মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অভিযানেও থামছে না মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য

এম এ সাত্তার:

সদর উপজেলাতে অবাধে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। দেদারসে কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে। মাটি পরিবহনের সময় মাটিবোঝাই ভারী ডাম্পার গাড়ির চাপে এলাকার গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ভাঙ্গা সড়কের কারণে বাড়ছে দূর্ঘটনা, ধুলা-বালি আর মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সমস্যা। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান, মাটি কাটার যন্ত্র জব্দ ও জড়িতদের আটক করে জেল জরিমানা করার পরও থামছে না মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য। দিন-রাত কাটছে ফসলি জমির মাটি। এই মাটি বিক্রির সাথে জড়িত স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটে জড়িত রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

জানা গেছে, ফসলি জমির মাটি বেচাকেনার কাজে ডাম্পার মালিক ও ব্যবসায়ী কর্তৃক একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা বছরের বিভিন্ন সময় (অফ-সিজন) কম দামে একর/কানি চুক্তিতে কৃষকের জমির মাটি কিনে রাখেন। শুষ্কমৌসুমে জমি থেকে মাটি কেটে তা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করেন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ফসলি জমিতে মাটিখেকো চক্রের থাবা। পিএমখালী ইউনিয়নের পাতলী, গোলারপাড়াতে দেখা গেছে সেখানকার কৃষিজমি থেকে এস্কেভেটরের মাধ্যমে দিনের আলোতেই কেটে নিয়ে যাচ্ছে টপ-সয়েল। এই মাটির বেশিভাগ বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায় বলে জানান স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা বলেছেন, বারবার প্রশাসনের কাছে অবৈধ ডাম্পার ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও সুফল মিলছে না। জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ায় কমছে জমির উর্বরতা। এতে দিন দিন কমেছে চাষাবাদ।

সচেতন মহলের শঙ্কা, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে এক সময় না খেয়ে মরতে হবে।

পিএমখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ বলেন, মাটির ব্যবসায় সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেট। এতে জড়িতরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আঁতাত করে অবাধে কেটে নিচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি। ফলে কমে যাচ্ছে চাষাবাদ। বেশির ভাগ মাটি কিনছেন ইটভাটার মালিক কিংবা বিত্তবান ব্যক্তিরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে একসময় মাটিও আমদানি নির্ভর হতে হবে আমাদের।

ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁদের পাড়া এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, টাকার লোভে অনেকে মাটি বিক্রিতে ঝুঁকছেন।এক/দেড় ফুট গভীর গর্ত করে মাটি বিক্রি হচ্ছে। ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে পাশের জমির মাটিও। তাই বাধ্য হয়ে মালিকেরা ওই সব জমির মাটিও বিক্রি করে দিচ্ছেন।

পিএমখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন, প্রকাশ্য কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু বললে হুমকি দেয়। মাটিখেকোরা কৃষি জমিকে পুকুর-খালে পরিণত করছে। গ্রামীন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাটি ভর্তি গাড়ি চালানোর কারণে গ্রামীণ রাস্তাগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলেছে। ধুলাবালিতে বাড়ি ঘরেও থাকা যাচ্ছে না। এদের গর্হিত কাজে অতিষ্ট এলাকার মানুষ। তাই বাধ্য হয়ে পরিষদে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। চেয়ারম্যান মহোদয় সদয় বিবেচনা করে মাটি কাটার সাথে জড়িত ৫জনকে চিহ্নিত করে সদর ইউএনও মহোদয়কে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা দাবি জানান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে।

এস্কেভেটর দিয়ে জমির মাটিকাটার সাথে জড়িত থাকার কথা শিকার করেন অভিযুক্ত আব্দুল খালেক। মাটি বিক্রি করতে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, সে কিছু জানে না। তবে অন্য তারা জড়িত খরুলিয়া এলাকার সইদু ও ছোটন নামের ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত জানতে পারবে বলে জানান আবদুল খালেক।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে ‘জিরো টলারেন্সে’র নীতিতে হাঁটছেন তারা। এর মধ্যে গত কয়েকদিন আগে পিএমখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা কৃষি জমির মাটি কাটার অভিযোগে চারটি ডাম্পার আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দকৃত ডাম্পার ও মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে থানায় হস্তান্তর করা হয়।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বলেন, কৃষিজমির মাটি রক্ষায় প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। এতে প্রায়ই অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করা হয়।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION