় সম্পৃক্ততা : পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও আল্লাহর প্রিয় বন্ধু নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। বারো বছর বয়সে চাচার সঙ্গে প্রথম ব্যবসায়িক সফরে শামিল হন। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কুরাইশদের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। খলিফা মনোনীত হওয়ার পরেও ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় কাজের চাপ বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) ব্যবসায়ী ছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-সহ ইসলামের প্রায় সব মহামানব ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদেরও উচিত হালাল রিজিকের জন্য এবং পরনির্ভরতা কাটাতে, সম্মানজনক রিজিকের তালাশে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION